০৫:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

পোপ নির্বাচনের রহস্যঘেরা পদ্ধতি উন্মোচনে ‘কনক্লেভ’ চলচ্চিত্র

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • 37

সারাক্ষণ রিপোর্ট

রোমান ক্যাথলিক গির্জার পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে নির্মিত ২০২৪ সালের কনক্লেভ’ চলচ্চিত্রটি বিশ্বজুড়ে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। চলচ্চিত্রটি কেবল একটি কাহিনিচিত্র নয়বরং শতাব্দী প্রাচীন এই গোপন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পেছনের জটিলতা ও মানবিক দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছে।

চলচ্চিত্র ও বাস্তবতা একসাথে এগোচ্ছে

৭ মে বুধবার, বাস্তবে শুরু হতে যাচ্ছে পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়া, যেখানে অংশ নেবেন ১৩৪ জন কার্ডিনাল। ‘কনক্লেভ’ সিনেমার মতো করেই, এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতরে, বিশ্বখ্যাত মাইকেলাঞ্জেলোর চিত্রকর্মের ছায়ায়।
এটি সম্পূর্ণভাবে গোপন একটি প্রক্রিয়া। বাইরের কেউ জানবে না কে নির্বাচিত হল, যতক্ষণ না ভ্যাটিকানের চিমনি থেকে সাদা ধোঁয়া বের হয়।

আত্মনিবেদন ও বিচ্ছিন্নতার ঐতিহ্য

রবার্ট হ্যারিসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি দেখায় কীভাবে কার্ডিনালরা নিজেদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখেন এই নির্বাচনী সময়ে। যদিও তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন নয়—খাবার সরবরাহ, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য বাইরের কিছু সংযোগ থাকে।

সেন্ট মেরিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিফেন বুলিভ্যান্ট বলেন, “তারা পুরোপুরি আলাদা হয়ে যান না, তবে বহির্বিশ্ব থেকে প্রভাবমুক্ত থাকার চেষ্টা করেন।”

ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্না রোল্যান্ডস বলেন, এই ঐতিহ্য শতাব্দী পুরনো। আধুনিক পৃথিবীতে যখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ, তখন এমন গোপন প্রক্রিয়া স্বভাবতই মানুষের কৌতূহল উদ্রেক করে।

রাজনীতিকৌশল আর দ্বন্দ্বে ভরা ভোটাভুটি

চলচ্চিত্রটি দেখায়—ঘনিষ্ঠ কক্ষে তীব্র আলোচনার মধ্যে রাজনীতি, ষড়যন্ত্র ও কৌশলের খেলা। এক কার্ডিনাল নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে অন্য একজনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেন। অনেকেই নিজেদের সমর্থকদের ভোট অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য চাপ দেন।

ফিল্মের সম্পাদক নিক এমারসন বলেন, “চলচ্চিত্রটি মূলত এই রাজনীতিক হিসেব-নিকেশ ঘিরেই আবর্তিত।”

রোয়্যাম্পটনের ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টিনা বিটি জানান, পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগেভাগেই অনেক আলোচনা ও প্রচ্ছন্ন প্রস্তুতি চলেছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

নির্বাচনের আগেই চলে প্রস্তুতি

চলচ্চিত্রে মূল উত্তেজনা ভোট দেওয়ার দৃশ্যে কেন্দ্রীভূত হলেও বাস্তবে নির্বাচনের আগে দিনগুলোতেই বেশি আলাপ আলোচনা হয়। এই সময়ে কার্ডিনালরা একে অপরকে জানেন, নিজেদের অগ্রাধিকার ঠিক করেন এবং একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন।

অধ্যাপক রোল্যান্ডস, যিনি ভ্যাটিকানে দুই বছরের নিয়োজিত ছিলেন, বলেন, “এই প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সকলেই একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”

বাস্তবতা ও কল্পনার তফাৎ

চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে—একজন অজানা কার্ডিনাল, যিনি আগের পোপ গোপনে মনোনীত করেছিলেন, হঠাৎ নির্বাচনে অংশ নেন। বাস্তবে এটি সম্ভব নয়। কারণ, ভোটার কার্ডিনালরা অবশ্যই প্রকাশ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে।

তবে এবারের নির্বাচন অনিশ্চয়তায় ভরা হতে পারে। ভোটারদের প্রায় ৮০ শতাংশকেই নিয়োগ দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস, যারা বৈচিত্র্যপূর্ণ রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট থেকে এসেছেন। অনেকেই উন্নয়নশীল দেশ থেকে আসা—যেখানে সাধারণত কার্ডিনাল মনোনয়ন কম হয়।

পবিত্রতা ও মানবিকতার দ্বন্দ্ব

চলচ্চিত্রটি কার্ডিনালদের একটি মানবিক রূপে তুলে ধরেছে—তাদের লোভ, ভয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।

পরিচালক এডওয়ার্ড বার্গার বলেন, “চলচ্চিত্রে আমরা তাদের আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে আনতে চেয়েছি। তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, ধূমপান করে, এবং আমাদের মতোই মানসিক দ্বন্দ্বে ভোগে।”

অধ্যাপক রোল্যান্ডস বলেন, “এই প্রক্রিয়াটি যদিও একটি ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হয়, তবুও এটি একান্তভাবে একটি মানবিক বিষয়—যেখানে আছে শোক, ভয়, প্রলোভন ও সাহস।”

এই নির্বাচন ও চলচ্চিত্র উভয়ই ক্যাথলিক গির্জার কেন্দ্রে থাকা এক গোপন জগতের এক ঝলক তুলে ধরেছে—যেখানে আধ্যাত্মিকতা ও মানবিকতা হাত ধরাধরি করে চলে।

পোপ নির্বাচনের রহস্যঘেরা পদ্ধতি উন্মোচনে ‘কনক্লেভ’ চলচ্চিত্র

০৭:০০:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

রোমান ক্যাথলিক গির্জার পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে নির্মিত ২০২৪ সালের কনক্লেভ’ চলচ্চিত্রটি বিশ্বজুড়ে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। চলচ্চিত্রটি কেবল একটি কাহিনিচিত্র নয়বরং শতাব্দী প্রাচীন এই গোপন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পেছনের জটিলতা ও মানবিক দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছে।

চলচ্চিত্র ও বাস্তবতা একসাথে এগোচ্ছে

৭ মে বুধবার, বাস্তবে শুরু হতে যাচ্ছে পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়া, যেখানে অংশ নেবেন ১৩৪ জন কার্ডিনাল। ‘কনক্লেভ’ সিনেমার মতো করেই, এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতরে, বিশ্বখ্যাত মাইকেলাঞ্জেলোর চিত্রকর্মের ছায়ায়।
এটি সম্পূর্ণভাবে গোপন একটি প্রক্রিয়া। বাইরের কেউ জানবে না কে নির্বাচিত হল, যতক্ষণ না ভ্যাটিকানের চিমনি থেকে সাদা ধোঁয়া বের হয়।

আত্মনিবেদন ও বিচ্ছিন্নতার ঐতিহ্য

রবার্ট হ্যারিসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি দেখায় কীভাবে কার্ডিনালরা নিজেদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখেন এই নির্বাচনী সময়ে। যদিও তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন নয়—খাবার সরবরাহ, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য বাইরের কিছু সংযোগ থাকে।

সেন্ট মেরিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিফেন বুলিভ্যান্ট বলেন, “তারা পুরোপুরি আলাদা হয়ে যান না, তবে বহির্বিশ্ব থেকে প্রভাবমুক্ত থাকার চেষ্টা করেন।”

ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্না রোল্যান্ডস বলেন, এই ঐতিহ্য শতাব্দী পুরনো। আধুনিক পৃথিবীতে যখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ, তখন এমন গোপন প্রক্রিয়া স্বভাবতই মানুষের কৌতূহল উদ্রেক করে।

রাজনীতিকৌশল আর দ্বন্দ্বে ভরা ভোটাভুটি

চলচ্চিত্রটি দেখায়—ঘনিষ্ঠ কক্ষে তীব্র আলোচনার মধ্যে রাজনীতি, ষড়যন্ত্র ও কৌশলের খেলা। এক কার্ডিনাল নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে অন্য একজনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেন। অনেকেই নিজেদের সমর্থকদের ভোট অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য চাপ দেন।

ফিল্মের সম্পাদক নিক এমারসন বলেন, “চলচ্চিত্রটি মূলত এই রাজনীতিক হিসেব-নিকেশ ঘিরেই আবর্তিত।”

রোয়্যাম্পটনের ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টিনা বিটি জানান, পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগেভাগেই অনেক আলোচনা ও প্রচ্ছন্ন প্রস্তুতি চলেছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

নির্বাচনের আগেই চলে প্রস্তুতি

চলচ্চিত্রে মূল উত্তেজনা ভোট দেওয়ার দৃশ্যে কেন্দ্রীভূত হলেও বাস্তবে নির্বাচনের আগে দিনগুলোতেই বেশি আলাপ আলোচনা হয়। এই সময়ে কার্ডিনালরা একে অপরকে জানেন, নিজেদের অগ্রাধিকার ঠিক করেন এবং একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন।

অধ্যাপক রোল্যান্ডস, যিনি ভ্যাটিকানে দুই বছরের নিয়োজিত ছিলেন, বলেন, “এই প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সকলেই একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”

বাস্তবতা ও কল্পনার তফাৎ

চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে—একজন অজানা কার্ডিনাল, যিনি আগের পোপ গোপনে মনোনীত করেছিলেন, হঠাৎ নির্বাচনে অংশ নেন। বাস্তবে এটি সম্ভব নয়। কারণ, ভোটার কার্ডিনালরা অবশ্যই প্রকাশ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে।

তবে এবারের নির্বাচন অনিশ্চয়তায় ভরা হতে পারে। ভোটারদের প্রায় ৮০ শতাংশকেই নিয়োগ দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস, যারা বৈচিত্র্যপূর্ণ রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট থেকে এসেছেন। অনেকেই উন্নয়নশীল দেশ থেকে আসা—যেখানে সাধারণত কার্ডিনাল মনোনয়ন কম হয়।

পবিত্রতা ও মানবিকতার দ্বন্দ্ব

চলচ্চিত্রটি কার্ডিনালদের একটি মানবিক রূপে তুলে ধরেছে—তাদের লোভ, ভয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।

পরিচালক এডওয়ার্ড বার্গার বলেন, “চলচ্চিত্রে আমরা তাদের আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে আনতে চেয়েছি। তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, ধূমপান করে, এবং আমাদের মতোই মানসিক দ্বন্দ্বে ভোগে।”

অধ্যাপক রোল্যান্ডস বলেন, “এই প্রক্রিয়াটি যদিও একটি ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হয়, তবুও এটি একান্তভাবে একটি মানবিক বিষয়—যেখানে আছে শোক, ভয়, প্রলোভন ও সাহস।”

এই নির্বাচন ও চলচ্চিত্র উভয়ই ক্যাথলিক গির্জার কেন্দ্রে থাকা এক গোপন জগতের এক ঝলক তুলে ধরেছে—যেখানে আধ্যাত্মিকতা ও মানবিকতা হাত ধরাধরি করে চলে।