০৯:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মসলার বাজার: প্রয়োজন, উৎস ও মূল্যবৃদ্ধি

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • 44

 সারাক্ষণ রিপোর্ট

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা

বাংলাদেশি রান্নার স্বাদ, সুবাস ও রং নির্ভর করে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, গোলমরিচ, তেজপাতা‑সহ একাধিক মসলার উপর। ভর্তা‑ভাজি থেকে বিরিয়ানি—সবখানেই এগুলির ব্যবহার অপরিহার্য।

দৈনন্দিন চাহিদা ও পুষ্টিগত মূল্য

গড়ে প্রতি পরিবারে রান্নার প্রধান উপকরণগুলোর ২০‑২৫ শতাংশ খরচই মসলায়। অ্যান্টি‑অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি‑ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এগুলি স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও বাড়ায়।

অর্থনীতিতে অবদান

ঘরোয়া বাজারের আনুমানিক আয়তন ৫,০০০ কোটি টাকা, যার অন্তত এক‑তৃতীয়াংশ প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের দখলে।

কোথা থেকে আসে মসলা: দেশি উৎপাদন বনাম আমদানি

দেশি উৎপাদন

মরিচ, হলুদ, ধনিয়ার একটি অংশ দেশেই চাষ হয়। তবে উৎপাদন অপ্রতুল—ফলনে আবহাওয়ার ঝুঁকি ও কৃষিজমি সংকুচিত হওয়া প্রধান কারণ।

৯০শতাংশের বেশি নির্ভরতা আমদানির উপর

জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল‑জাবিত্রী প্রায় সম্পূর্ণই বিদেশ থেকে আসে। গবেষণা বলছে, মোট চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর ।

মূল সরবরাহ দেশ ও বন্দর

চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, গৌয়াতেমালা, শ্রীলংকা, মাদাগাস্কার ইত্যাদি শীর্ষ উৎস। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর আমদানির প্রধান গেটওয়ে; স্থলবন্দর দিয়ে আনুষ্ঠানিক আমদানি বন্ধের সুপারিশ করেছে এনএসআই ।

ঈদ‑উল‑আজহা সামনে রেখে মসলার মূল্যবৃদ্ধি  

বৈদেশিক মুদ্রা সংকট ও টাকার অবমূল্যায়ন

ডলার‑সংকটের কারণে এলসি খোলা ব্যয়বহুল হয়েছে; আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৫‑২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধু এক মাসেই ডলারের রেট বাড়ায় জিরার কেজি‑দর ৫৭০ টাকা থেকে ৮৫০‑১,০০০ টাকায় পৌঁছেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ও শুল্ক পরিবর্তন

ভারত ও ভিয়েতনাম‑মুখী রপ্তানি শুল্ক, মধ্যপ্রাচ্যের জাহাজভাড়া বৃদ্ধিও প্রভাব ফেলেছে।

ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত চাহিদা

কোরবানির মাংস সংরক্ষণ ও রান্নায় গরম মসলার চাহিদা দ্বিগুণ হয়, যা উপরোক্ত সংকটকে আরও তীব্র করে।

ঈদ উল আজহা সামনে রেখে বেশি  মসলা আসে কোন দেশ থেকে

  • ঈদ‑উল‑আজহা ও রমজানকে ঘিরে ‑এর মোট মসলার এলসি‑র ৭৫‑৮০ শতাংশই ভারতের সঙ্গে।
  • জিরা ও এলাচ—দুটি গরম মসলাই আমদানির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।
  • পেপার, লবঙ্গ, দারুচিনি ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট টন‑পর্যায়ের সরকারি তথ্য সীমিত; তবে ব্যবসায়ী সমিতির মতে এগুলির ৬০‑৭০শতাংশ‑ই ভারতীয় উৎস‑নির্ভর।

 মজুতদারি ও সীমান্তপথে পাচার

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে—ডিএনসিআরপি এরই মধ্যে অভিযান জোরদার করেছে। ব্যবসায়ী‑সমিতিও ‘সিন্ডিকেট’ থাকার অভিযোগ স্বীকার করেছে

বাজার স্থিতিতে সরকারের পদক্ষেপ

জেলা প্রশাসক ও সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি

সব ডিসি, বন্দর ও বাজার কমিটিকে মোবাইল টিম গঠন করে দামের তালিকা পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ।

এনএসআই‑এর সুপারিশ

  • পর্যাপ্ত মজুত ও দ্রুত আমদানি
  • প্রতি টনে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমিয়ে খরচ হ্রাস
  • স্থলবন্দর পরিহার করে কেবল সমুদ্রবন্দর ব্যবহার
  • পাইকারি‑খুচরো বাজারে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

দোকানে স্পষ্ট মূল্যতালিকা ও রসিদ বাধ্যতামূলক; অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি গুদাম সিলগালা।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

খাতুনগঞ্জ‑কর্মকর্তারা বলছেন, মজুত যথেষ্ট হলেও ডলার‑বিকটনের কারণে আমদানি খরচ ও ব্যাংক চার্জ বেড়ে গেছে, ফলে দাম কিছুটা চড়া থাকছেই।

উপসংহার

চাহিদা‑সাপ্লাই, আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার‑সংকট ও স্থানীয় সিন্ডিকেট—সব মিলেই বর্তমানে মসলার মূল্যবৃদ্ধি। সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে, তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য আমদানি উৎস বিধ করা, দেশি উৎপাদন বাড়ানো ও বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতিশীল রাখা জরুরি।

মসলার বাজার: প্রয়োজন, উৎস ও মূল্যবৃদ্ধি

০৩:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

 সারাক্ষণ রিপোর্ট

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা

বাংলাদেশি রান্নার স্বাদ, সুবাস ও রং নির্ভর করে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, গোলমরিচ, তেজপাতা‑সহ একাধিক মসলার উপর। ভর্তা‑ভাজি থেকে বিরিয়ানি—সবখানেই এগুলির ব্যবহার অপরিহার্য।

দৈনন্দিন চাহিদা ও পুষ্টিগত মূল্য

গড়ে প্রতি পরিবারে রান্নার প্রধান উপকরণগুলোর ২০‑২৫ শতাংশ খরচই মসলায়। অ্যান্টি‑অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি‑ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এগুলি স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও বাড়ায়।

অর্থনীতিতে অবদান

ঘরোয়া বাজারের আনুমানিক আয়তন ৫,০০০ কোটি টাকা, যার অন্তত এক‑তৃতীয়াংশ প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের দখলে।

কোথা থেকে আসে মসলা: দেশি উৎপাদন বনাম আমদানি

দেশি উৎপাদন

মরিচ, হলুদ, ধনিয়ার একটি অংশ দেশেই চাষ হয়। তবে উৎপাদন অপ্রতুল—ফলনে আবহাওয়ার ঝুঁকি ও কৃষিজমি সংকুচিত হওয়া প্রধান কারণ।

৯০শতাংশের বেশি নির্ভরতা আমদানির উপর

জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল‑জাবিত্রী প্রায় সম্পূর্ণই বিদেশ থেকে আসে। গবেষণা বলছে, মোট চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর ।

মূল সরবরাহ দেশ ও বন্দর

চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, গৌয়াতেমালা, শ্রীলংকা, মাদাগাস্কার ইত্যাদি শীর্ষ উৎস। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর আমদানির প্রধান গেটওয়ে; স্থলবন্দর দিয়ে আনুষ্ঠানিক আমদানি বন্ধের সুপারিশ করেছে এনএসআই ।

ঈদ‑উল‑আজহা সামনে রেখে মসলার মূল্যবৃদ্ধি  

বৈদেশিক মুদ্রা সংকট ও টাকার অবমূল্যায়ন

ডলার‑সংকটের কারণে এলসি খোলা ব্যয়বহুল হয়েছে; আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৫‑২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধু এক মাসেই ডলারের রেট বাড়ায় জিরার কেজি‑দর ৫৭০ টাকা থেকে ৮৫০‑১,০০০ টাকায় পৌঁছেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ও শুল্ক পরিবর্তন

ভারত ও ভিয়েতনাম‑মুখী রপ্তানি শুল্ক, মধ্যপ্রাচ্যের জাহাজভাড়া বৃদ্ধিও প্রভাব ফেলেছে।

ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত চাহিদা

কোরবানির মাংস সংরক্ষণ ও রান্নায় গরম মসলার চাহিদা দ্বিগুণ হয়, যা উপরোক্ত সংকটকে আরও তীব্র করে।

ঈদ উল আজহা সামনে রেখে বেশি  মসলা আসে কোন দেশ থেকে

  • ঈদ‑উল‑আজহা ও রমজানকে ঘিরে ‑এর মোট মসলার এলসি‑র ৭৫‑৮০ শতাংশই ভারতের সঙ্গে।
  • জিরা ও এলাচ—দুটি গরম মসলাই আমদানির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।
  • পেপার, লবঙ্গ, দারুচিনি ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট টন‑পর্যায়ের সরকারি তথ্য সীমিত; তবে ব্যবসায়ী সমিতির মতে এগুলির ৬০‑৭০শতাংশ‑ই ভারতীয় উৎস‑নির্ভর।

 মজুতদারি ও সীমান্তপথে পাচার

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে—ডিএনসিআরপি এরই মধ্যে অভিযান জোরদার করেছে। ব্যবসায়ী‑সমিতিও ‘সিন্ডিকেট’ থাকার অভিযোগ স্বীকার করেছে

বাজার স্থিতিতে সরকারের পদক্ষেপ

জেলা প্রশাসক ও সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি

সব ডিসি, বন্দর ও বাজার কমিটিকে মোবাইল টিম গঠন করে দামের তালিকা পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ।

এনএসআই‑এর সুপারিশ

  • পর্যাপ্ত মজুত ও দ্রুত আমদানি
  • প্রতি টনে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমিয়ে খরচ হ্রাস
  • স্থলবন্দর পরিহার করে কেবল সমুদ্রবন্দর ব্যবহার
  • পাইকারি‑খুচরো বাজারে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

দোকানে স্পষ্ট মূল্যতালিকা ও রসিদ বাধ্যতামূলক; অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি গুদাম সিলগালা।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

খাতুনগঞ্জ‑কর্মকর্তারা বলছেন, মজুত যথেষ্ট হলেও ডলার‑বিকটনের কারণে আমদানি খরচ ও ব্যাংক চার্জ বেড়ে গেছে, ফলে দাম কিছুটা চড়া থাকছেই।

উপসংহার

চাহিদা‑সাপ্লাই, আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার‑সংকট ও স্থানীয় সিন্ডিকেট—সব মিলেই বর্তমানে মসলার মূল্যবৃদ্ধি। সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে, তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য আমদানি উৎস বিধ করা, দেশি উৎপাদন বাড়ানো ও বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতিশীল রাখা জরুরি।