অভিনেত্রী অমলা পলের অন্তরঙ্গ উপলব্ধি
নিজের গর্ভধারণ, বাবার মৃত্যু এবং করোনা মহামারির মানসিক অভিঘাত নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন দক্ষিণী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অমলা পল। ‘জেএফডব্লিউ বিঞ্জ’-এর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মা হওয়া তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং নিজেকে নতুন করে চিনতে সহায়তা করেছে।
‘আমি গর্ভবতী হই যখন জানতাম না জীবনে কী করব’
অমলা বলেন, “আমি এমন এক সময়ে গর্ভবতী হই, যখন বুঝতে পারছিলাম না জীবনে কী করব। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা আমাকে জীবনের দিকনির্দেশনা দিয়েছে এবং একজন ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেছে।” তিনি জানান, ছেলেসন্তান ইলাইয়ের আগমনে তার জীবনের অগ্রাধিকার বদলে যায় এবং ধৈর্য সম্পর্কে নতুন করে শিখতে হয় তাকে। “সবকিছুই তখন সেই ছোট্ট প্রাণটিকে ঘিরে ছিল। আমি কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম—but সেটা আমার ভালোই লেগেছিল।”
জগতের সঙ্গে সম্পর্ক ও নতুন যাত্রা
অমলা জানান, তার স্বামী জগতের সঙ্গে সম্পর্কের শুরুটা ছিল হঠাৎ করে। “আমরা তখনো বিয়ে করিনি, সম্পর্ক মাত্র কয়েক মাসের ছিল, তখনই জানতে পারি আমি গর্ভবতী। পরে বিয়ে হয়। যদিও পুরো ব্যাপারটাই ছিল অপ্রত্যাশিত, তবুও এই যাত্রা আমাকে মাটিতে পা রাখতে শিখিয়েছে।”
তিনি জগতকে তার জীবনের ‘সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সন্তান জন্মের পর জগতের এক বিশেষ কাজের কথাও জানান অমলা—তিনি সন্তানের জন্মের পর ‘প্লাসেন্টা’ মাটিতে পুঁতে রাখার একটি ঐতিহ্যবাহী আচার পালন করেন, যেটি অমলার মতে এক নতুন শুরু এবং মানসিক সুস্থতার প্রতীক।
বাবার মৃত্যু ও মানসিক সংকটের সময়কাল
২০২০-২১ সালের কঠিন সময়ের কথা স্মরণ করেন অমলা। সে সময়ে তিনি তার বাবাকে হারান এবং কোভিড মহামারির মানসিক চাপে ভুগছিলেন। সেই সময়ে তিনি একটি হিন্দি সিরিজে অভিনয় করছিলেন যেখানে তার চরিত্রটি ছিল স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত—এটি তার নিজের মানসিক অবস্থার সঙ্গেও ছিল একরকম মিল রেখে চলা।
“আমি পরিচিত মানুষের নাম ভুলে যাচ্ছিলাম। এতটাই মানসিক চাপ ছিল,” বলেন অমলা। এমনকি তার থেরাপিস্টও তাকে বলেছিলেন যে তার উপসর্গগুলো বর্ডারলাইন স্কিজোফ্রেনিয়ার মতো।
নিজেকে খুঁজে পাওয়ার যাত্রা
এই সংকটের সময়ে একা ভ্রমণই তাকে স্বস্তি দিয়েছে বলে জানান অমলা। “আমি একাই গিয়েছিলাম বালি, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, লন্ডন। তখনই আমি বুঝি—নিজের সঙ্গে যুক্ত থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যের ওপর ভরসা করে বাঁচা যায় না। নিজের পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়।”
অভিনেত্রী অমলা পলের জীবনের এই খোলামেলা কথোপকথন শুধু এক নারীর মা হওয়ার গল্প নয়, বরং একজন মানুষের আত্ম-অন্বেষণ ও মানসিক পুনর্জাগরণের সাহসী দলিল।