সারাক্ষণ রিপোর্ট
চুক্তির স্বাক্ষর ও পটভূমি
মাসব্যাপী তীব্র আলোচনা ও শেষ মুহূর্তের দীর্ঘ বৈঠকের পর, বুধবার ওয়াশিংটনে ইউক্রেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক কৌশলগত খনিজ চুক্তিতে সই করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনায় গৃহীত এই চুক্তি আমেরিকাকে ইউক্রেনের খনিজ উত্তোলনে অগ্রাধিকার দেয় এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ তহবিলে অর্থায়ন নিশ্চিত করে।
পুনর্গঠন তহবিল ও অগ্রাধিকার
চুক্তির আওতায় দুই দেশ মিলিত হয়ে একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি “স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেন” গড়ার ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক। তহবিলে সরাসরি অর্থায়নের পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের সম্ভাবনাও রাখা হয়েছে, যদিও ওয়াশিংটন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দাতা ভূমিকা
রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সর্ববৃহৎ সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে; প্রদত্ত অনুদান ৬৪ বিলিয়ন ইউরো (৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছাড়িয়ে গেছে। সইয়ের আগে ট্রাম্প আবার জোর দিয়ে জানালেন, কিয়েভকে দেওয়া সহায়তার বিনিময়ে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, এজন্য বিরল খনিজের ভিত্তিতে চুক্তি রক্ষা অত্যাবশ্যক।
উত্তোলন ক্ষমতা ও সম্পদের মালিকানা
চুক্তি অনুযায়ী, খনিজ উত্তোলনের স্থান ও পরিমাণ সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেনকে প্রাধান্য দেবে এবং ভূ-গর্ভস্থ সম্পদও তাদের মালিকানাধীন থাকবে। দেশে বিরল মাটি ধাতু, লৌহ, ইউরেনিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুদ রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে বিরল ধাতু উত্তোলন প্রধানত চীনের অধীনে, যা আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাতের উৎস।
ঋণশর্ত ও আইনগত সামঞ্জস্য
দীর্ঘ আলোচনার পর নিশ্চিত করা হয়েছে—এই চুক্তি ইউক্রেনের ওপর কোনো ঋণ শোধের বাধ্যকতা আরোপ করবে না। পাশাপাশি, এটিকে দেশটির সংবিধান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শান্তি প্রস্তাবনা ও ভবিষ্যত সহযোগিতা
যদিও খনিজ চুক্তি এবং মার্কিন শান্তি প্রস্তাবনা আলাদা আলোচনায় চূড়ান্ত হয়েছে, উভয়কেই ওয়াশিংটনে ইউক্রেন-রাশিয়া নীতির পরিবর্তন বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার দিকে নরম মনোভাব দেখিয়েছে এবং মাঝে মাঝে জেলেনস্কির সমালোচনা করেছে। মার্কিন প্রস্তাবে ক্রিমিয়াসহ চারটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল স্বীকৃতির উল্লেখ থাকায় কিয়েভ আপত্তি তুলেছে। সুভিরিডেঙ্কো মন্তব্য করেন, “এই চুক্তি বিশ্বজুড়ে অংশীদারদের দেখাচ্ছে, ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী ও নির্ভরযোগ্য সহযোগিতা সম্ভব।” প্রাথমিক খসড়ায় অতীত সামরিক সহায়তা প্রত্যাহারের শর্ত রাখা হলেও কোনো স্পষ্ট মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টি নেই। ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন করে দেশটির সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছে।