সারাক্ষণ রিপোর্ট
মার্ভেল স্টুডিও থেকে প্রকাশিত একটি দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে—সেবাস্টিয়ান স্ট্যান, হান্না জন-কামেন, ফ্লোরেন্স পিউঘ, ওয়ায়াট রাসেল ও ডেভিড হারবার—সবাই রয়েছেন ‘থান্ডারবোল্টস’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে।
পরিচিত মার্ভেল-ভুবনে নতুন ধাঁচের সংঘর্ষ
মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। তবে ‘থান্ডারবোল্টস’-এ এই সংঘর্ষ ভিন্নতর—এখানে কোনো গ্রহান্তরের লড়াই নয়, বরং একটি পৃথিবীভিত্তিক গল্প।
চলচ্চিত্রটি যেন এক অপ্রত্যাশিত মেলবন্ধন—একদিকে হলিউডের সুপারহিরো সাম্রাজ্য মার্ভেল, অন্যদিকে স্বাধীন চিন্তার চলচ্চিত্রপ্রতিষ্ঠান A24। যদিও এটি যৌথ প্রযোজনা নয়, তবে পরিচালক ও কলাকুশলীদের মধ্যে অনেকেই A24-এর সঙ্গে যুক্ত।
সৃষ্টিশীল দলের পরিচয়
পরিচালক জেক শ্রায়ার, যিনি A24-এর ‘বিফ’ সিরিজের বহু পর্ব নির্মাণ করেছেন। এই সিরিজের শোরানার লি সাং জিন ‘থান্ডারবোল্টস’-এর অন্যতম চিত্রনাট্যকার, সঙ্গে আছেন জোয়ানা ক্যালো ও এরিক পিয়ারসন।
চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ড্রোজ পালেরমো (‘আ গোস্ট স্টোরি’, ‘দ্য গ্রিন নাইট’), সম্পাদক হ্যারি ইউন (‘মিনারি’), এবং ব্যান্ড সন লাক্স যাঁরা সঙ্গীত করেছেন (‘এভরিথিং এভরিহোয়ার অল অ্যাট ওয়ান্স’)—সবাই A24 প্রভাব বহন করেন।
মার্ভেলের ফিরে আসা
কিছুটা A24-এর শৈল্পিক সুনাম ধার করার প্রচেষ্টাও ছিল ট্রেলারগুলোতে। সাম্প্রতিক ব্যর্থতার পর মার্ভেল যেন ‘Swiss Army Man’-এর প্রযোজকদের থেকে একটু ধার নিচ্ছে।
কিন্তু ‘থান্ডারবোল্টস’ আদতে কতটা আলাদা?
সত্যি বলতে, এটি ‘ইন্ডি’ চলচ্চিত্র না হলেও সাম্প্রতিক সময়ের সেরা মার্ভেল ফিল্মগুলোর একটি। গল্পটি গড়ে উঠেছে একদল MCU প্রত্যাখ্যাত চরিত্রকে ঘিরে, যাদের CIA পরিচালক ভ্যালেনটিনা আলেগ্রা দে ফঁতাইন (জুলিয়া লুইস-ড্রাইফাস) মুছে ফেলতে চায় তাদের অতীত কর্মসূচিসহ।
নতুন ধরনের সুপারহিরো দল
চরিত্রগুলো যেন ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি’ বা ‘দ্য সুইসাইড স্কোয়াড’-এর বিদ্রুপপূর্ণ গাম্ভীর্যের ধারাবাহিকতা বহন করছে। তবে শ্রায়ারের পরিচালনায় সিনেমাটি তুলনামূলকভাবে মেদহীন ও সুনিয়ন্ত্রিত।
ফ্লোরেন্স পিউঘ তার অভিনয়গুণে সিনেমাটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
গভীর আবেগ ও আত্মপর্যালোচনার গল্প
শুরুর দৃশ্যেই ইয়েলেনা বেলোভা (পিউঘ), একজন সাবেক সোভিয়েত ব্ল্যাক উইডো গুপ্তঘাতক, দাঁড়িয়ে থাকেন একটি সুউচ্চ ভবনের উপর। তিনি বলেন, “আমার ভেতরে কিছু একটা খারাপ আছে। একধরনের শূন্যতা।” এরপর তিনি ঝাঁপ দেন, প্যারাসুট খোলে। তার কণ্ঠস্বর বলে, “বা হয়তো আমি কেবল বিরক্ত।”
এই উদ্বোধনী দৃশ্য যেন পুরো চলচ্চিত্রের প্রতিচ্ছবি—দুঃখবোধ, অপরাধবোধ, মানসিক বিষণ্ণতা।
ছায়া, মৃত্যু ও যন্ত্রণার আবহ
যখন ইয়েলেনা তার ‘শেষ’ মিশনে যান, তখন তিনি সেখানে আরও কিছু চরিত্রের মুখোমুখি হন—অপমানিত জন ওয়াকার (ওয়ায়াট রাসেল), ফাইট-কপি করতে সক্ষম টাস্কমাস্টার (ওলগা কুরিলেঙ্কো), এবং এক রহস্যময় ব্যক্তি ‘বব’ (লুইস পুলম্যান), যার কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই, কিন্তু তার সংস্পর্শে গেলেই অন্যরা তাদের অতীতের গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যায়।
পরবর্তীতে দলের সঙ্গে যুক্ত হন বাকি বার্নস (সেবাস্টিয়ান স্ট্যান)। এই দলের কেউই প্রচলিত জাতীয়তাবাদী আবেগে গড়া নয়—তারা প্রত্যেকেই সন্দেহ, হতাশা ও আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগে।
এক মনস্তাত্ত্বিক ফিনালে
চলচ্চিত্রের শেষাংশ বড় কোনো শহর রক্ষার লড়াই নয়, বরং একটি মানসিক অবস্থার মধ্যেই সেট করা। এতে বোঝা যায়, ‘থান্ডারবোল্টস’ সিনেমাটি আবেগ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে চায় কমিক বইয়ের স্টাইলেই।
একটি নতুন প্রস্তাবনা
যখন দে ফঁতাইন বলে ওঠেন, “অ্যাভেঞ্জাররা আর আসছে না,” তখন যেন এই সিনেমার নিজস্ব পথ খোঁজার ঘোষণাই দেওয়া হয়।
অবশ্য, নতুন অ্যাভেঞ্জারস সিনেমা আসছে বলেই জানা গেছে—তাই বক্তব্যটি পুরোপুরি বাস্তব না হলেও, ‘থান্ডারবোল্টস’ স্পষ্টতই নিজস্বতা নিয়ে হাজির হয়েছে।
আপনি কি চান আমি এ চলচ্চিত্রের কাস্ট তালিকা বা ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্যও যোগ করি?