০৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

ভাঙা ইট থেকে ভাঙা রিকশায়: রাহিমের শহুরে যুদ্ধ (পর্ব-২)

  • Sarakhon Report
  • ০৬:১৭:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • 74

সারাক্ষণ রিপোর্ট 

একদিন ছিলেন রাজমিস্ত্রি

৪২ বছর বয়সী রাহিম শেখ এখন গাবতলির এক রিকশাচালক। অথচ ১০ বছর আগেও তিনি ছিলেন এক নির্মাণ প্রকল্পে মিস্ত্রির হেলপার। ঢাকার উত্তরা থেকে শুরু করে মিরপুর—সব বড় বড় ভবনে হাতের ছোঁয়া আছে তাঁর।

ইট-বালু টানতামবাঁশে উঠে প্লাস্টার দিতাম। দিনে ৪৫০ টাকা পেতাম। কিন্তু একদিন ছাদ থেকে পড়ে কোমর চোটে গেল।

এরপর শুরু হয় অন্য যুদ্ধ—পঙ্গু শরীর নিয়ে নতুন পেশার খোঁজ। কাজ পেলেন না, খাবার জুটছিল না। অবশেষে ২০১৭ সালে শুরু করলেন রিকশা চালানো।

ভাঙা শরীরপুরনো রিকশা

রাহিমের রিকশা ভাড়া করা। পুরনো, ছেঁড়া ছাদ, ব্যাকগিয়ারে সমস্যা। তবুও চালান—কারণ বিকল্প কিছু নেই।

এই রিকশা দিনে ২০০ টাকা ভাড়া। তারপর ব্রেক বারবার নষ্ট হয়নিজের টাকা দিয়েই ঠিক করাই। গ্যারেজে বললে কয়, ‘ভাড়া তো দিছস না বাড়াইয়াসারাই দিমু ক্যান?’”

শরীরও আগের মতো নেই। কোমর ব্যথা, বাম পায়ে ঝাঁকুনি লাগলে অসহ্য লাগে। কিন্তু বিশ্রাম মানেই না খেয়ে থাকা।

স্ত্রীর ফিরে যাওয়া

দুজনের সংসার ছিল। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার খরচ, অভাব, অনিশ্চয়তা—সব মিলে একদিন স্ত্রী চলে গেলেন।

বলে গেল, ‘তুই এখন মানুষ নাবোঝা। আমি বাঁচতে চাই।’ কাঁদিনি সেদিনশুধু ভেবেছিলামরিকশা চালিয়ে মরে যাবো নাবাঁচবো।

আজও তিনি একা। থাকেন গাবতলির এক পোড়া ভবনের পাশের টিনের ছাপরায়, আরও ৬ রিকশাচালকের সঙ্গে।

আয় আর খরচের অসম লড়াই

  • গড়ে আয়: দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা
  • রিকশা ভাড়া: ২০০  টাকা
  • খাওয়া-দাওয়া: ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা
  • রিকশার রক্ষণাবেক্ষণ: মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা

একদিন শুধু খই-চানাচুর খেয়েছি। ভাবছিলামরাইতে কী খাবো। পরে এক যাত্রী ৫০ টাকা বেশি দিলবাঁচলাম।

ভাঙা ইট থেকে ভাঙা রিকশায়: রাহিমের শহুরে যুদ্ধ (পর্ব-২)

০৬:১৭:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট 

একদিন ছিলেন রাজমিস্ত্রি

৪২ বছর বয়সী রাহিম শেখ এখন গাবতলির এক রিকশাচালক। অথচ ১০ বছর আগেও তিনি ছিলেন এক নির্মাণ প্রকল্পে মিস্ত্রির হেলপার। ঢাকার উত্তরা থেকে শুরু করে মিরপুর—সব বড় বড় ভবনে হাতের ছোঁয়া আছে তাঁর।

ইট-বালু টানতামবাঁশে উঠে প্লাস্টার দিতাম। দিনে ৪৫০ টাকা পেতাম। কিন্তু একদিন ছাদ থেকে পড়ে কোমর চোটে গেল।

এরপর শুরু হয় অন্য যুদ্ধ—পঙ্গু শরীর নিয়ে নতুন পেশার খোঁজ। কাজ পেলেন না, খাবার জুটছিল না। অবশেষে ২০১৭ সালে শুরু করলেন রিকশা চালানো।

ভাঙা শরীরপুরনো রিকশা

রাহিমের রিকশা ভাড়া করা। পুরনো, ছেঁড়া ছাদ, ব্যাকগিয়ারে সমস্যা। তবুও চালান—কারণ বিকল্প কিছু নেই।

এই রিকশা দিনে ২০০ টাকা ভাড়া। তারপর ব্রেক বারবার নষ্ট হয়নিজের টাকা দিয়েই ঠিক করাই। গ্যারেজে বললে কয়, ‘ভাড়া তো দিছস না বাড়াইয়াসারাই দিমু ক্যান?’”

শরীরও আগের মতো নেই। কোমর ব্যথা, বাম পায়ে ঝাঁকুনি লাগলে অসহ্য লাগে। কিন্তু বিশ্রাম মানেই না খেয়ে থাকা।

স্ত্রীর ফিরে যাওয়া

দুজনের সংসার ছিল। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার খরচ, অভাব, অনিশ্চয়তা—সব মিলে একদিন স্ত্রী চলে গেলেন।

বলে গেল, ‘তুই এখন মানুষ নাবোঝা। আমি বাঁচতে চাই।’ কাঁদিনি সেদিনশুধু ভেবেছিলামরিকশা চালিয়ে মরে যাবো নাবাঁচবো।

আজও তিনি একা। থাকেন গাবতলির এক পোড়া ভবনের পাশের টিনের ছাপরায়, আরও ৬ রিকশাচালকের সঙ্গে।

আয় আর খরচের অসম লড়াই

  • গড়ে আয়: দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা
  • রিকশা ভাড়া: ২০০  টাকা
  • খাওয়া-দাওয়া: ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা
  • রিকশার রক্ষণাবেক্ষণ: মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা

একদিন শুধু খই-চানাচুর খেয়েছি। ভাবছিলামরাইতে কী খাবো। পরে এক যাত্রী ৫০ টাকা বেশি দিলবাঁচলাম।