সারাক্ষণ রিপোর্ট
ইংল্যান্ডের অ্যাংলো־স্যাক্সন যুগের সাহসী যুদ্ধগাথা নিয়ে নির্মিত নেটফ্লিক্সের সিরিজ ‘দ্য লাস্ট কিংডম’ বাংলাদেশের তরুণ দর্শকদের মধ্যে দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্ট্রিমিং পরিষেবা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, এমনকি অফলাইন ফ্যান সামগ্রী—সবখানেই দেখা যাচ্ছে সিরিজটির উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি।
দর্শকসংখ্যা ও সাবস্ক্রিপশনের ইঙ্গিত
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বাংলাদেশেও নেটফ্লিক্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ডেটা অ্যানালিটিক্স প্ল্যাটফর্ম ফ্লিক্সপ্যাট্রল‑এর ২০২৪ সালের অনুমান অনুযায়ী, বাংলাদেশে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক সংখ্যা তিন লক্ষাধিক (প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩০) জনে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি । বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘দ্য লাস্ট কিংডম’ ও অনুরূপ ঐতিহাসিক ড্রামা সিরিজ এই বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
নেটফ্লিক্সের স্থানীয় টপ চার্টে অবস্থান
২০২২ সালের মার্চে ‘দ্য ডেইলি স্টার’ প্রকাশিত “বাংলাদেশে নেটফ্লিক্সের শীর্ষ ৫ শো” তালিকায় ‘দ্য লাস্ট কিংডম’ অন্যতম সেরা সিরিজ হিসেবে উঠে আসে, যা সিরিজটির প্রাথমিক জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে । পরের বছর স্পিন‑অফ চলচ্চিত্র ‘সেভেন কিংস মাস্ট ডাই’ মুক্তির পর বাংলাদেশি দর্শকদের আগ্রহ নতুন করে বাড়ে; বিশ্বব্যাপী প্রথম সপ্তাহেই ছবিটি ৩৫.৫ মিলিয়ন ঘণ্টা ভিউ হয়েছিল ।
জনপ্রিয়তার কারণ
- ইতিহাস ও অ্যাকশনের মিশেল : বাস্তব ইতিহাসের ছোঁয়া আর ধারাবাহিক যুদ্ধদৃশ্য তরুণ‑তরুণীদের আকর্ষণ করেছে।
- বাংলা সাবটাইটেল : অফিশিয়াল বাংলা সাবটাইটেল থাকায় ভাষা‑অসুবিধা ছাড়াই বিস্তৃত দর্শকগোষ্ঠী সিরিজটি উপভোগ করতে পারছে।
- ভাইকিং‑কেন্দ্রিক ধারাবাহিক আগ্রহ : ‘ভাইকিংস’ ও ‘ভাইকিংস: ভালহাল্লা’‐র মতো শো আগেই জনপ্রিয় ছিল; একই ঘরানার নতুন কনটেন্ট হিসেবে ‘দ্য লাস্ট কিংডম’ সহজেই জায়গা করে নেয়।
সোশ্যাল মিডিয়া ও ফ্যান সংস্কৃতি
বাংলাদেশি ফ্যানরা ফেসবুক ও এক্স (টুইটার)‑এ #TheLastKingdomBD ও #DestinyIsAll হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চরিত্রভিত্তিক মিম, সংলাপ রি‑ক্রিয়েশন ও পোশাক রূপায়ণ শেয়ার করেন। ফেসবুকভিত্তিক কিছু আন্তর্জাতিক গ্রুপে বাংলাদেশের সদস্যসংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে, যা ভক্ত-সম্প্রদায়ের সক্রিয়তার ইঙ্গিত দেয় ।
বিশেষজ্ঞ মত
বিনোদন বিশ্লেষক মাশরুর হোসাইন মনে করেন, “স্থানীয় দর্শক ইতিহাসনির্ভর বিদেশি কনটেন্টে নতুন স্বাদ পাচ্ছে। নেটফ্লিক্স এখানেই ফাঁকা জায়গা ধরতে পেরেছে। ‘দ্য লাস্ট কিংডম’‑এর সাফল্য প্রমাণ করে, মানসম্পন্ন ডাব বা সাবটাইটেল থাকলে বাংলাদেশের বাজারেও পশ্চিমা ঐতিহাসিক সিরিজের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।”
ভবিষ্যৎ প্রবণতা
- স্থানীয় ওটিটি প্রতিযোগিতা : দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলো এখন ঐতিহাসিক বা লোকগাথা নির্ভর নিজস্ব কনটেন্ট তৈরির কথা ভাবছে।
- পণ্য বাজার : অনলাইন স্টোরে সিরিজ‑থিমযুক্ত টি‑শার্ট, পোস্টার ও মগ বিক্রি বাড়ছে, যা ‘অনুষঙ্গ বাজার’কে উজ্জীবিত করছে।
- অভিনয় কর্মশালা ও কসপ্লে : ঢাকায় একাধিক কসপ্লে ইভেন্টে ইতোমধ্যেই উথ্রেড বা ব্রিদা সেজে অংশ নিচ্ছেন ভক্তরা, যা সাংস্কৃতিক কার্নিভ্যালের রূপ নিচ্ছে।
উপসংহার
‘দ্য লাস্ট কিংডম’ বাংলাদেশের স্ট্রিমিং দর্শকদের কাছে শুধু আরেকটি বিদেশি সিরিজ নয়; এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বিনোদনের সেতুবন্ধ তৈরি করেছে। নেটফ্লিক্সের স্থানীয় গ্রাহক বৃদ্ধিতে সিরিজটির ভূমিকা স্পষ্ট, আর ভবিষ্যতে এমন আরও ঐতিহাসিক কনটেন্টের চাহিদা জোরালো হওয়ার ব্যাপারে বিশ্লেষকেরা একমত।