১১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

গঙ্গাচড়ার  ঘটনা ধর্মীয় নয়, উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক ও লুটপাট

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে যে হামলার ঘটনা ঘটেছেসেটা নতুন কিছু নয়। নিয়মিত বিরতিতে দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটে। বড় একটি ক্ষত তৈরি হওয়ার পর সাময়িক মলম লাগিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক বলে দেওয়ার একটা সরকারি রীতি গড়ে উঠেছে। গঙ্গাচড়ার এক ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘সরকারের লোকজন আজ ক্যা আসি বাড়িঘর ভালো করি দেয় চোল। দলবল নিয়া আসি হামার যে গরু ছাগল হাঁস মুরগি টাকা পয়সা সোনাদানা লুট করি নিয়া গেলইতার কী হইবেখাবার জন্য পাঁচদশ কেজি করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাউল দিছে। এই চাউল দিয়াই বা কী হইবএই ১০ কেজি চাউল নাহয় ১০দিন খামোএরপরে…?’—২৯জুলাইমঙ্গলবার সকালে ভাঙা রান্নার চুলা মেরামতের সময় আক্ষেপ করে এসব কথা বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লির কণিকা রানী(৪৮)। তিনি আরও জানানতাঁর বিবাহিত মেয়ের ঘরে রেখে যাওয়া ১লাখ টাকা এবং রাজমিস্ত্রি ছেলের জমানো ২০হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।

গত শনিবার ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি ইউনিয়নে এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই একদল মানুষ উত্তেজিত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমে ভুল করে অন্যজনের বাড়ি আক্রমণ করেপরে সেই ভুল সংশোধন’ করতে গিয়ে আবার পরিকল্পিত আক্রমণ চালায় হিন্দুপল্লিতে। ঘরবাড়ি ভাঙচুরসম্পদ লুটসহাবস্থানের বুনন ছিঁড়ে ফেলাসবকিছু ঘটে পুলিশের সামনেই। এক পুলিশ সদস্য আহত হলেও অনেকে এখনো বিশ্বাস করে না যে পুলিশ তাদের পক্ষে আছেকারণ ঘটনার দিন থেকেই তারা দেখেছেরাষ্ট্র থেকেও বড় হয় উন্মত্ততাসংখ্যাগরিষ্ঠের দম্ভ আর রাজনৈতিক সুবিধাবাদ।

 

ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৮টি পরিবার। আরও প্রায় ৫০টি পরিবার আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়েছে। কেউ কেউ ঘরের আসবাবগবাদিপশুচালডালমূল্যবান সামগ্রী নিজ হাতে বের করে নিচ্ছেযেন শত্রু সেনাবাহিনী আসার আগে নিজেই ঘর খালি করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছেকিন্তু যাদের ঘর ভাঙা হলোযাদের চোখের সামনে জীবনের সম্বল পুড়ে গেলতাদের কাছে এই নিরাপত্তা কেবল বিলম্বিত ট্র্যাজেডি।

রবীন্দ্রনাথ রায় নামে আরেক ভুক্তভোগী বললেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন এসে আমাদের মামলা করতে বলতেছেকিন্তু এখন যদি মামলা করিদোষীনির্দোষী সবাই ফাঁসবে। তখন এই মামলা দিয়ে সবাই ব্যবসা করবে।’ তাঁর কথায় ভেসে আসে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আর আশাভঙ্গের সুরন্যায্য বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেন নিঃশব্দে মৃত্যুবরণ করে।

আটক কিশোরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছেতাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। অথচ ঘরবাড়ি ভাঙচুরলুটপাটঅগ্নিসংযোগপ্রাণনাশের হুমকিযাদের সবকিছু গুঁড়িয়ে দেওয়া হলোতাদের জন্য কোনো আইন’ সক্রিয় নয়। এই নীরবতাএই দায় এড়িয়ে যাওয়ান্যায়ের শীতলতাএসবই নতুন সহিংসতার পথ খুলে দেয়। কারণ অপরাধীরা জানেতাদের কোনো পরিণতি নেইবরং নীরবতার ছায়ায় লুকিয়ে আছে পরোক্ষ বৈধতা।

গঙ্গাচড়ার ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়এই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অবস্থান এখনো টালমাটাল। তাদের ওপর হামলার জন্য একটি গুজবই যথেষ্টএকটি ফেসবুক পোস্টই যথেষ্টএমনকি শুধু সন্দেহই যথেষ্টঘরবাড়ি ভাঙতেজীবন তছনছ করতেভিটেমাটি থেকে অস্তিত্ব মুছে দিতে। মামলা করতে তারা ভয় পায়কারণ জানেমামলা তাদের নতুন বিপদে ফেলবে। ভিটা থাকবে নাজীবিকা থাকবে নাসামাজিক অবস্থান হারাবে। রাষ্ট্রের মুখ নীরবপ্রশাসনের মুখ গম্ভীররাজনীতি পিঠে হাত রাখলেও চোখ রাখে সামনের নির্বাচনের হিসাবে। ফলে কণিকা রানীরবীন্দ্রনাথ রায়সহ অসংখ্য ভুক্তভোগী বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেনতারা আর নিরাপদ নন। তাদের জীবন রাষ্ট্রের কাছে কেবল একটি সংখ্যাএকটি ফাইলএকটি অনুলিপি।

এই বাস্তবতা আমরা কীভাবে মেনে নিইকবে আমাদের বিবেক জাগবেআমরা কি বারবার এমন ঘটনার পর শুধু শোকগাথাই লিখবনাকি এবার জিজ্ঞাসা করবরাষ্ট্র কি সংখ্যালঘুরও রাষ্ট্র নয়সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদ কি কেবল মুসলমানদের জন্যসাম্যমানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার কি কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্যগঙ্গাচড়া আমাদের সামনে একটি আয়না ধরে রেখেছে। সে আয়নায় যদি নিজের মুখ দেখতে না পাইতবে বুঝতে হবেআমাদের মুখ আর মানুষের নেইহয়ে গেছে দলীয়ধর্মীয়রাজনৈতিক এক অমানুষিক মুখাবয়ব। এখনো যদি না জাগিনা বলিনা দাঁড়াইআগামীকাল আগুন লাগতে পারে আমাদের ঘরেও। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠের ব্যবধান তখন কেবল সময়ের ব্যাপার। একটি ঘটনারও যদি বিচার না হয়একজন অপরাধীরও যথাযথ শাস্তি না হয়তবে এ ধরনের অপরাধ কীভাবে রোধ হবেআমরা আশা করিধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার হুজুগের বিপক্ষে কঠোর মনোভাব না দেখালে অপরাধীরা আস্কারা পাবে।

পুনশ্চ: লেখাটি শেষ করার পর একটি খবর নজরে এলো। রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার বিচার দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেতাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যিনি ধর্ম অবমাননা করেছেনতাকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশইনসাফের বাংলাদেশবৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই।’ ২৯জুলাই টাঙ্গাইলে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে এক সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ‘রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের নবীজিকে কেউ কটূক্তি করলে তার বিচার চাইতবে তা আইনের আওতায় হতে হবে। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কোনো সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত হানাকে আমাদের ধর্ম অনুমোদন করে না। পিতার অপরাধে পুত্র কিংবা পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়ী করা যাবে না। নবীজি সব সময় অন্য ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন। সুতরাং যারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছেতাদের উদ্দেশ্য ধর্মীয় নয়তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিকসাম্প্রদায়িক ও লুটপাট।

নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে দ্বিমত করার সুযোগ কম। এখন দেখার বিষয়গঙ্গাচড়ার অপরাধীদের বিচারে সরকার শেষ পর্যন্ত কী করেআর এনসিপি এ নিয়েও কতটা দৃঢ় অবস্থান নেয়। গঙ্গাচড়ার আয়নায় আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ দেখতে চাইইনসাফ ও সত্যিকারের সম্প্রীতির বাংলাদেশ।

লেখক:সিনিয়রসাংবাদিক, রাজনৈতিবিশ্লেষক

গঙ্গাচড়ার  ঘটনা ধর্মীয় নয়, উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক ও লুটপাট

০৪:৫১:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে যে হামলার ঘটনা ঘটেছেসেটা নতুন কিছু নয়। নিয়মিত বিরতিতে দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটে। বড় একটি ক্ষত তৈরি হওয়ার পর সাময়িক মলম লাগিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক বলে দেওয়ার একটা সরকারি রীতি গড়ে উঠেছে। গঙ্গাচড়ার এক ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘সরকারের লোকজন আজ ক্যা আসি বাড়িঘর ভালো করি দেয় চোল। দলবল নিয়া আসি হামার যে গরু ছাগল হাঁস মুরগি টাকা পয়সা সোনাদানা লুট করি নিয়া গেলইতার কী হইবেখাবার জন্য পাঁচদশ কেজি করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাউল দিছে। এই চাউল দিয়াই বা কী হইবএই ১০ কেজি চাউল নাহয় ১০দিন খামোএরপরে…?’—২৯জুলাইমঙ্গলবার সকালে ভাঙা রান্নার চুলা মেরামতের সময় আক্ষেপ করে এসব কথা বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লির কণিকা রানী(৪৮)। তিনি আরও জানানতাঁর বিবাহিত মেয়ের ঘরে রেখে যাওয়া ১লাখ টাকা এবং রাজমিস্ত্রি ছেলের জমানো ২০হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।

গত শনিবার ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি ইউনিয়নে এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই একদল মানুষ উত্তেজিত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমে ভুল করে অন্যজনের বাড়ি আক্রমণ করেপরে সেই ভুল সংশোধন’ করতে গিয়ে আবার পরিকল্পিত আক্রমণ চালায় হিন্দুপল্লিতে। ঘরবাড়ি ভাঙচুরসম্পদ লুটসহাবস্থানের বুনন ছিঁড়ে ফেলাসবকিছু ঘটে পুলিশের সামনেই। এক পুলিশ সদস্য আহত হলেও অনেকে এখনো বিশ্বাস করে না যে পুলিশ তাদের পক্ষে আছেকারণ ঘটনার দিন থেকেই তারা দেখেছেরাষ্ট্র থেকেও বড় হয় উন্মত্ততাসংখ্যাগরিষ্ঠের দম্ভ আর রাজনৈতিক সুবিধাবাদ।

 

ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৮টি পরিবার। আরও প্রায় ৫০টি পরিবার আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়েছে। কেউ কেউ ঘরের আসবাবগবাদিপশুচালডালমূল্যবান সামগ্রী নিজ হাতে বের করে নিচ্ছেযেন শত্রু সেনাবাহিনী আসার আগে নিজেই ঘর খালি করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছেকিন্তু যাদের ঘর ভাঙা হলোযাদের চোখের সামনে জীবনের সম্বল পুড়ে গেলতাদের কাছে এই নিরাপত্তা কেবল বিলম্বিত ট্র্যাজেডি।

রবীন্দ্রনাথ রায় নামে আরেক ভুক্তভোগী বললেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন এসে আমাদের মামলা করতে বলতেছেকিন্তু এখন যদি মামলা করিদোষীনির্দোষী সবাই ফাঁসবে। তখন এই মামলা দিয়ে সবাই ব্যবসা করবে।’ তাঁর কথায় ভেসে আসে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আর আশাভঙ্গের সুরন্যায্য বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেন নিঃশব্দে মৃত্যুবরণ করে।

আটক কিশোরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছেতাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। অথচ ঘরবাড়ি ভাঙচুরলুটপাটঅগ্নিসংযোগপ্রাণনাশের হুমকিযাদের সবকিছু গুঁড়িয়ে দেওয়া হলোতাদের জন্য কোনো আইন’ সক্রিয় নয়। এই নীরবতাএই দায় এড়িয়ে যাওয়ান্যায়ের শীতলতাএসবই নতুন সহিংসতার পথ খুলে দেয়। কারণ অপরাধীরা জানেতাদের কোনো পরিণতি নেইবরং নীরবতার ছায়ায় লুকিয়ে আছে পরোক্ষ বৈধতা।

গঙ্গাচড়ার ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়এই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অবস্থান এখনো টালমাটাল। তাদের ওপর হামলার জন্য একটি গুজবই যথেষ্টএকটি ফেসবুক পোস্টই যথেষ্টএমনকি শুধু সন্দেহই যথেষ্টঘরবাড়ি ভাঙতেজীবন তছনছ করতেভিটেমাটি থেকে অস্তিত্ব মুছে দিতে। মামলা করতে তারা ভয় পায়কারণ জানেমামলা তাদের নতুন বিপদে ফেলবে। ভিটা থাকবে নাজীবিকা থাকবে নাসামাজিক অবস্থান হারাবে। রাষ্ট্রের মুখ নীরবপ্রশাসনের মুখ গম্ভীররাজনীতি পিঠে হাত রাখলেও চোখ রাখে সামনের নির্বাচনের হিসাবে। ফলে কণিকা রানীরবীন্দ্রনাথ রায়সহ অসংখ্য ভুক্তভোগী বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেনতারা আর নিরাপদ নন। তাদের জীবন রাষ্ট্রের কাছে কেবল একটি সংখ্যাএকটি ফাইলএকটি অনুলিপি।

এই বাস্তবতা আমরা কীভাবে মেনে নিইকবে আমাদের বিবেক জাগবেআমরা কি বারবার এমন ঘটনার পর শুধু শোকগাথাই লিখবনাকি এবার জিজ্ঞাসা করবরাষ্ট্র কি সংখ্যালঘুরও রাষ্ট্র নয়সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদ কি কেবল মুসলমানদের জন্যসাম্যমানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার কি কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্যগঙ্গাচড়া আমাদের সামনে একটি আয়না ধরে রেখেছে। সে আয়নায় যদি নিজের মুখ দেখতে না পাইতবে বুঝতে হবেআমাদের মুখ আর মানুষের নেইহয়ে গেছে দলীয়ধর্মীয়রাজনৈতিক এক অমানুষিক মুখাবয়ব। এখনো যদি না জাগিনা বলিনা দাঁড়াইআগামীকাল আগুন লাগতে পারে আমাদের ঘরেও। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠের ব্যবধান তখন কেবল সময়ের ব্যাপার। একটি ঘটনারও যদি বিচার না হয়একজন অপরাধীরও যথাযথ শাস্তি না হয়তবে এ ধরনের অপরাধ কীভাবে রোধ হবেআমরা আশা করিধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার হুজুগের বিপক্ষে কঠোর মনোভাব না দেখালে অপরাধীরা আস্কারা পাবে।

পুনশ্চ: লেখাটি শেষ করার পর একটি খবর নজরে এলো। রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার বিচার দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেতাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যিনি ধর্ম অবমাননা করেছেনতাকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশইনসাফের বাংলাদেশবৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই।’ ২৯জুলাই টাঙ্গাইলে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে এক সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ‘রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের নবীজিকে কেউ কটূক্তি করলে তার বিচার চাইতবে তা আইনের আওতায় হতে হবে। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কোনো সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত হানাকে আমাদের ধর্ম অনুমোদন করে না। পিতার অপরাধে পুত্র কিংবা পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়ী করা যাবে না। নবীজি সব সময় অন্য ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন। সুতরাং যারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছেতাদের উদ্দেশ্য ধর্মীয় নয়তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিকসাম্প্রদায়িক ও লুটপাট।

নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে দ্বিমত করার সুযোগ কম। এখন দেখার বিষয়গঙ্গাচড়ার অপরাধীদের বিচারে সরকার শেষ পর্যন্ত কী করেআর এনসিপি এ নিয়েও কতটা দৃঢ় অবস্থান নেয়। গঙ্গাচড়ার আয়নায় আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ দেখতে চাইইনসাফ ও সত্যিকারের সম্প্রীতির বাংলাদেশ।

লেখক:সিনিয়রসাংবাদিক, রাজনৈতিবিশ্লেষক