সারাক্ষণ ডেস্ক
সমকালের একটি শিরোনাম “সাত মাসে ২২০ জেলেকে অপহরণ আরাকান আর্মির”
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে গত সাত মাসে অন্তত ২২০ জেলেকে অপহরণ করেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ধরে নিয়ে যায় ১৫১ জনকে। এর মধ্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহায়তায় কয়েক দফায় তাদের ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, অপহৃত কয়েক জেলের খোঁজ এখনও পাচ্ছে না পরিবার। সর্বশেষ ১২ মে নাফ নদে আরাকান আর্মির হামলায় দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় তিন জেলে অপহরণের শিকার হন। ৮ এপ্রিল চারটি ট্রলারসহ ২৩ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
আরাকান আর্মির জিম্মিদশা থেকে ফেরত এসেছেন এমন চারজনের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তাদের মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মো. আইয়ুব জানান, ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমা হয়ে টেকনাফের জেটিঘাটে ফিরছিল তাদের ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মাছ ছিল ট্রলারে। হঠাৎ সাত ব্যক্তি এসে অস্ত্রের মুখে ট্রলার আটকায়। আইয়ুব যে ট্রলার ছিলেন, সেখানে মাঝিসহ ৯ বাংলাদেশি জেলে ছিলেন। ট্রলারে উঠে অস্ত্রধারীরা সবার হাত ও চোখ বেঁধে ফেলে। রাত ৮টার দিকে মিয়ানমারের মংডুতে নিয়ে হাত ও চোখ খুলে দেয়। পরে তাদের আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আইয়ুব আরও জানান, সেখানে একটি রুমে ৩১ বাংলাদেশি ছিলেন। সব মিলিয়ে ২০০ থেকে আড়াইশ বন্দি। দুই বেলা ভাত দেওয়া হতো। ভাতের সঙ্গে কলাপাতায় কাঁঠালের এঁচোড় সরবরাহ করত। কোনো হলুদ, মরিচ বা লবণ ছিল না। লবণ চাইলে মারধর করা হতো।
আইয়ুবের দাবি, আরাকান আর্মির সদস্যরা বলত, বাংলাদেশ থেকে চাল, ডাল, হলুদ, মরিচ, লবণ, পেঁয়াজসহ খাবার পাঠালে বাংলাদেশিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। রাতে তাদের কক্ষে কোনো আলো থাকত না বলে জানান তিনি। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ৪১ দিন কাটিয়েছেন তারা। ট্রলার মালিক ফয়সালের যে ট্রলার আরাকান আর্মি নিয়ে গিয়েছিল, সেটি তারা নিয়ে আসেন বলেও জানান।
আজকের পত্রিকার একটি শিরোনাম “ভারতে পণ্য রপ্তানিতে অনিশ্চয়তা”
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, খাদ্য, প্লাস্টিক, তুলাসহ ছয় ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। এতে বিপাকে পড়েছেন রপ্তানিকারকেরা। এমন সিদ্ধান্তে প্রতিবেশী দেশটিতে এসব পণ্য রপ্তানিতে ভাটা পড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিবিদেরা একে দেখছেন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের জন্য বড় বাধা হিসেবে।
রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থলবন্দরের দুয়ার বন্ধ হওয়ায় এখন সমুদ্রপথে এই ছয় ধরনের পণ্য রপ্তানি করতে হবে। এতে খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি পণ্য পৌঁছে দিতে সময়ও লাগবে বেশি। ফলে কিছু ক্ষেত্রে রপ্তানি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
ভারত স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বন্দরগুলোতে আটকা পড়েছে রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক। গতকাল রোববার যশোরের বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরে আটকে দেওয়া হয় পোশাকবাহী ট্রাকের চালান। এ ছাড়া দেশের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএলের ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাক বুড়িমারী বন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে ভারতের বিধিনিষেধ কার্যকর হয়ে গেছে। গতকাল আমাদের পণ্যের ১৭টি ট্রাক বুড়িমারী সীমান্তে আটকে দিয়েছে ভারত। এগুলো বুড়িমারী সীমান্ত পার হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা ছিল।’
বণিকবার্তার একটি শিরোনাম “বিমানবন্দরে গ্রেফতার নুসরাত ফারিয়া ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ”
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল সকালে থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে তাকে আটক করা হয়। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম নুসরাত ফারিয়াকে আটকের তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ ফারিয়াকে আটক করে জানিয়ে ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হক বলেন, ‘কিছুদিন আগে আদালতের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’ উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন একটি ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় ফারিয়ার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে তাকে আসামি করা হয়।
গ্রেফতারের পর নুসরাত ফারিয়াকে প্রথমে নেয়া হয় ভাটারা থানায়। পরে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হয়। গতকাল রাতে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার তালেবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পেনাল কোডের ৩২৬ ধারার একটি মামলায় নুসরাত ফারিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। এ ধারাটি মূলত গুরুতর জখমের অপরাধ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার “আশিকী” চলচ্চিত্র দিয়ে নুসরাত ফারিয়ার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। এর পর থেকে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। এছাড়া মডেলিং ও সঞ্চালনায়ও সক্রিয় তিনি। গত ঈদুল ফিতরেও তার অভিনীত জ্বীন ৩ সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। সিনেমার “কন্যা” গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর দেশের সিনেমা হলগুলোয় মুক্তি পায় শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর সিনেমা “মুজিব: একটি জাতির রূপকার”। ভারতের খ্যাতিমান পরিচালক শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া। এ চলচ্চিত্রে তিনি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেন।’
মানবজমিনের একটি শিরোনাম “সরকারি নথিতেই হাজার রাউন্ড প্রাণঘাতী গুলির তথ্য”
জুলাই-আগস্টে রাজধানীতে চলা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে প্রাণঘাতী গুলি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আন্দোলনের শুরু থেকেই প্রাণঘাতী বুলেটের ব্যবহার হয়েছে বলে সরকারি তথ্যে উঠে এসেছে। ঢাকার কয়েকটি স্থানে সাতজন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে অন্তত ১২৪০টি প্রাণঘাতী গুলির তথ্য মিলেছে সরকারি নথিতে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে গত পহেলা জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। এসব ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপকহারে দমনপীড়ন চালায়। মানবজমিনের হাতে আসা নথি ঘেঁটে দেখা যায়, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় অন্তত ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেটের সরাসরি নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে ১২৪০ রাউন্ড ৭.৬২ ক্যালিবার চায়না রাইফেল দিয়ে গুলি ছোড়েন বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের বিচার শাখা থেকে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো একটি গোপন প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আন্দোলন চলাকালে বিজিবি’র বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্য ও অফিসারদের গুলিতে ঢাকার অন্তত ৩টি স্পটে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ও অঙ্গহানি ঘটে। অধিকাংশই এইম অন ফায়ার লক্ষ্যবস্তু টার্গেট করে গুলি করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চায়না রাইফেলের গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনো অনেকে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কেউ কেউ উন্নত চিকিৎসা নিতে বিদেশে গেছেন। গুলিতে অনেকে হাত-পা হারিয়েছেন। প্রতিবেদনটি ঘেঁটে আরও দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ১৪ই জুলাই শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সরকারের একাধিক অধিদপ্তর, পরিদপ্তরে কাজ করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সরকারের চাহিদামতো দ্রুত সময়ে আন্দোলন দমন করতে রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, মিরপুর, শাহবাগ ও কাওরান বাজার এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে কেউ কেউ তার কমান্ডিংয়ে থাকা বিজিবি ও আনসার সদস্যদের ছাত্র-জনতার ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র এসএমজি দিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।
জুলাই আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীর পরে সবচেয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে রামপুরা বিটিভি ভবন ও আফতাবনগর এলাকায়। ১৮ই জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত এই এক স্পটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শতাধিক মানুষ মারা যান। এই স্পটে গুলি চালানোর নির্দেশদাতাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ। তার নির্দেশে আনসার ব্যাটালিয়নের একজন সহকারী পরিচালক নিজের নামে ইস্যুকৃত এসএমজি রাইফেল দিয়ে ছাত্রদের লক্ষ্য করে ৫৪ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এ ছাড়া সেদিন বিজিবি’র একাধিক সদস্য ছাত্র-জনতার ওপর শত শত রাউন্ড গুলি ছোড়েন এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন সুবেদার ৯ রাউন্ড, একজন হাবিলদার ৯০ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। পরদিন ১৯শে জুলাই দুপুরে রামপুরা এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এদিন সকাল ৮টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তৎকালীন ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনারের নির্দেশে ওই এলাকায় ম্যাসাকার চালানো হয়। এই ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে এসএমজি ৭.৬২ ক্যালিবার চায়না রাইফেল দিয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হয়। এর মধ্যে একজন সুবেদার ২৬ রাউন্ড, একজন নায়েক সুবেদার ৮ রাউন্ড, একজন হাবিলদার ১০ রাউন্ড, অন্য একজন হাবিলদার ৩ রাউন্ড, অন্য একজন ৫ রাউন্ড, একজন নায়েক ২৬ রাউন্ড, আরেকজন নায়েক ১৯ রাউন্ড, আরেক নায়েক ৮৩ রাউন্ড, একজন ল্যান্স নায়েক ১৩ রাউন্ড, একজন হাবিলদার ১৫ রাউন্ড, একজন নায়েক ৬৬ রাউন্ড গুলি ছোড়েন।