শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাহার পর দেওয়ানীর সময় হইতেও তাঁহার নিকট রাজস্বসন্বন্ধে কোম্পানী বিশেষরূপ উপকৃত হইয়াছিলেন। রাধাকান্ত নিষ্ঠাবান হিন্দু, ছিলেন; তিনি কান্দীতে রাধাবল্লভ নামে মুর্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়া, তাঁহার সেবার সুবন্দোবস্ত করিয়া যান, এবং অনেকগুলি গ্রাম তাঁহার নামে উৎসর্গীকৃত হয়। রাধাকান্তের স্মরণশক্তি অত্যন্ত তাঁক্ত ছিল, এবং তাঁহার ন্যায় রাজস্ববিষয়ে ব্যুৎপন্ন লোক সচরাচর দৃষ্ট হইত না।
মুসলমান ও কোম্পানী উভয় রাজত্বসময়ে তিনি জমাজমির। কাগজ ও হিসাবপত্র এরূপ পরিষ্কাররূপে রক্ষা করিয়াছিলেন যে, বঙ্গাধিকারী মহাশয়েরা তাঁহাকে না পাইলে, বিষম গোলযোগে পতিত হইতেন। রাধাকান্তের পর গঙ্গাগোবিন্দ সেই পদে অভিষিক্ত হইয়া–ছিলেন। আমরা পরে তাহা দেখাইতেছি।
মুসলমান রাজত্বকালে খালসার দেওয়ান রায়রায়ান ও বঙ্গাধিকারী কাননগোদের হস্তে রাজস্বসংক্রান্ত সমস্ত বন্দোবস্তের ভার থাকিত। তৈয়ায়রায়ান্ নবাবের প্রকৃত রাজস্ব-মন্ত্রী ছিলেন, রাজস্বসম্বন্ধীয় যাবতীয় কার্য্য তাঁহাকে করিতে হইত। কাননগো মহাশয়েরা জমিসম্বন্ধীয় সমস্ত কাগজপত্র প্রস্তুত করিতেন; ও তাঁহাদের নিকট উক্ত সমস্ত কাগজ-পত্র রক্ষিত হইত।
সুতরাং তাঁহাদের নিকট সমস্ত রাজস্বের মূলসূত্র। ছিল। তৎকালে কাননগোদিগের বিভাগে অনেক লোক নিযুক্ত হইত। সমস্ত বাঙ্গলারাজ্যের প্রত্যেক ভূমির বিবরণ যাঁহাদিগকে সংগ্রহ করিতে হইত, তাঁহাদের সাহায্যের জন্য কত লোকের আবশ্যক, তাহা সহজে অনুমান করা যাইতে পারে। খালসার দেওয়ান বা রায় রায়ান্ প্রকৃত প্রস্তাবে সমস্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধান করিতেন; কারণ রাজস্ব সংক্রান্ত সমস্ত বন্দোবস্তের ভার তাঁহারই হস্তে ন্যস্ত ছিল।