সারাক্ষণ রিপোর্ট
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা
বাংলাদেশি রান্নার স্বাদ, সুবাস ও রং নির্ভর করে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, গোলমরিচ, তেজপাতা‑সহ একাধিক মসলার উপর। ভর্তা‑ভাজি থেকে বিরিয়ানি—সবখানেই এগুলির ব্যবহার অপরিহার্য।
দৈনন্দিন চাহিদা ও পুষ্টিগত মূল্য
গড়ে প্রতি পরিবারে রান্নার প্রধান উপকরণগুলোর ২০‑২৫ শতাংশ খরচই মসলায়। অ্যান্টি‑অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি‑ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এগুলি স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও বাড়ায়।
অর্থনীতিতে অবদান
ঘরোয়া বাজারের আনুমানিক আয়তন ৫,০০০ কোটি টাকা, যার অন্তত এক‑তৃতীয়াংশ প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের দখলে।
কোথা থেকে আসে মসলা: দেশি উৎপাদন বনাম আমদানি
দেশি উৎপাদন
মরিচ, হলুদ, ধনিয়ার একটি অংশ দেশেই চাষ হয়। তবে উৎপাদন অপ্রতুল—ফলনে আবহাওয়ার ঝুঁকি ও কৃষিজমি সংকুচিত হওয়া প্রধান কারণ।
৯০ শতাংশের বেশি নির্ভরতা আমদানির উপর
জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল‑জাবিত্রী প্রায় সম্পূর্ণই বিদেশ থেকে আসে। গবেষণা বলছে, মোট চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর ।
মূল সরবরাহ দেশ ও বন্দর
চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, গৌয়াতেমালা, শ্রীলংকা, মাদাগাস্কার ইত্যাদি শীর্ষ উৎস। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর আমদানির প্রধান গেটওয়ে; স্থলবন্দর দিয়ে আনুষ্ঠানিক আমদানি বন্ধের সুপারিশ করেছে এনএসআই ।
ঈদ‑উল‑আজহা সামনে রেখে মসলার মূল্যবৃদ্ধি
বৈদেশিক মুদ্রা সংকট ও টাকার অবমূল্যায়ন
ডলার‑সংকটের কারণে এলসি খোলা ব্যয়বহুল হয়েছে; আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৫‑২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধু এক মাসেই ডলারের রেট বাড়ায় জিরার কেজি‑দর ৫৭০ টাকা থেকে ৮৫০‑১,০০০ টাকায় পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ও শুল্ক পরিবর্তন
ভারত ও ভিয়েতনাম‑মুখী রপ্তানি শুল্ক, মধ্যপ্রাচ্যের জাহাজভাড়া বৃদ্ধিও প্রভাব ফেলেছে।
ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত চাহিদা
কোরবানির মাংস সংরক্ষণ ও রান্নায় গরম মসলার চাহিদা দ্বিগুণ হয়, যা উপরোক্ত সংকটকে আরও তীব্র করে।
ঈদ উল আজহা সামনে রেখে বেশি মসলা আসে কোন দেশ থেকে
- ঈদ‑উল‑আজহা ও রমজানকে ঘিরে ‑এর মোট মসলার এলসি‑র ৭৫‑৮০ শতাংশই ভারতের সঙ্গে।
- জিরা ও এলাচ—দুটি গরম মসলাই আমদানির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।
- পেপার, লবঙ্গ, দারুচিনি ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট টন‑পর্যায়ের সরকারি তথ্য সীমিত; তবে ব্যবসায়ী সমিতির মতে এগুলির ৬০‑৭০ শতাংশ‑ই ভারতীয় উৎস‑নির্ভর।
মজুতদারি ও সীমান্তপথে পাচার
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে—ডিএনসিআরপি এরই মধ্যে অভিযান জোরদার করেছে। ব্যবসায়ী‑সমিতিও ‘সিন্ডিকেট’ থাকার অভিযোগ স্বীকার করেছে
বাজার স্থিতিতে সরকারের পদক্ষেপ
জেলা প্রশাসক ও সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি
সব ডিসি, বন্দর ও বাজার কমিটিকে মোবাইল টিম গঠন করে দামের তালিকা পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ।
এনএসআই‑এর সুপারিশ
- পর্যাপ্ত মজুত ও দ্রুত আমদানি
- প্রতি টনে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমিয়ে খরচ হ্রাস
- স্থলবন্দর পরিহার করে কেবল সমুদ্রবন্দর ব্যবহার
- পাইকারি‑খুচরো বাজারে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান
দোকানে স্পষ্ট মূল্যতালিকা ও রসিদ বাধ্যতামূলক; অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি গুদাম সিলগালা।
ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
খাতুনগঞ্জ‑কর্মকর্তারা বলছেন, মজুত যথেষ্ট হলেও ডলার‑বিকটনের কারণে আমদানি খরচ ও ব্যাংক চার্জ বেড়ে গেছে, ফলে দাম কিছুটা চড়া থাকছেই।
উপসংহার
চাহিদা‑সাপ্লাই, আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার‑সংকট ও স্থানীয় সিন্ডিকেট—সব মিলেই বর্তমানে মসলার মূল্যবৃদ্ধি। সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে, তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য আমদানি উৎস বিধ করা, দেশি উৎপাদন বাড়ানো ও বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতিশীল রাখা জরুরি।