সারাক্ষণ রিপোর্ট
প্রধান সারসংক্ষেপ
পাকিস্তান সরকার ২০২১-২৬ অক্টো শিল্প উন্নয়ন ও রপ্তানি নীতি (এআইডিইপি) অনুযায়ী দেশীয়ভাবে সংযোজিত গাড়ি বিদেশে পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করছে। হোন্ডা, টয়োটা ও সুজুকি—দেশের ‘বিগ থ্রি’ জাপানি কার নির্মাতা—ইতিমধ্যে রপ্তানি পরিকল্পনা শুরু করেছে, যদিও বিশেষজ্ঞরা নীতিটির লক্ষ্যকে বাস্তবসম্মত মনে করছেন না।
প্রথম রপ্তানি: হোন্ডার ৪০টি গাড়ি জাপানে
- এপ্রিলের শুরুতে হোন্ডা অ্যাটলাস পাকিস্তান থেকে জাপানে ৪০টি স্থানীয় সংযোজিত সিটি সেডান পাঠিয়ে প্রথমবার রপ্তানির সূচনা করে।
•হোন্ডা মোটরের ৫১ শতাংশ মালিকানায় থাকা এই যৌথ উদ্যোগ এআইডিইপি-এর শূন্য শতাংশ থেকে ২০২৬-এর মধ্যে আমদানি-মূল্যের ১০ শতাংশ সমপরিমাণ রপ্তানির দাবিমাত্রা পূরণে প্রথম পদক্ষেপ নিল।
নীতির প্রণোদনা ও সীমাবদ্ধতা
- রপ্তানিকারকদের জন্য কাস্টমস শুল্ক ছাড়,বিশেষ অর্থায়ন সুবিধা ও পুনঃরপ্তানির উদ্দেশ্যে আনা ‘ভিনটেজ’ গাড়ির ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে।
• তবে আমদানি করা কাঁচামালের শুল্ক ফেরতের কোনও ব্যবস্থা নেই, উচ্চ বিদ্যুৎ-গ্যাসমূল্য ও ব্যয়বহুল লজিস্টিকসও খরচ বাড়াচ্ছে।
জাপানি ‘বিগ থ্রি’-র পরিকল্পনা
- পাক সুজুকি ২০২৪-এ বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে গাড়ির যন্ত্রাংশ পাঠায়।
•ইন্ডাস মোটর (টয়োটা-র অংশীদার) জানায়, ডান-হ্যান্ড ড্রাইভ বাজার ও প্যাসিফিক-ক্যারিবীয় অঞ্চলের অনাবিষ্কৃত দেশে রপ্তানির সুযোগ খুঁজছে।
বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ
- ফাউন্ডেশন সিকিউরিটিজ-এর বিশ্লেষক জায়েদ মোহিউদ্দিন মনে করেন,জাপানে রপ্তানি আর্থিকভাবে লাভজনক হবে না—কারণ অনেক যন্ত্রাংশই জাপান থেকে আমদানি-নির্ভর।
• টপলাইন সিকিউরিটিজ-এর মাইশা সোহাইল বলছেন, জাপানের কঠোর মানদণ্ড ও পাকিস্তানের উৎপাদন-ব্যয় এই প্রচেষ্টা কঠিন করে তুলবে।
ডব্লিউটিও-র আশঙ্কা
- পাকিস্তান-স্থিত গাড়ি নির্মাতাদের ওপর রপ্তানি বাধ্যবাধকতাকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম-বিরোধী মনে করে ২০২৪-এ জাপান সরকার সতর্কবার্তা দিয়েছে।
বাজার চিত্র ও অর্থনৈতিক অবদান
- ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাকিস্তানে প্রতি হাজারে মাত্র ৬টি গাড়ি ছিল;শিল্পের জিডিপি-অবদান ২.৮ শতাংশ।
• ২০২৩-এ গাড়ি-যন্ত্রাংশ আমদানি ছিল ১.২৩ বিলিয়ন ডলার, রপ্তানি মাত্র ৭৭ মিলিয়ন ডলার; এর মধ্যে চীন থেকে ২৬৫ মিলিয়ন, জাপান থেকে ২২০ মিলিয়ন ডলার আমদানি।
১০ শতাংশ রপ্তানি লক্ষ্য—কতটা সম্ভব?
- বিশ্লেষকদের মতে,২০২৬-এর মধ্যে ১০ শতাংশ রপ্তানি অর্জন ‘অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী’; স্থানীয়করণ কম, স্কেল ছোট, এবং বিশ্ববাজার দারুণ প্রতিযোগিতামূলক।
• সরকারি-বেসরকারি সহায়তা, সাপ্লাই চেইন সংস্কার ও উৎপাদন-ধারণক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে।
শিল্পের অভিযোগ ও ভবিষ্যৎ পথে
ইন্ডাস মোটরের সিইও আলী আসগর জামালির ভাষায়, রপ্তানি প্রণোদনা ও শুল্ক ফেরতের ব্যবস্থা না থাকায় নির্মাতারা ‘দরজা খুলে দিলেও বাইরে বেরোতে পারছে না’। উচ্চ উৎপাদন-খরচ ও সীমিত স্থানীয় বিক্রয়সংখ্যা তাদের লাভের সীমা টেনে ধরেছে।
উপসংহার
এআইডিইপি পাকিস্তানের গাড়ি শিল্পকে বৈশ্বিক মানচিত্রে তুলতে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের জন্য নীতি-সহায়ক অবকাঠামো, উৎপাদন খরচ-নিয়ন্ত্রণ ও মানদণ্ড-মেনে চলার সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় ১০ শতাংশ রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে।