সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত সপ্তাহের স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার জাতীয় পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) আবারও বড় জয় পেয়েছে। ৩৩৯টি পরিষদের মধ্যে ২৬৫টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা ডিসানায়েকের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী সরকার তার জনপ্রিয়তার ম্যান্ডেট আরও সুদৃঢ় করল। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ও সাধারণ নির্বাচনে অভূতপূর্ব জয়ের ধারাবাহিকতাই এতে প্রতিফলিত হয়েছে।
নির্বাচনী ফলাফল ও পরিসংখ্যান
• এনপিপি মোট ৪৫ লাখ ভোট পেয়ে প্রায় ৪৩.২৬ শতাংশ সমর্থন নিশ্চিত করেছে।
• সংসদে প্রধান বিরোধী দল সামাগি জনা বালাওয়েগায়া (এসজেবি) ২২ লাখ ভোটে ২১.৬৯ শতাংশ পেয়েছে।
• ২০২৪‑এর প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের তুলনায় এবার ডিসানায়েকের ভোটশেয়ার সামান্য বেড়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসার ভোটশেয়ার কমেছে।

ভোটার উপস্থিতির হ্রাস: হুঁশিয়ারি সংকেত?
সারা দেশে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৬১ শতাংশ, নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের ৬৯ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তখন এনপিপি ৬৮ লাখ ভোট পেলেও এবার ৪৫ লাখে নেমেছে—প্রায় ২৩ লাখের ঘাটতি। কলম্বো সিটি কাউন্সিলেও দলটি ৪৮টি আসন পেয়ে শীর্ষে থাকলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এটি রাজধানীতে সমর্থনের সূক্ষ্ম লোপ নির্দেশ করে।
জনগণের উচ্চ প্রত্যাশা ও শাসনচ্যালেঞ্জ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই বছর আগের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর ‘দুর্নীতিবিরোধী’ ইমেজে এনপিপি ক্ষমতায় এলেও গত ছয় মাসে আর্থিক সহায়তা বা জনমুখী পদক্ষেপে দৃশ্যমান সাফল্য দেখাতে পারেনি। নবাগত মন্ত্রিসভা আদর্শগত টানাপোড়েন সামলে সংস্কারপন্থী কর্মসূচি চালাতে গতি পাচ্ছে না। তবু কলম্বো‑ভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রন্টিয়ার রিসার্চের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ থিলিনা পাণ্ডুয়াওয়ালার মত, “বিকল্পের অভাবে শহরতলির মধ্যবিত্ত সহ সাধারণ ভোটাররা এখনই আশা ছাড়ছেন না; কম টার্নআউট ছিল উদাসীনতা, সরকারের বিরুদ্ধে ভোট নয়।”

বিরোধী দলগুলোর বিপর্যয়
• ঐতিহ্যবাহী ডানপন্থী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) মাত্র ৪.৮৯ লাখ ভোটে ৪.৬৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ—ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল ফল।
• রাজপক্ষ পরিবারপন্থী শ্রীলঙ্কা পোদুজনা পেরামুনা (এসএলপিপি) ৯.৫৪ লাখ ভোটে ৯.১৭ শতাংশ পেয়ে সামান্য ঘুরে দাঁড়ালেও পুরনো দাপটের ধারে‑কাছেও যেতে পারেনি।
কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক জয়দেব উয়াঙ্গোডা বলছেন, “ইউএনপি ও এসএলপিপি এখনও আস্থা পুনর্গঠন করতে পারেনি, তাদের পুরনো ঘাঁটিতেও ফিরে যাওয়া কঠিন।”

সামনের পথ
কূটনৈতিক মহলের ধারণা, শুধুমাত্র স্বচ্ছ প্রশাসনের কথা বলে সরকার বেশিদিন এগোতে পারবে না; নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত ফল দেখাতে হবে। সফল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বাস্তব সংস্কারই এনপিপির জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চাবিকাঠি হবে। অন্যথায় নিম্নমুখী ভোটার উপস্থিতি ভবিষ্যতে বড় ধাক্কা আনতে পারে।
স্থানীয় পর্যায়ে জয় সত্ত্বেও টার্নআউটের পতন ও ভোটের পরিমাণ কমে যাওয়া ডিসানায়েক সরকারকে বাস্তবায়িত সফলতা দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করার তাগিদ দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কার রাজনীতির নতুন অধ্যায়ে এনপিপির জন্য সেটাই বড় পরীক্ষা।
Sarakhon Report 



















