০১:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

চালের বাড়তি দাম সহনশীল হয়ে আসায় উপকারিতা

  • Sarakhon Report
  • ০৪:৪৫:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • 38

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বর্তমান চালের বাজার: কোথায় দাঁড়িয়ে দাম?

দেশের চালের বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও সেটি ধীরে ধীরে সহনীয় পর্যায়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তবে তিনি একদিকে যেমন ভোক্তাদের উদ্বেগকে স্বীকার করেছেন, অন্যদিকে কৃষকের স্বার্থরক্ষার দিকটিও জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন।

খাদ্য উপদেষ্টার ভাষ্য অনুযায়ী, চালের দাম একেবারে কমে গেলে কৃষক তার উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে, যা ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে। সুতরাং একটি ‘সহনীয় ভারসাম্য’ বজায় রাখা জরুরি।

উপদেষ্টার মন্তব্য: চাল মানুষের সহনশীলতায় আসছেকিন্তু কৃষকও বাঁচতে হবে

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় নির্মাণাধীন সাইলো গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন:

“চালের দাম বাড়লেও ক্রমান্বয়ে সহনীয় হয়ে আসছে। তবে দাম একেবারে পড়ে যাওয়াও ঠিক নয়। কৃষকদের উৎপাদনের ন্যায্যমূল্য পেতে হবে, তাহলেই তারা উৎপাদনে উৎসাহী হবে।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, একটি নিয়ন্ত্রিত এবং ভারসাম্যপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাই টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। বাজারে সম্পূর্ণভাবে দাম কমিয়ে দিলে, উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে—আর তার চাপ দীর্ঘমেয়াদে সাধারণ মানুষের ওপরেই আসবে।

বর্তমানে বাজারে চালের দাম

বর্তমান চালের দাম (মে ২০২৫)

ঢাকার খুচরা বাজারে চালের দাম নিম্নরূপ:

মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা): প্রতি কেজি ৫০–৫৫ টাকা

মাঝারি চাল (বিআর-২৮, পাজাম): প্রতি কেজি ৫৮–৬৫ টাকা

চিকন চাল (মিনিকেট): প্রতি কেজি ৭২–৮৫ টাকা

উচ্চমানের চাল (নাজিরশাইল): প্রতি কেজি ৮০–৯০ টাকা

মোজাম্মেল মিনিকেট: প্রতিকেজি ১১০ টাকা

ভোক্তার দৃষ্টিকোণ: দামের বোঝা কাঁধে নিয়ে টিকে থাকা

একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের দিকটিও উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। চালের দাম বাড়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে নিম্নআয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারে। বিশেষ করে যারা দৈনন্দিন জীবনে চালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, তাদের বাজেটের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও পরিবহন ব্যয়, মজুতদারদের কারসাজি ও আমদানিনির্ভরতার কারণে চালের দাম সহজে কমে না। সরকার এই বিষয়গুলো নজরে রেখেছে বলেই খাদ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন।

আশাব্যঞ্জক বোরো ফলননতুন সাইলোর উদ্যোগ

আলী ইমাম মজুমদার জানান, এবারের বোরো মৌসুমে আশাতীত উৎপাদন হয়েছে। তাই চাল সংরক্ষণের জন্য নতুন সাইলোগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে পরিদর্শিত সাইলো সম্পর্কে তিনি বলেন, “মোটামুটি আমাদের সাইলোর নির্মাণকাজ সমাপ্তির পথে। আমরা শিগগিরই এর মাধ্যমে খাদ্য সংরক্ষণ শুরু করতে পারব।”

সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগগুলো চালের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা: সহনীয় দামস্বস্তি ও স্থিতিশীলতা

খাদ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে তিনটি মূল বার্তা স্পষ্ট:

  1. চালের দাম একেবারে কমলে কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।
  2. চালের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে সরকার সরবরাহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থায় উন্নয়ন আনছে।
  3. ভোক্তারা যাতে অত্যধিক চাপের মধ্যে না পড়েসে দিকেও সরকার সজাগ।

উপসংহার: দরকার দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও সচেতনতা

বর্তমান চালের বাজার একধরনের উত্তরণ পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সাইলো নির্মাণ, আমদানি নীতিমালা পর্যালোচনা ও কৃষকের প্রণোদনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ চালের বাজার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। তবে এর বাস্তব সুফল পেতে সময় লাগবে এবং ততদিন ভোক্তাদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

চালের বাড়তি দাম সহনশীল হয়ে আসায় উপকারিতা

০৪:৪৫:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বর্তমান চালের বাজার: কোথায় দাঁড়িয়ে দাম?

দেশের চালের বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও সেটি ধীরে ধীরে সহনীয় পর্যায়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তবে তিনি একদিকে যেমন ভোক্তাদের উদ্বেগকে স্বীকার করেছেন, অন্যদিকে কৃষকের স্বার্থরক্ষার দিকটিও জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন।

খাদ্য উপদেষ্টার ভাষ্য অনুযায়ী, চালের দাম একেবারে কমে গেলে কৃষক তার উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে, যা ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে। সুতরাং একটি ‘সহনীয় ভারসাম্য’ বজায় রাখা জরুরি।

উপদেষ্টার মন্তব্য: চাল মানুষের সহনশীলতায় আসছেকিন্তু কৃষকও বাঁচতে হবে

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় নির্মাণাধীন সাইলো গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন:

“চালের দাম বাড়লেও ক্রমান্বয়ে সহনীয় হয়ে আসছে। তবে দাম একেবারে পড়ে যাওয়াও ঠিক নয়। কৃষকদের উৎপাদনের ন্যায্যমূল্য পেতে হবে, তাহলেই তারা উৎপাদনে উৎসাহী হবে।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, একটি নিয়ন্ত্রিত এবং ভারসাম্যপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাই টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। বাজারে সম্পূর্ণভাবে দাম কমিয়ে দিলে, উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে—আর তার চাপ দীর্ঘমেয়াদে সাধারণ মানুষের ওপরেই আসবে।

বর্তমানে বাজারে চালের দাম

বর্তমান চালের দাম (মে ২০২৫)

ঢাকার খুচরা বাজারে চালের দাম নিম্নরূপ:

মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা): প্রতি কেজি ৫০–৫৫ টাকা

মাঝারি চাল (বিআর-২৮, পাজাম): প্রতি কেজি ৫৮–৬৫ টাকা

চিকন চাল (মিনিকেট): প্রতি কেজি ৭২–৮৫ টাকা

উচ্চমানের চাল (নাজিরশাইল): প্রতি কেজি ৮০–৯০ টাকা

মোজাম্মেল মিনিকেট: প্রতিকেজি ১১০ টাকা

ভোক্তার দৃষ্টিকোণ: দামের বোঝা কাঁধে নিয়ে টিকে থাকা

একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের দিকটিও উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। চালের দাম বাড়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে নিম্নআয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারে। বিশেষ করে যারা দৈনন্দিন জীবনে চালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, তাদের বাজেটের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও পরিবহন ব্যয়, মজুতদারদের কারসাজি ও আমদানিনির্ভরতার কারণে চালের দাম সহজে কমে না। সরকার এই বিষয়গুলো নজরে রেখেছে বলেই খাদ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন।

আশাব্যঞ্জক বোরো ফলননতুন সাইলোর উদ্যোগ

আলী ইমাম মজুমদার জানান, এবারের বোরো মৌসুমে আশাতীত উৎপাদন হয়েছে। তাই চাল সংরক্ষণের জন্য নতুন সাইলোগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে পরিদর্শিত সাইলো সম্পর্কে তিনি বলেন, “মোটামুটি আমাদের সাইলোর নির্মাণকাজ সমাপ্তির পথে। আমরা শিগগিরই এর মাধ্যমে খাদ্য সংরক্ষণ শুরু করতে পারব।”

সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগগুলো চালের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা: সহনীয় দামস্বস্তি ও স্থিতিশীলতা

খাদ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে তিনটি মূল বার্তা স্পষ্ট:

  1. চালের দাম একেবারে কমলে কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।
  2. চালের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে সরকার সরবরাহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থায় উন্নয়ন আনছে।
  3. ভোক্তারা যাতে অত্যধিক চাপের মধ্যে না পড়েসে দিকেও সরকার সজাগ।

উপসংহার: দরকার দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও সচেতনতা

বর্তমান চালের বাজার একধরনের উত্তরণ পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সাইলো নির্মাণ, আমদানি নীতিমালা পর্যালোচনা ও কৃষকের প্রণোদনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ চালের বাজার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। তবে এর বাস্তব সুফল পেতে সময় লাগবে এবং ততদিন ভোক্তাদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।