০৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পরিচ্ছন্ন জ্বালানির স্বপ্নের পিছনে

  • Sarakhon Report
  • ০৫:২৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • 111

সারাক্ষণ রিপোর্ট

চীন এখন বিশ্বব্যাপী পরিচ্ছন্ন-জ্বালানি প্রযুক্তির প্রধান শক্তি হলেও, ভারতও তার সঙ্গে পাল্লা গড়ে তুলতে কঠোর চেষ্টা করছে। ১.৪ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটানো ছাড়াও, নতুন বাজারে চীনভিত্তিক সরবরাহ চেইন থেকে বাঁচতে ভারতের উদ্যম বাড়ছে।

সরকারী প্রণোদনা ও সীমা-বদ্ধি

  • স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহ: সৌর সেল ও ব্যাটারি তৈরিতে সাশ্রয়ী ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
  • বিদেশি পণ্যের নিয়ন্ত্রণ: বড় পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই বিদেশি পণ্য আমদানি করা যাবে।
  • বড় প্রকল্পের শর্ত: এই দশকের শেষে ২৭ মিলিয়ন পরিবারকে ছাদের সৌর উপকরণ দিতে হলে সমগ্র প্যানেল দেশেই তৈরি হতে হবে।

অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণ

  • চীনের চ্যালেঞ্জ: পার্শ্ববর্তী শক্তি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে, বিশেষ করে সীমানা বিবাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে।
  • কর্মসংস্থান সৃষ্টি: নতুন কারখানা গড়ে ভালো বেতনের চাকরি দেওয়ার সুযোগ।
  • দামের দ্বন্দ্ব: চীনের তুলনায় ভারতে উৎপাদন খরচ বেশি, তবে ‘জ্বালানি স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করতে ব্যয় করাই স্মারক সিদ্ধান্ত।

সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা

  • সিলিকন নিয়ন্ত্রণ: সৌর প্যানেলের মূল উপাদান পলিসিলিকনের ৯০%–এর বেশি চীনের দখলে। ফলে, ভারতের প্যানেল কারখানাও প্রায়শই চীনের সেল এবং সিলিকন ওয়েফার আমদানি করে।
  • ব্যাটারি শিল্পের অগ্রগতি দমনে বাঁধা: লিথিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ প্রক্রিয়াকরণে চীনের আধিপত্য, যাতে ভারতীয় ব্যাটারি নির্মাতারা লক্ষ্যমাত্রা মিস করেছে।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বৈদেশিক রফতানি

  • অগ্রগতির এক দৃষ্টান্ত: গত পাঁচ বছরে ভারতের বায়ু ও সৌর ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, এখন বিশ্বে তৃতীয়।
  • ৫০০ গিগাওয়াট লক্ষ্য: ২০৩০ সালের মধ্যে নন-ফসিল জ্বালানি গ্রিডে যুক্ত করার ঘোষণা।
  • আমেরিকা বাজারে সুযোগ: গত বছর রপ্তানির অর্ধেক সৌর মডিউল গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির ফলে অজানা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

শ্রমবাজারে নতুন সম্ভাবনা

  • দুই তৃতীয়াংশ ভারতীয় ৩৫ বছরের নিচে; কৃষিভিত্তিক কাজের পরিমাণ বেশি হলেও, শিল্পখাতে দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৩% নেই।
  • তামিলনাড়ু উদাহরণ: শাস্ত্রীভূমি ও ভর্তুকি দিয়ে সোলার-প্যানেল, বায়ু-চাপাতি এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি কারখানা আকর্ষণ করেছে।
  • মেয়ে-মজুরদের অংশীদারিত্ব: উচ্চশিক্ষিত তরুণী শ্রমিকদের নজির—টাটা পাওয়ার ফ্যাক্টরিতে প্রায় ২ হাজার মহিলা কাজ করছেন।

ফ্যাক্টরির এক দিন

  • রাতভর শিফটে কাজ শেষে ভোরে বাসে চড়ে সংসারে ফিরছে অমলা ও বর্ষা।
  • কারখানার অটোমেশন ব্যবস্থা, মনিটরিং এবং ক্ষুদ্র কাজের জন্য মানুষের দরকার পড়ে।
  • এই চাকরি অনেকের জন্য সংসার-পরিকল্পনা সাময়িক রূপ দেয়; কেউ স্নাতক পড়ার টাকা সঞ্চয় করছে, কেউ বিয়ের সোনা কেনার বাজেট তৈরি করছে।

বৈশ্বিক সহযোগিতা

  • যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ: আইডিএফসি ৪২৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়েছে, আমেরিকান প্রথম-সোলার কোম্পানিও চেন্নাইয়ের নিকটে কারখানা খুলেছে।
  • সপ্লাই চেইন বৈচিত্র্য: করোনা মহামারীতে চীনভিত্তিক সরবরাহ বিঘ্নিত হলে স্পষ্ট হয়েছিল এক বা দু’দেশ নির্ভর করাপথ অসম্ভব।

রফতানি বনাম অভ্যন্তরীণ বাজার

  • রফতানি রোমাঞ্চ: ওয়ারী এনার্জিজ বিডি সংস্থা হিউস্টনে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে কারখানা খুলেছে, রপ্তানি ২৩ গুণ বেড়েছে।
  • ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি ও অন্যান্য দেশের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে ভারত চীনকে বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারছে কিনা।

ভারতের পরিচ্ছন্ন-জ্বালানি বক্তৃতা শুধুমাত্র সমস্যার মোকাবিলাই নয়, বরং সুযোগের খোঁজও। অভ্যন্তরীণ চাহিদা, সরকারী প্রণোদনা এবং বৈশ্বিক বাজারের ঢেউ—এই সমস্তকে পাথেয় করে দেশটি দ্রুত এগোচ্ছে, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক নেতৃত্বপ্রাপ্তি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্তি জোগাচ্ছে।

 

 

 

পরিচ্ছন্ন জ্বালানির স্বপ্নের পিছনে

০৫:২৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

চীন এখন বিশ্বব্যাপী পরিচ্ছন্ন-জ্বালানি প্রযুক্তির প্রধান শক্তি হলেও, ভারতও তার সঙ্গে পাল্লা গড়ে তুলতে কঠোর চেষ্টা করছে। ১.৪ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটানো ছাড়াও, নতুন বাজারে চীনভিত্তিক সরবরাহ চেইন থেকে বাঁচতে ভারতের উদ্যম বাড়ছে।

সরকারী প্রণোদনা ও সীমা-বদ্ধি

  • স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহ: সৌর সেল ও ব্যাটারি তৈরিতে সাশ্রয়ী ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
  • বিদেশি পণ্যের নিয়ন্ত্রণ: বড় পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই বিদেশি পণ্য আমদানি করা যাবে।
  • বড় প্রকল্পের শর্ত: এই দশকের শেষে ২৭ মিলিয়ন পরিবারকে ছাদের সৌর উপকরণ দিতে হলে সমগ্র প্যানেল দেশেই তৈরি হতে হবে।

অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণ

  • চীনের চ্যালেঞ্জ: পার্শ্ববর্তী শক্তি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে, বিশেষ করে সীমানা বিবাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে।
  • কর্মসংস্থান সৃষ্টি: নতুন কারখানা গড়ে ভালো বেতনের চাকরি দেওয়ার সুযোগ।
  • দামের দ্বন্দ্ব: চীনের তুলনায় ভারতে উৎপাদন খরচ বেশি, তবে ‘জ্বালানি স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করতে ব্যয় করাই স্মারক সিদ্ধান্ত।

সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা

  • সিলিকন নিয়ন্ত্রণ: সৌর প্যানেলের মূল উপাদান পলিসিলিকনের ৯০%–এর বেশি চীনের দখলে। ফলে, ভারতের প্যানেল কারখানাও প্রায়শই চীনের সেল এবং সিলিকন ওয়েফার আমদানি করে।
  • ব্যাটারি শিল্পের অগ্রগতি দমনে বাঁধা: লিথিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ প্রক্রিয়াকরণে চীনের আধিপত্য, যাতে ভারতীয় ব্যাটারি নির্মাতারা লক্ষ্যমাত্রা মিস করেছে।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বৈদেশিক রফতানি

  • অগ্রগতির এক দৃষ্টান্ত: গত পাঁচ বছরে ভারতের বায়ু ও সৌর ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, এখন বিশ্বে তৃতীয়।
  • ৫০০ গিগাওয়াট লক্ষ্য: ২০৩০ সালের মধ্যে নন-ফসিল জ্বালানি গ্রিডে যুক্ত করার ঘোষণা।
  • আমেরিকা বাজারে সুযোগ: গত বছর রপ্তানির অর্ধেক সৌর মডিউল গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির ফলে অজানা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

শ্রমবাজারে নতুন সম্ভাবনা

  • দুই তৃতীয়াংশ ভারতীয় ৩৫ বছরের নিচে; কৃষিভিত্তিক কাজের পরিমাণ বেশি হলেও, শিল্পখাতে দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৩% নেই।
  • তামিলনাড়ু উদাহরণ: শাস্ত্রীভূমি ও ভর্তুকি দিয়ে সোলার-প্যানেল, বায়ু-চাপাতি এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি কারখানা আকর্ষণ করেছে।
  • মেয়ে-মজুরদের অংশীদারিত্ব: উচ্চশিক্ষিত তরুণী শ্রমিকদের নজির—টাটা পাওয়ার ফ্যাক্টরিতে প্রায় ২ হাজার মহিলা কাজ করছেন।

ফ্যাক্টরির এক দিন

  • রাতভর শিফটে কাজ শেষে ভোরে বাসে চড়ে সংসারে ফিরছে অমলা ও বর্ষা।
  • কারখানার অটোমেশন ব্যবস্থা, মনিটরিং এবং ক্ষুদ্র কাজের জন্য মানুষের দরকার পড়ে।
  • এই চাকরি অনেকের জন্য সংসার-পরিকল্পনা সাময়িক রূপ দেয়; কেউ স্নাতক পড়ার টাকা সঞ্চয় করছে, কেউ বিয়ের সোনা কেনার বাজেট তৈরি করছে।

বৈশ্বিক সহযোগিতা

  • যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ: আইডিএফসি ৪২৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়েছে, আমেরিকান প্রথম-সোলার কোম্পানিও চেন্নাইয়ের নিকটে কারখানা খুলেছে।
  • সপ্লাই চেইন বৈচিত্র্য: করোনা মহামারীতে চীনভিত্তিক সরবরাহ বিঘ্নিত হলে স্পষ্ট হয়েছিল এক বা দু’দেশ নির্ভর করাপথ অসম্ভব।

রফতানি বনাম অভ্যন্তরীণ বাজার

  • রফতানি রোমাঞ্চ: ওয়ারী এনার্জিজ বিডি সংস্থা হিউস্টনে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে কারখানা খুলেছে, রপ্তানি ২৩ গুণ বেড়েছে।
  • ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি ও অন্যান্য দেশের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে ভারত চীনকে বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারছে কিনা।

ভারতের পরিচ্ছন্ন-জ্বালানি বক্তৃতা শুধুমাত্র সমস্যার মোকাবিলাই নয়, বরং সুযোগের খোঁজও। অভ্যন্তরীণ চাহিদা, সরকারী প্রণোদনা এবং বৈশ্বিক বাজারের ঢেউ—এই সমস্তকে পাথেয় করে দেশটি দ্রুত এগোচ্ছে, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক নেতৃত্বপ্রাপ্তি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্তি জোগাচ্ছে।