০৪:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

সূর্যের আগুন বেশি ভয়ংকর নাকি রাজনীতির

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • 52

বিভুরঞ্জন সরকার

এপ্রিলে সূর্য মাথার ওপর দাঁড়িয়ে নেই, যেন ঠিক মাথার ভেতরে ঢুকে গেছে। শহরের পিচঢালা রাস্তায় আগুনের ঢেউ, গ্রামে-গঞ্জে পানির হাহাকার, শিশুর চোখে ঘুম নেই, কৃষকের কপালে ছায়া নেই। এই যে অসহনীয় উত্তাপ, তা কেবল আবহাওয়ার বিষয় নয়; এ এক সর্বগ্রাসী, অব্যাহত, দগ্ধ বাস্তবতা। এই বাস্তবতায় শুধু সূর্যকে দায় দিলে অন্যায় হবে। কারণ ঠিক এর সাথেই হাত ধরাধরি করে চলে আরেক প্রকার উত্তাপ—রাজনৈতিক উত্তাপ। সংসদীয় উত্তেজনা, দ্বন্দ্ব, দমন-পীড়ন, বিভাজন এবং কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব। প্রশ্ন উঠছে—কে বেশি ভয়ংকর? প্রকৃতির উত্তাপ, না রাজনীতির?
প্রাকৃতিক গরমে হিটস্ট্রোক হয়, মস্তিষ্ক বিকল হয়, মানুষের শরীর পুড়ে যায়। কিন্তু রাজনীতির গরমে? ইতিহাস বলে—মানুষ কেবল পোড়ে না, জ্বলেও ওঠে; মরে না, মেরেও ফেলে। একটি সূর্যের উত্তাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে; কিন্তু আরেকটি—যে উত্তাপ আমরা নিজেরাই তৈরি করি, নিজেদের স্বার্থে, প্রতিহিংসায়, দম্ভে—তা আমাদেরই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল, থাকা উচিত ছিল।
বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে দুটি গরমই যেন ‘মানুষবিরোধী’। তবে প্রকৃতির গরম আসলে ‘রাজনীতি-নির্ভর’ও বটে। ভাবুন তো, আজ যদি শহরজুড়ে পর্যাপ্ত ছায়া থাকত, গাছ থাকত, পানির রিজার্ভ থাকত, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত থাকত—তবে এই তাপদাহ কি এত ভয়াবহ হয়ে উঠত? জলবায়ু পরিবর্তন কি আচমকা ঘটেছে? না কি আমাদের রাজনীতিই সময়মতো কোনো পরিকল্পনা নেয়নি?
তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই সংকট যেমন বিশ্বজুড়ে, তেমনই রাজনীতির অযোগ্যতা বা অবহেলা অনেকাংশে দায়ী এই সংকটের ভয়াবহতায়। পরিকল্পনাহীন নগরায়ণ, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, গাছ কাটা, নদী ভরাট, জলাধার দখল—সবই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলাফল। আবার অন্যদিকে, পরিবেশ আন্দোলন দমন, জলবায়ু নিয়ে কার্যকর উদ্যোগের অভাব—এসবও রাজনৈতিক ব্যর্থতা।

অর্থাৎ, প্রকৃতির এই উত্তাপ সরাসরি রাজনীতির গাফিলতিরই প্রতিফলন। আমরা গরমে হাঁসফাঁস করছি, অথচ সেই গরম প্রশমনের জন্য যারা দায়িত্বে, তারা ব্যস্ত বিরোধীদের দোষারোপে, নির্বাচন নিয়ে কৌশল সাজাতে, ক্ষমতা রক্ষার গেমপ্ল্যানে। সুতরাং প্রকৃতির গরমের দায়ও শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে রাজনীতির ঘাড়েই।
অন্যদিকে, খারাপ রাজনীতির উত্তাপ কেবল বাস্তবিক মৃত্যু নয়, সামাজিক বিভক্তি, আত্মিক ক্লান্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী অনাস্থা তৈরি করে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কেবল দলীয় নয়, তা পারিবারিক বন্ধনও ভেঙে দেয়, বন্ধুত্বে চিড় ধরায়, সামাজিক সংলাপে আনে বিষ। যে সমাজে রাজনৈতিক মতানৈক্যকে সহ্য করার সংস্কৃতি নেই, সেখানে রাজনীতির উত্তাপ সরাসরি সহিংসতায় রূপ নেয়।
এই উত্তাপের পার্থক্য আরেকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—প্রাকৃতিক গরম অনিবার্য হলেও তা সাময়িক; কিন্তু রাজনৈতিক গরম একবার জ্বলে উঠলে সমাজের প্রতিটি স্তরে দীর্ঘকাল ছাই হয়ে জমে থাকে। গরমে কৃষক মারা গেলে সংবাদ হয়; কিন্তু রাজনৈতিক হিংসায় যে গ্রামে দাঙ্গা হয়, সম্পত্তি পুড়ে যায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সেসবের পরিণতি গড়ায় বহু প্রজন্ম পর্যন্ত।
এ মুহূর্তে ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধাবস্থার রাজনীতির মূলে রয়েছে সাম্প্রাদায়িক রাজনীতি। এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পাকিস্তানকে আজ শুধু এই দরিদ্র অবস্থায় নিয়ে যায়নি, রাষ্ট্রের ভিত পর্যন্ত নড়বড়ে করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। সেখানেও অনেক সংখ্যালঘু আতঙ্কিত।  বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাতে কেবল যে প্রাণহানি হয় তা নয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়, যা আইন-শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী।

অতএব, প্রশ্নটি নিছক আবহাওয়ার নয়; এটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, নাগরিক সচেতনতা, আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রশ্ন। আমরা কি এমন একটি রাষ্ট্র গড়েছি, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে এবং রাষ্ট্র প্রস্তুত থাকবে? নাকি আমরা এমন এক রাজনীতি রচনা করেছি, যেখানে দুর্যোগ থাকুক আর না থাকুক, জনগণের দুর্ভোগ চিরন্তন থাকবে?
এই লেখার উদ্দেশ্য কোন হতাশা তৈরি নয়, বরং একটি উপলব্ধি জাগানো: প্রকৃতির বিরুদ্ধে আমাদের সীমিত শক্তি আছে, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা বদলাতে পারি। পরিবেশকে বাঁচাতে সামাজিক আন্দোলন, নীতিনির্ধারণ ও সচেতনতা দরকার, কিন্তু রাজনীতিকে মানবিক ও দায়িত্বশীল করতে দরকার জনসম্পৃক্ততা, জবাবদিহিতা এবং বিকল্প রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর।
যে রাজনীতি দায়িত্ব ভুলে ক্ষমতার মঞ্চে নাচে, যে রাজনীতি বিরোধী মতকে দমন করে তোষণের আগুনে পুড়ে যায়, যে রাজনীতি জনগণকে প্রতিপক্ষ ভাবে—সে রাজনীতি মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। বরং প্রকৃতির গরমের মতোই, সে চারদিকে ছড়িয়ে দেয় ভয়ের, ক্ষোভের, অনিশ্চয়তার উত্তাপ।
আজ যদি দেখা যায়, তাপপ্রবাহে ৫ জন মারা গেছেন, অথচ রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৫ জন, তাহলে কোন উত্তাপ বেশি ক্ষতিকর? প্রকৃতির, নাকি রাজনীতির?

আবার ভাবুন, গরমে মানুষ এক হয়, একে অন্যকে পানি দেয়, ছায়ায় বসতে দেয়, পথিককে আশ্রয় দেয়। কিন্তু রাজনীতির গরমে মানুষ বিভক্ত হয়, সন্দেহ করে, আক্রমণ করে, ঘৃণা ছড়ায়। প্রকৃতির গরম নিঃসন্দেহে কষ্টদায়ক, কিন্তু রাজনীতির গরম অনেক সময় নিঃশেষকর।
আমাদের দক্ষিণ এশিয়া একটি বিপজ্জনক মোড়ে দাঁড়িয়ে। প্রকৃতি যদি উত্তপ্ত হয়, তবে বিজ্ঞান দিয়ে, প্রস্তুতি দিয়ে মোকাবিলা সম্ভব। কিন্তু রাজনীতি যদি উত্তপ্ত হয়, আর তার উত্তাপ যদি উগ্রতা, হিংসা আর প্রতিশোধপরায়ণ হয়—তাহলে সেখান থেকে পরিত্রাণ নেই।
তাই সময় এসেছে একটিবার ভাবার—এই গরমে কেবল ঘরে ফ্যান চালিয়ে শান্তি পাবার চেষ্টা নয়, দরকার শীতল রাজনীতি, সহিষ্ণু সমাজ, দায়বদ্ধ রাষ্ট্র। না হলে সূর্য যত না পুড়াবে, তার চেয়েও বেশি পুড়িয়ে ফেলবে আমাদেরই রাজনীতি।
যতক্ষণ না আমরা এই দুই উত্তাপকে—সূর্যের আর রাজনীতির—একসঙ্গে বিবেচনায় নিই, ততদিন আমাদের জীবনব্যবস্থা এক যৌথ আগুনে পুড়তেই থাকবে। আর তখন প্রশ্ন উঠবেই—সূর্যের আগুন ভয়ংকর, না রাজনীতির?

লেখক:সিনিয়র সাংবাদিক

সূর্যের আগুন বেশি ভয়ংকর নাকি রাজনীতির

০৮:০০:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

বিভুরঞ্জন সরকার

এপ্রিলে সূর্য মাথার ওপর দাঁড়িয়ে নেই, যেন ঠিক মাথার ভেতরে ঢুকে গেছে। শহরের পিচঢালা রাস্তায় আগুনের ঢেউ, গ্রামে-গঞ্জে পানির হাহাকার, শিশুর চোখে ঘুম নেই, কৃষকের কপালে ছায়া নেই। এই যে অসহনীয় উত্তাপ, তা কেবল আবহাওয়ার বিষয় নয়; এ এক সর্বগ্রাসী, অব্যাহত, দগ্ধ বাস্তবতা। এই বাস্তবতায় শুধু সূর্যকে দায় দিলে অন্যায় হবে। কারণ ঠিক এর সাথেই হাত ধরাধরি করে চলে আরেক প্রকার উত্তাপ—রাজনৈতিক উত্তাপ। সংসদীয় উত্তেজনা, দ্বন্দ্ব, দমন-পীড়ন, বিভাজন এবং কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব। প্রশ্ন উঠছে—কে বেশি ভয়ংকর? প্রকৃতির উত্তাপ, না রাজনীতির?
প্রাকৃতিক গরমে হিটস্ট্রোক হয়, মস্তিষ্ক বিকল হয়, মানুষের শরীর পুড়ে যায়। কিন্তু রাজনীতির গরমে? ইতিহাস বলে—মানুষ কেবল পোড়ে না, জ্বলেও ওঠে; মরে না, মেরেও ফেলে। একটি সূর্যের উত্তাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে; কিন্তু আরেকটি—যে উত্তাপ আমরা নিজেরাই তৈরি করি, নিজেদের স্বার্থে, প্রতিহিংসায়, দম্ভে—তা আমাদেরই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল, থাকা উচিত ছিল।
বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে দুটি গরমই যেন ‘মানুষবিরোধী’। তবে প্রকৃতির গরম আসলে ‘রাজনীতি-নির্ভর’ও বটে। ভাবুন তো, আজ যদি শহরজুড়ে পর্যাপ্ত ছায়া থাকত, গাছ থাকত, পানির রিজার্ভ থাকত, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত থাকত—তবে এই তাপদাহ কি এত ভয়াবহ হয়ে উঠত? জলবায়ু পরিবর্তন কি আচমকা ঘটেছে? না কি আমাদের রাজনীতিই সময়মতো কোনো পরিকল্পনা নেয়নি?
তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই সংকট যেমন বিশ্বজুড়ে, তেমনই রাজনীতির অযোগ্যতা বা অবহেলা অনেকাংশে দায়ী এই সংকটের ভয়াবহতায়। পরিকল্পনাহীন নগরায়ণ, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, গাছ কাটা, নদী ভরাট, জলাধার দখল—সবই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলাফল। আবার অন্যদিকে, পরিবেশ আন্দোলন দমন, জলবায়ু নিয়ে কার্যকর উদ্যোগের অভাব—এসবও রাজনৈতিক ব্যর্থতা।

অর্থাৎ, প্রকৃতির এই উত্তাপ সরাসরি রাজনীতির গাফিলতিরই প্রতিফলন। আমরা গরমে হাঁসফাঁস করছি, অথচ সেই গরম প্রশমনের জন্য যারা দায়িত্বে, তারা ব্যস্ত বিরোধীদের দোষারোপে, নির্বাচন নিয়ে কৌশল সাজাতে, ক্ষমতা রক্ষার গেমপ্ল্যানে। সুতরাং প্রকৃতির গরমের দায়ও শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে রাজনীতির ঘাড়েই।
অন্যদিকে, খারাপ রাজনীতির উত্তাপ কেবল বাস্তবিক মৃত্যু নয়, সামাজিক বিভক্তি, আত্মিক ক্লান্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী অনাস্থা তৈরি করে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কেবল দলীয় নয়, তা পারিবারিক বন্ধনও ভেঙে দেয়, বন্ধুত্বে চিড় ধরায়, সামাজিক সংলাপে আনে বিষ। যে সমাজে রাজনৈতিক মতানৈক্যকে সহ্য করার সংস্কৃতি নেই, সেখানে রাজনীতির উত্তাপ সরাসরি সহিংসতায় রূপ নেয়।
এই উত্তাপের পার্থক্য আরেকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—প্রাকৃতিক গরম অনিবার্য হলেও তা সাময়িক; কিন্তু রাজনৈতিক গরম একবার জ্বলে উঠলে সমাজের প্রতিটি স্তরে দীর্ঘকাল ছাই হয়ে জমে থাকে। গরমে কৃষক মারা গেলে সংবাদ হয়; কিন্তু রাজনৈতিক হিংসায় যে গ্রামে দাঙ্গা হয়, সম্পত্তি পুড়ে যায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সেসবের পরিণতি গড়ায় বহু প্রজন্ম পর্যন্ত।
এ মুহূর্তে ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধাবস্থার রাজনীতির মূলে রয়েছে সাম্প্রাদায়িক রাজনীতি। এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পাকিস্তানকে আজ শুধু এই দরিদ্র অবস্থায় নিয়ে যায়নি, রাষ্ট্রের ভিত পর্যন্ত নড়বড়ে করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। সেখানেও অনেক সংখ্যালঘু আতঙ্কিত।  বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাতে কেবল যে প্রাণহানি হয় তা নয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়, যা আইন-শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী।

অতএব, প্রশ্নটি নিছক আবহাওয়ার নয়; এটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, নাগরিক সচেতনতা, আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রশ্ন। আমরা কি এমন একটি রাষ্ট্র গড়েছি, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে এবং রাষ্ট্র প্রস্তুত থাকবে? নাকি আমরা এমন এক রাজনীতি রচনা করেছি, যেখানে দুর্যোগ থাকুক আর না থাকুক, জনগণের দুর্ভোগ চিরন্তন থাকবে?
এই লেখার উদ্দেশ্য কোন হতাশা তৈরি নয়, বরং একটি উপলব্ধি জাগানো: প্রকৃতির বিরুদ্ধে আমাদের সীমিত শক্তি আছে, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা বদলাতে পারি। পরিবেশকে বাঁচাতে সামাজিক আন্দোলন, নীতিনির্ধারণ ও সচেতনতা দরকার, কিন্তু রাজনীতিকে মানবিক ও দায়িত্বশীল করতে দরকার জনসম্পৃক্ততা, জবাবদিহিতা এবং বিকল্প রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর।
যে রাজনীতি দায়িত্ব ভুলে ক্ষমতার মঞ্চে নাচে, যে রাজনীতি বিরোধী মতকে দমন করে তোষণের আগুনে পুড়ে যায়, যে রাজনীতি জনগণকে প্রতিপক্ষ ভাবে—সে রাজনীতি মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। বরং প্রকৃতির গরমের মতোই, সে চারদিকে ছড়িয়ে দেয় ভয়ের, ক্ষোভের, অনিশ্চয়তার উত্তাপ।
আজ যদি দেখা যায়, তাপপ্রবাহে ৫ জন মারা গেছেন, অথচ রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৫ জন, তাহলে কোন উত্তাপ বেশি ক্ষতিকর? প্রকৃতির, নাকি রাজনীতির?

আবার ভাবুন, গরমে মানুষ এক হয়, একে অন্যকে পানি দেয়, ছায়ায় বসতে দেয়, পথিককে আশ্রয় দেয়। কিন্তু রাজনীতির গরমে মানুষ বিভক্ত হয়, সন্দেহ করে, আক্রমণ করে, ঘৃণা ছড়ায়। প্রকৃতির গরম নিঃসন্দেহে কষ্টদায়ক, কিন্তু রাজনীতির গরম অনেক সময় নিঃশেষকর।
আমাদের দক্ষিণ এশিয়া একটি বিপজ্জনক মোড়ে দাঁড়িয়ে। প্রকৃতি যদি উত্তপ্ত হয়, তবে বিজ্ঞান দিয়ে, প্রস্তুতি দিয়ে মোকাবিলা সম্ভব। কিন্তু রাজনীতি যদি উত্তপ্ত হয়, আর তার উত্তাপ যদি উগ্রতা, হিংসা আর প্রতিশোধপরায়ণ হয়—তাহলে সেখান থেকে পরিত্রাণ নেই।
তাই সময় এসেছে একটিবার ভাবার—এই গরমে কেবল ঘরে ফ্যান চালিয়ে শান্তি পাবার চেষ্টা নয়, দরকার শীতল রাজনীতি, সহিষ্ণু সমাজ, দায়বদ্ধ রাষ্ট্র। না হলে সূর্য যত না পুড়াবে, তার চেয়েও বেশি পুড়িয়ে ফেলবে আমাদেরই রাজনীতি।
যতক্ষণ না আমরা এই দুই উত্তাপকে—সূর্যের আর রাজনীতির—একসঙ্গে বিবেচনায় নিই, ততদিন আমাদের জীবনব্যবস্থা এক যৌথ আগুনে পুড়তেই থাকবে। আর তখন প্রশ্ন উঠবেই—সূর্যের আগুন ভয়ংকর, না রাজনীতির?

লেখক:সিনিয়র সাংবাদিক