০৯:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১ লাখ ডলার এইচ-১বি ভিসা ফি: সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে স্লোগানের আলো ও অন্ধকার : ইতিহাস মনে রাখে যে ধ্বনি বাংলাদেশে প্রতিমা ভাঙে বাতাসে, মাজার ভাঙে অজ্ঞাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি সফরে রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা কেন সঙ্গী ড্রোন হামলায় সুদানের মসজিদে নিহত ৭৮ জন সাইবার হামলায় ইউরোপে এয়ার ইন্ডিয়ার চেক-ইন ব্যাহত অনুপাতভিত্তিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে : মান্না’র সর্তকবানী রণক্ষেত্রে (পর্ব-১০৫) সাপ্তাহিক শেয়ারবাজার: সূচক ও লেনদেন কমেছে, বিনিয়োগকারীদের হতাশা বিজয়ে আস্থা থাকলে নির্বাচন ঠেকাতে চান কেন: জামায়াতকে সালাহউদ্দিনের প্রশ্ন

মসলার বাজার: প্রয়োজন, উৎস ও মূল্যবৃদ্ধি

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • 115

 সারাক্ষণ রিপোর্ট

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা

বাংলাদেশি রান্নার স্বাদ, সুবাস ও রং নির্ভর করে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, গোলমরিচ, তেজপাতা‑সহ একাধিক মসলার উপর। ভর্তা‑ভাজি থেকে বিরিয়ানি—সবখানেই এগুলির ব্যবহার অপরিহার্য।

দৈনন্দিন চাহিদা ও পুষ্টিগত মূল্য

গড়ে প্রতি পরিবারে রান্নার প্রধান উপকরণগুলোর ২০‑২৫ শতাংশ খরচই মসলায়। অ্যান্টি‑অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি‑ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এগুলি স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও বাড়ায়।

অর্থনীতিতে অবদান

ঘরোয়া বাজারের আনুমানিক আয়তন ৫,০০০ কোটি টাকা, যার অন্তত এক‑তৃতীয়াংশ প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের দখলে।

কোথা থেকে আসে মসলা: দেশি উৎপাদন বনাম আমদানি

দেশি উৎপাদন

মরিচ, হলুদ, ধনিয়ার একটি অংশ দেশেই চাষ হয়। তবে উৎপাদন অপ্রতুল—ফলনে আবহাওয়ার ঝুঁকি ও কৃষিজমি সংকুচিত হওয়া প্রধান কারণ।

৯০শতাংশের বেশি নির্ভরতা আমদানির উপর

জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল‑জাবিত্রী প্রায় সম্পূর্ণই বিদেশ থেকে আসে। গবেষণা বলছে, মোট চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর ।

মূল সরবরাহ দেশ ও বন্দর

চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, গৌয়াতেমালা, শ্রীলংকা, মাদাগাস্কার ইত্যাদি শীর্ষ উৎস। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর আমদানির প্রধান গেটওয়ে; স্থলবন্দর দিয়ে আনুষ্ঠানিক আমদানি বন্ধের সুপারিশ করেছে এনএসআই ।

ঈদ‑উল‑আজহা সামনে রেখে মসলার মূল্যবৃদ্ধি  

বৈদেশিক মুদ্রা সংকট ও টাকার অবমূল্যায়ন

ডলার‑সংকটের কারণে এলসি খোলা ব্যয়বহুল হয়েছে; আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৫‑২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধু এক মাসেই ডলারের রেট বাড়ায় জিরার কেজি‑দর ৫৭০ টাকা থেকে ৮৫০‑১,০০০ টাকায় পৌঁছেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ও শুল্ক পরিবর্তন

ভারত ও ভিয়েতনাম‑মুখী রপ্তানি শুল্ক, মধ্যপ্রাচ্যের জাহাজভাড়া বৃদ্ধিও প্রভাব ফেলেছে।

ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত চাহিদা

কোরবানির মাংস সংরক্ষণ ও রান্নায় গরম মসলার চাহিদা দ্বিগুণ হয়, যা উপরোক্ত সংকটকে আরও তীব্র করে।

ঈদ উল আজহা সামনে রেখে বেশি  মসলা আসে কোন দেশ থেকে

  • ঈদ‑উল‑আজহা ও রমজানকে ঘিরে ‑এর মোট মসলার এলসি‑র ৭৫‑৮০ শতাংশই ভারতের সঙ্গে।
  • জিরা ও এলাচ—দুটি গরম মসলাই আমদানির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।
  • পেপার, লবঙ্গ, দারুচিনি ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট টন‑পর্যায়ের সরকারি তথ্য সীমিত; তবে ব্যবসায়ী সমিতির মতে এগুলির ৬০‑৭০শতাংশ‑ই ভারতীয় উৎস‑নির্ভর।

 মজুতদারি ও সীমান্তপথে পাচার

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে—ডিএনসিআরপি এরই মধ্যে অভিযান জোরদার করেছে। ব্যবসায়ী‑সমিতিও ‘সিন্ডিকেট’ থাকার অভিযোগ স্বীকার করেছে

বাজার স্থিতিতে সরকারের পদক্ষেপ

জেলা প্রশাসক ও সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি

সব ডিসি, বন্দর ও বাজার কমিটিকে মোবাইল টিম গঠন করে দামের তালিকা পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ।

এনএসআই‑এর সুপারিশ

  • পর্যাপ্ত মজুত ও দ্রুত আমদানি
  • প্রতি টনে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমিয়ে খরচ হ্রাস
  • স্থলবন্দর পরিহার করে কেবল সমুদ্রবন্দর ব্যবহার
  • পাইকারি‑খুচরো বাজারে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

দোকানে স্পষ্ট মূল্যতালিকা ও রসিদ বাধ্যতামূলক; অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি গুদাম সিলগালা।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

খাতুনগঞ্জ‑কর্মকর্তারা বলছেন, মজুত যথেষ্ট হলেও ডলার‑বিকটনের কারণে আমদানি খরচ ও ব্যাংক চার্জ বেড়ে গেছে, ফলে দাম কিছুটা চড়া থাকছেই।

উপসংহার

চাহিদা‑সাপ্লাই, আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার‑সংকট ও স্থানীয় সিন্ডিকেট—সব মিলেই বর্তমানে মসলার মূল্যবৃদ্ধি। সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে, তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য আমদানি উৎস বিধ করা, দেশি উৎপাদন বাড়ানো ও বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতিশীল রাখা জরুরি।

১ লাখ ডলার এইচ-১বি ভিসা ফি: সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয়রা

মসলার বাজার: প্রয়োজন, উৎস ও মূল্যবৃদ্ধি

০৩:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

 সারাক্ষণ রিপোর্ট

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা

বাংলাদেশি রান্নার স্বাদ, সুবাস ও রং নির্ভর করে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, গোলমরিচ, তেজপাতা‑সহ একাধিক মসলার উপর। ভর্তা‑ভাজি থেকে বিরিয়ানি—সবখানেই এগুলির ব্যবহার অপরিহার্য।

দৈনন্দিন চাহিদা ও পুষ্টিগত মূল্য

গড়ে প্রতি পরিবারে রান্নার প্রধান উপকরণগুলোর ২০‑২৫ শতাংশ খরচই মসলায়। অ্যান্টি‑অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি‑ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এগুলি স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও বাড়ায়।

অর্থনীতিতে অবদান

ঘরোয়া বাজারের আনুমানিক আয়তন ৫,০০০ কোটি টাকা, যার অন্তত এক‑তৃতীয়াংশ প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের দখলে।

কোথা থেকে আসে মসলা: দেশি উৎপাদন বনাম আমদানি

দেশি উৎপাদন

মরিচ, হলুদ, ধনিয়ার একটি অংশ দেশেই চাষ হয়। তবে উৎপাদন অপ্রতুল—ফলনে আবহাওয়ার ঝুঁকি ও কৃষিজমি সংকুচিত হওয়া প্রধান কারণ।

৯০শতাংশের বেশি নির্ভরতা আমদানির উপর

জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল‑জাবিত্রী প্রায় সম্পূর্ণই বিদেশ থেকে আসে। গবেষণা বলছে, মোট চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর ।

মূল সরবরাহ দেশ ও বন্দর

চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, গৌয়াতেমালা, শ্রীলংকা, মাদাগাস্কার ইত্যাদি শীর্ষ উৎস। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর আমদানির প্রধান গেটওয়ে; স্থলবন্দর দিয়ে আনুষ্ঠানিক আমদানি বন্ধের সুপারিশ করেছে এনএসআই ।

ঈদ‑উল‑আজহা সামনে রেখে মসলার মূল্যবৃদ্ধি  

বৈদেশিক মুদ্রা সংকট ও টাকার অবমূল্যায়ন

ডলার‑সংকটের কারণে এলসি খোলা ব্যয়বহুল হয়েছে; আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৫‑২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধু এক মাসেই ডলারের রেট বাড়ায় জিরার কেজি‑দর ৫৭০ টাকা থেকে ৮৫০‑১,০০০ টাকায় পৌঁছেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ও শুল্ক পরিবর্তন

ভারত ও ভিয়েতনাম‑মুখী রপ্তানি শুল্ক, মধ্যপ্রাচ্যের জাহাজভাড়া বৃদ্ধিও প্রভাব ফেলেছে।

ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত চাহিদা

কোরবানির মাংস সংরক্ষণ ও রান্নায় গরম মসলার চাহিদা দ্বিগুণ হয়, যা উপরোক্ত সংকটকে আরও তীব্র করে।

ঈদ উল আজহা সামনে রেখে বেশি  মসলা আসে কোন দেশ থেকে

  • ঈদ‑উল‑আজহা ও রমজানকে ঘিরে ‑এর মোট মসলার এলসি‑র ৭৫‑৮০ শতাংশই ভারতের সঙ্গে।
  • জিরা ও এলাচ—দুটি গরম মসলাই আমদানির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।
  • পেপার, লবঙ্গ, দারুচিনি ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট টন‑পর্যায়ের সরকারি তথ্য সীমিত; তবে ব্যবসায়ী সমিতির মতে এগুলির ৬০‑৭০শতাংশ‑ই ভারতীয় উৎস‑নির্ভর।

 মজুতদারি ও সীমান্তপথে পাচার

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে—ডিএনসিআরপি এরই মধ্যে অভিযান জোরদার করেছে। ব্যবসায়ী‑সমিতিও ‘সিন্ডিকেট’ থাকার অভিযোগ স্বীকার করেছে

বাজার স্থিতিতে সরকারের পদক্ষেপ

জেলা প্রশাসক ও সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি

সব ডিসি, বন্দর ও বাজার কমিটিকে মোবাইল টিম গঠন করে দামের তালিকা পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ।

এনএসআই‑এর সুপারিশ

  • পর্যাপ্ত মজুত ও দ্রুত আমদানি
  • প্রতি টনে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমিয়ে খরচ হ্রাস
  • স্থলবন্দর পরিহার করে কেবল সমুদ্রবন্দর ব্যবহার
  • পাইকারি‑খুচরো বাজারে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

দোকানে স্পষ্ট মূল্যতালিকা ও রসিদ বাধ্যতামূলক; অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি গুদাম সিলগালা।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

খাতুনগঞ্জ‑কর্মকর্তারা বলছেন, মজুত যথেষ্ট হলেও ডলার‑বিকটনের কারণে আমদানি খরচ ও ব্যাংক চার্জ বেড়ে গেছে, ফলে দাম কিছুটা চড়া থাকছেই।

উপসংহার

চাহিদা‑সাপ্লাই, আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার‑সংকট ও স্থানীয় সিন্ডিকেট—সব মিলেই বর্তমানে মসলার মূল্যবৃদ্ধি। সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে, তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য আমদানি উৎস বিধ করা, দেশি উৎপাদন বাড়ানো ও বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতিশীল রাখা জরুরি।