পপকর্ন হলো ভুট্টার একটি বিশেষ জাত, যার দানা উচ্চ তাপে বিস্ফোরিত হয়ে হালকা ও মচমচে খাদ্যে পরিণত হয়। বিশ্বজুড়ে এটি একটি জনপ্রিয় হালকা খাবার হলেও বাংলাদেশে এখনো তা প্রধান খাদ্য বা খাদ্যশস্য হিসেবে গণ্য হয়নি। তবে কৃষি‑সম্ভাবনার দিক থেকে পপকর্ন চাষে বাংলাদেশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
ভুট্টা উৎপাদনের সার্বিক চিত্র
বাংলাদেশে পপকর্নের জন্য আলাদা উৎপাদন পরিসংখ্যান নেই; তাই মোট ভুট্টা উৎপাদনের তথ্য থেকেই ধারণা নেওয়া হয়। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। উৎপাদন বাড়লেও সামান্য অংশই পপকর্ন তৈরিতে যায়, কারণ এর বড় অংশ পশুখাদ্য ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
পপকর্ন উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশে পপকর্নের উপযোগী ভুট্টা জাতের চাষ এখনো খুব সীমিত। অধিকাংশ চাষি খাদ্য বা পশুখাদ্য‑উপযোগী জাত চাষ করেন। পপকর্ন‑উপযুক্ত নির্দিষ্ট জাতের বীজ কঠিন ও ব্যয়বহুল হওয়ায় আগ্রহ কম। অনেক ক্ষেত্রেই পপকর্ন চাষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে হয়, বাণিজ্যিকভাবে নয়।
আরেক সীমাবদ্ধতা হলো উন্নত জাতের প্রসারহীনতা। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কয়েকটি উচ্চফলনশীল পপকর্ন জাত উদ্ভাবন করলেও সেগুলো মাঠপর্যায়ে তেমন ছড়িয়ে পড়েনি। অধিকাংশ চাষি এসব জাত ও বীজ‑সংগ্রহ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন।
খাদ্যসংস্কৃতিতে পপকর্নের অবস্থান
বাংলাদেশে ধান ও চাল‑নির্ভর খাদ্যাভ্যাস দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। ভাত ছাড়া দুপুর বা রাতের খাবার অসম্পূর্ণ মনে করা হয়; রুটি‑আটা জাতীয় খাবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পপকর্নকে মূল খাবারের জায়গা দেওয়া হয়নি।
এটি সাধারণত সিনেমা দেখা বা আড্ডার সময়ের নাশতা হিসেবে খাওয়া হয়। স্বাস্থ্যসম্মত নাশতা হিসেবে সুনাম অর্জন করলেও দেশে এখনো তা প্রধান খাদ্যশস্যের স্বীকৃতি পায়নি।
অর্থনৈতিক ও কৃষিনীতির প্রেক্ষাপট
বর্তমানে ভুট্টা চাষ বাংলাদেশের লাভজনক কৃষি খাতগুলোর একটি। উন্নত জাত ব্যবহারে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ১০–১২ টনে পৌঁছেছে, কিন্তু এর প্রায় ৯০ শতাংশ পশুখাদ্য ও শিল্পে যায়। পপকর্ন উৎপাদনে সরকারি প্রণোদনা ও গবেষণা‑সহায়তা সীমিত; ভুট্টা চাষে উৎসাহ থাকলেও পপকর্নের জন্য আলাদা কর্মপরিকল্পনা নেই। ফলে চাষি‑উৎসাহ ও বাজারব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি।
উন্নয়নের সুযোগ ও করণীয়
- উন্নত জাত উদ্ভাবন ও সরবরাহ: উচ্চ ফলনশীল ও ভালো বিস্ফোরণ‑ক্ষমতাসম্পন্ন জাত উদ্ভাবন করে দ্রুত চাষির হাতে পৌঁছাতে হবে।
- বীজের সহজলভ্যতা ও প্রশিক্ষণ: বীজ সহজলভ্য করা, মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক প্রণোদনা দিলে চাষি‑আগ্রহ বাড়বে।
- বাজার ও বিপণন কাঠামো গড়ে তোলা: পপকর্নকে স্বাস্থ্যবান্ধব ও জনপ্রিয় নাশতা হিসেবে প্রচার করে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত পণ্য বাজারজাতকরণে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে হবে।
- খাদ্যবৈচিত্র্য প্রসার: পপকর্নকে খাদ্যবৈচিত্র্যের অংশ ধরে সরকারি মজুত, রেশন বা দুর্যোগকালীন খাদ্য‑সহায়তা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
প্রচলিত খাদ্যাভ্যাস
বাংলাদেশে প্রতিবছর বিপুল ভুট্টা উৎপন্ন হলেও খুব সামান্য অংশই পপকর্ন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়—বীজসংকট, উন্নত জাতের অভাব, বাজার‑অব্যবস্থা ও প্রচলিত খাদ্যাভ্যাস এর প্রধান কারণ। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তায় পপকর্নকে সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য ও স্বাস্থ্যকর নাশতা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব, যা কৃষিতে নতুন মাত্রা ও জাতীয় খাদ্য‑বৈচিত্র্য বাড়াতে সহায়ক হবে।