সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বব্যাপী কফি উৎপাদন ও সরবরাহ অস্থিতিশীলতার শিকার হয়েছে। উৎপাদন এলাকা সংকুচিত হচ্ছে, চরম আবহাওয়াজনিত প্রভাব বাড়ছে, আর একই সময়ে ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমীকরণে মিশে গিয়েছে উচ্চ মূল্য এবং বাজারে তীব্র দৌড়ঝাঁপ — যার ফলশ্রুতিতে শুরুর দিকের সংকট থেকে শেষ পর্যন্ত নেগেটিভ ফিডব্যাক লুপ তৈরি হয়েছে, যা কফি রফতানিকারী দেশগুলোকেও আমদানিকারীতে পরিণত করতে পারে ।
বিশ্ব কফি বাজারের আকার ও প্রবৃদ্ধি
- মোট বাজার মূল্য: ২০২৫ সালে বিশ্ব কফি বাজারের মূল্য আনুমানিক ১৩৮.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে, যা ২০২৫–৩০ সময়কালে ৪.৭২% বছরের গড় বৃদ্ধিতে ১৭৪.২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে ।
- আউট-অব-হোম সেগমেন্ট: ক্যাফে, রেস্তোরাঁ ও অন্যান্যে ২০২৫ সালে বাজার মূল্য আনুমানিক ৪০.৭১ বিলিয়ন ডলার হবে, ২০২৫–৩০ সময়সীমায় ৩.৭% বৃদ্ধির প্রবণতা দেখাবে ।
- ফাংশনাল (স্বাস্থ্য সংযোজনকৃত) কফি: একই বছর এই শাখার বাজার মূল্য প্রায় ৪.৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ১১.৮৪% CAGR-এ ২০৩০ সালে ৭.৮৭ বিলিয়ন ডলারে যাবে।
উৎপাদন ও ভোক্তা প্রবণতা
- উৎপাদন কেন্দ্র: ব্রাজিল, ভিয়েতনাম ও কলম্বিয়ার পরে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক।
- ভোক্তা বাজার: উত্তর আমেরিকার কফি বাজার ২০২৫ সালে আনুমানিক ২৯.১০ বিলিয়ন ডলারে পর্যবসিত হবে, যা ২০২৫–৩০ সময়কালে ৩.৬৯% CAGR-এ বাড়বে ।
- বৃদ্ধির হটস্পট: এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল ২০২৫–৩০ সময়কালে দ্রুততম ৪.২% CAGR-এ সম্প্রসারিত হবে, যেখানে নতুন বাজার হিসেবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চাহিদা চোখে পড়া।
মূল্যের ধরণ ও সাম্প্রতিক পরিবর্তন
- ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জ (ICE) আরাবিকা ফিউচার্স: ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ এক পর্যায়ে $৪.৩০/পাউন্ড স্পর্শ করেছিল, যা ১৩ তম দিন অতিক্রম করে রেকর্ড সৃষ্ঠি করে।
- রোবাস্তা ফিউচার্স: ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় এল নিনোর কারণে রোবাস্তার দাম টন প্রতি $৫,৫৮০-এ উঠেছে, গত বছরের তুলনায় ৭৫.৬% বৃদ্ধি পেয়েছে।
- দামের ঊর্ধ্বমুখী চাপ: কয়েকটি বড় রিটেইলার ও রোস্টার অপরিবর্তিত রেট নিতে অস্বীকার করলেও, শেষমেশ ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত ব্যয় চাপাতে বাধ্য হচ্ছে
ভবিষ্যৎ মূল্য পূর্বাভাস
- রয়টার্স পোল: আরবিকা ফিউচার্স ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৩০% কমে $২.৯৫/পাউন্ডে নেমে আসতে পারে, মূলত উচ্চ দাম ও সম্ভাব্য বড় ব্রাজিলিয়ান ফসলের কারণে।
- দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা: অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, অব্যাহত জলবায়ু ঝুঁকি, উচ্চ খরচ এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা বজায় থাকলে বাজারে উঁচুনিচু অব্যাহত থাকবে।
প্রধান চ্যালেঞ্জ
- জলবায়ু পরিবর্তন: দীর্ঘমেয়াদি শুষ্ককাল ও অতিভারি বর্ষণে উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে
- অপেক্ষাকৃত উচ্চ অপারেটিং খরচ: সার ও বীজের দাম বাড়ার ফলে ক্ষুদ্র কৃষকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- প্রধান মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা: অতিরিক্ত মধ্যমণি ব্যবস্থা কৃষকের আয় কমিয়ে, কাজের আকর্ষণীয়তা হ্রাস করছে
প্রভাব ও করণীয়
- হেজিং ও বাজার রক্ষণশীলতা: অনেক ব্যবসায়ী এখন চুক্তি করে সাত দিনের মধ্যে পণ্যের গুণগত পরীক্ষা শেষ করতে চান, যাতে ঝুঁকি কমে
- সরকারি ও আর্থিক সহায়তা: অধিকাংশ উৎপাদনকারী দেশে গবেষণা, সারের প্রণোদনা ও সহজ ঋণ পুঞ্জিবদ্ধ করা জরুরি, নাহলে আমদানির উপর নির্ভরতা বাড়বে।
- দীর্ঘমেয়াদি টেকসই কৌশল: নতুন প্রজাতির উন্নত বীজ, জলবায়ু-সহিষ্ণু প্রযুক্তি ও কৃষক প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
উপসংহার
বর্তমান বাজারকে সঙ্কটমুক্ত অবস্থায় ফিরতে হলে সরবরাহ সাপ্লাই চেইন মজবুত করা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও আবহাওয়া-সহিষ্ণু পদ্ধতি গ্রহণ অত্যাবশ্যক। এতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা—সবাইই লাভবান হবে এবং বিশ্ব কফি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে সাহায্য করবে।