সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- ভর্তুকি সংস্কারের অভাব এবং ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কারণে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি বিলম্বিত হয়েছে
- বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচিতে অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করা হলে তা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে
- আইএমএফের ঋণ শুধুমাত্র অর্থায়ন নয়, বরং ব্যাংকিং, করনীতি, সরকারি ব্যয় ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত সংস্কারের একটি সুযোগ
বাংলাদেশের সরকার সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করা হলে তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে সরে আসতে পারে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সংস্কার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে পারে।
আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির গুরুত্ব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “আইএমএফ কর্মসূচি শুধুমাত্র অর্থায়নের জন্য নয়, এটি কাঠামোগত সংস্কারের জন্য একটি কৌশলগত সুযোগ।” তিনি ব্যাখ্যা করেন, ব্যাংকিং খাত, করনীতি, সরকারি ব্যয় ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের সংস্কার বিলম্বিত হয়েছে। আইএমএফের শর্তাবলি এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে।
ঋণ কিস্তি বিলম্বের কারণ
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি বিলম্বিত হয়েছে রাজস্ব সংগ্রহে দুর্বলতা, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না হওয়া, ভর্তুকি সংস্কারে অগ্রগতির অভাব এবং ব্যাংক খাতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হওয়ার কারণে ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও চ্যালেঞ্জ
আইএমএফ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩.৭৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। এর পেছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ, স্থায়ী মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতি ।
সংস্কার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে হবে
ড. রায়হান বলেন, “সংস্কার প্রক্রিয়ায় গতি না থাকলে অর্থনীতি বিকৃত হয়।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের উচিত আইএমএফের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে বাস্তবসম্মত ও রাজনৈতিকভাবে কার্যকর সংস্কার পরিকল্পনা তৈরি করা।”
আইএমএফ কর্মসূচি থেকে সরে আসার সম্ভাব্য প্রভাব
- নীতিগত শৃঙ্খলার অভাব: আইএমএফের শর্তাবলি সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। কর্মসূচি থেকে সরে এলে এই চাপ কমে যাবে, ফলে সংস্কার বিলম্বিত হতে পারে।
- আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস: ঋণ কর্মসূচি বাতিল করলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকিতে পড়বে: মুদ্রাস্ফীতি, বিনিময় হার ও রাজস্ব ঘাটতির মতো সমস্যাগুলো আরও তীব্র হতে পারে।
উপসংহার
বাংলাদেশের উচিত আইএমএফের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় গতি আনা। শুধুমাত্র অর্থের জন্য নয়, বরং একটি টেকসই ও সংস্কারভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য এই কর্মসূচিতে অটল থাকা গুরুত্বপূর্ণ।