০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে পাকিস্তান সংকটের বাইরে রাখার চ্যালেঞ্জ

ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য এবং প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ ও হতাশা, আর পাকিস্তানে উল্লাস দেখা দিয়েছে। তবে, উপসাগরীয় অঞ্চলে তার সফরের সময় দেওয়া বক্তব্য ভারতের জন্য সংবেদনশীল ছিল। এই বক্তব্যগুলো হয়তো তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জনের তাড়না থেকে এসেছে, বা যুদ্ধবিমুখ মনোভাব থেকেও হতে পারে। তবে এসব একেবারে অপ্রত্যাশিত নয় — ২০১৯ সালের বালাকোট হামলার পর, পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক, ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদবিরোধী ভূমিকার প্রশংসা কিংবা ভারত সম্পর্কিত লেনদেনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এসবেরই প্রতিফলন।

ভারতের হতাশার পেছনের কারণ

ভারতের অসন্তোষের মূল কারণ আমেরিকার যে মনে হয় অনৈতিক ও সংবেদনহীন অবস্থান, বিশেষত পহেলগামে ভারতের জবাবি পদক্ষেপ নিয়ে। আমেরিকা একদিকে ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে ২১ শতকের “সংজ্ঞায়িত অংশীদারত্ব” হিসেবে চিত্রিত করে, অন্যদিকে এমন মন্তব্য ভারতের জনমনে দ্বিধা তৈরি করে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কোয়াড বৈঠকে উষ্ণতা থাকলেও, এই দ্বৈত আচরণ প্রশ্ন তোলে। বাস্তবতা হলো, ট্রাম্পের জয় ভারতে অনেকের কাছেই ইতিবাচকভাবে দেখা হয়েছিল।

ভারত-পাকিস্তান নিয়ে আমেরিকার দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গি

ট্রাম্পের বক্তব্য কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং আমেরিকার দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ — যেখানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে দক্ষিণ এশীয় প্রেক্ষাপটে একত্রে দেখা হয়। এতে সন্ত্রাসবাদের বদলে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি কমানোয় জোর দেওয়া হয়; হামলাকারী ও শিকারকে এক কাতারে ফেলা হয়। এমন প্রতিটি পর্বই ভারত-মার্কিন সম্পর্কে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু প্রতিবারই এই চাপ পেরিয়ে সম্পর্ককে ইতিবাচক পথে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে, কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক বিস্তর অসামঞ্জস্য এবং উভয় দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রকৃতি ভিন্ন।

ক্লিনটন থেকে ওবামা: অবস্থান বদলের ইতিহাস

২০০০ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরে তিনি পাকিস্তানি সরকারের কিছু অংশের সহিংসতার ভূমিকা স্বীকার করেন এবং পাকিস্তানকে এমন কর্মকাণ্ড না করার আহ্বান জানান। এটি ছিল আমেরিকার অবস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, যা পরবর্তীতে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক উষ্ণ করতে সহায়তা করে।

২০০১ সালের পার্লামেন্ট হামলা এবং ২০০২ সালের কালুচাক হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সাঁড়াশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায়। তবে ভারত এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পাকিস্তান-কেন্দ্রিকতা থেকে বের করে এনে পারমাণবিক সহযোগিতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রতিরক্ষা কাঠামো এবং বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির দিকে নিয়ে যায়।

ওবামা প্রশাসনে পরিবর্তনের ধারা

২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হন। তিনি প্রাথমিকভাবে ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানকে একত্রে দেখে কূটনৈতিক দূত নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দিল্লি জানিয়ে দেয়, এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরবর্তীতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদে ভারতের সমর্থন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রসারিত হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ সতর্কতা

ওবামা, ট্রাম্প এবং বাইডেন — তিন প্রশাসনেই ভারত চেষ্টা করেছে ভারত-পাকিস্তান ইস্যু থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আলাদা রাখতে। কিন্তু প্রতি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং মার্কিন প্রতিক্রিয়া আবার সম্পর্ককে ধোঁয়াশায় ফেলে। ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি হবে।

জনসমক্ষে কূটনৈতিক বক্তব্যের গুরুত্ব থাকলেও, সম্পর্কের বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য কোনও কৌশলগত ঢাল হবে না — চীনকে কেন্দ্র করে হলেও নয়। যেমনটা ভারতও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার যুদ্ধে জড়াবে না। দুই দেশের অগ্রাধিকার ও উদ্বেগ এক হলেও সম্পূর্ণ অভিন্ন নয়।

পাকিস্তান প্রসঙ্গে মার্কিন কৌশল এবং ভারতের সাবধানতা

যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অঘোষিত জোট গড়তে চাইলেও পাকিস্তানকে তারা এখনো মূল্যবান মনে করে। তাই ভারত-আমেরিকা নিরাপত্তা কাঠামো থেকে পাকিস্তানকে বাইরে রাখার দৃষ্টিভঙ্গি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ভারতের উচিত নিজেদের প্রতিপক্ষদের কাছে ভুল বার্তা না দেওয়া এবং এক শত্রুর প্রতি দুর্বলতা যেন আরেক শত্রুর ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি না করে, তা নিশ্চিত করা।

বদলে যাওয়া বৈশ্বিক বাস্তবতা এবং ভারতের কৌশল

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক যেই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছিল, তা আর নেই। ট্রাম্প এই পরিবর্তনকে দ্রুততর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এখন নিজের ভিতরে পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও সম্পৃক্ততার সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করতে চাইছে। প্রশাসনিক পরিবর্তনেও এই ধারা বদলাবে না। ট্রাম্পের ফেরার ফলে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে চীন-প্লাস-ওয়ান থেকে আমেরিকা-প্লাস-ওয়ান কৌশলে পরিবর্তন আসতে পারে।

ভারতের পক্ষেও অতীতের অনুমান দিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চলে না। এখন এক বৈশ্বিক সমীকরণের জটিল সময় চলছে — যেখানে প্রতিবেশী থেকে বিশ্বব্যাপী সম্পর্কের ওপর জোর দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র: ভারতের উন্নয়নের অপরিহার্য অংশীদার

‘বিকসিত ভারত’-এর লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য অপরিহার্য। এ জন্য দরকার বাজার, প্রযুক্তি, অর্থ, কাঁচামাল; শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, গবেষণা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা; শক্তি খাত — চিরাচরিত থেকে নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক পর্যন্ত — এ অংশীদারিত্ব; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যতের শিল্পে সহায়তা; এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালা ও ইতিহাসকে মাথায় রেখে সীমিত পরিসরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা।

তবে এসব কেবল তখনই কার্যকর হবে, যদি ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ উপযুক্ত থাকে। এজন্য প্রয়োজন বড় ধরনের নীতি সংস্কার এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি — যা কেবল একটি প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিকারের অংশীদার হতে চায়, তাহলে তাদের উচিত সম্পর্কের ওপর বারবার ফিরে আসা সেই ছায়াগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা।

লেখক পরিচিতি:
জাওয়েদ আশরফ একজন ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক।

ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে পাকিস্তান সংকটের বাইরে রাখার চ্যালেঞ্জ

০৮:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য এবং প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ ও হতাশা, আর পাকিস্তানে উল্লাস দেখা দিয়েছে। তবে, উপসাগরীয় অঞ্চলে তার সফরের সময় দেওয়া বক্তব্য ভারতের জন্য সংবেদনশীল ছিল। এই বক্তব্যগুলো হয়তো তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জনের তাড়না থেকে এসেছে, বা যুদ্ধবিমুখ মনোভাব থেকেও হতে পারে। তবে এসব একেবারে অপ্রত্যাশিত নয় — ২০১৯ সালের বালাকোট হামলার পর, পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক, ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদবিরোধী ভূমিকার প্রশংসা কিংবা ভারত সম্পর্কিত লেনদেনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এসবেরই প্রতিফলন।

ভারতের হতাশার পেছনের কারণ

ভারতের অসন্তোষের মূল কারণ আমেরিকার যে মনে হয় অনৈতিক ও সংবেদনহীন অবস্থান, বিশেষত পহেলগামে ভারতের জবাবি পদক্ষেপ নিয়ে। আমেরিকা একদিকে ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে ২১ শতকের “সংজ্ঞায়িত অংশীদারত্ব” হিসেবে চিত্রিত করে, অন্যদিকে এমন মন্তব্য ভারতের জনমনে দ্বিধা তৈরি করে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কোয়াড বৈঠকে উষ্ণতা থাকলেও, এই দ্বৈত আচরণ প্রশ্ন তোলে। বাস্তবতা হলো, ট্রাম্পের জয় ভারতে অনেকের কাছেই ইতিবাচকভাবে দেখা হয়েছিল।

ভারত-পাকিস্তান নিয়ে আমেরিকার দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গি

ট্রাম্পের বক্তব্য কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং আমেরিকার দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ — যেখানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে দক্ষিণ এশীয় প্রেক্ষাপটে একত্রে দেখা হয়। এতে সন্ত্রাসবাদের বদলে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি কমানোয় জোর দেওয়া হয়; হামলাকারী ও শিকারকে এক কাতারে ফেলা হয়। এমন প্রতিটি পর্বই ভারত-মার্কিন সম্পর্কে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু প্রতিবারই এই চাপ পেরিয়ে সম্পর্ককে ইতিবাচক পথে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে, কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক বিস্তর অসামঞ্জস্য এবং উভয় দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রকৃতি ভিন্ন।

ক্লিনটন থেকে ওবামা: অবস্থান বদলের ইতিহাস

২০০০ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরে তিনি পাকিস্তানি সরকারের কিছু অংশের সহিংসতার ভূমিকা স্বীকার করেন এবং পাকিস্তানকে এমন কর্মকাণ্ড না করার আহ্বান জানান। এটি ছিল আমেরিকার অবস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, যা পরবর্তীতে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক উষ্ণ করতে সহায়তা করে।

২০০১ সালের পার্লামেন্ট হামলা এবং ২০০২ সালের কালুচাক হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সাঁড়াশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায়। তবে ভারত এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পাকিস্তান-কেন্দ্রিকতা থেকে বের করে এনে পারমাণবিক সহযোগিতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রতিরক্ষা কাঠামো এবং বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির দিকে নিয়ে যায়।

ওবামা প্রশাসনে পরিবর্তনের ধারা

২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হন। তিনি প্রাথমিকভাবে ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানকে একত্রে দেখে কূটনৈতিক দূত নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দিল্লি জানিয়ে দেয়, এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরবর্তীতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদে ভারতের সমর্থন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রসারিত হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ সতর্কতা

ওবামা, ট্রাম্প এবং বাইডেন — তিন প্রশাসনেই ভারত চেষ্টা করেছে ভারত-পাকিস্তান ইস্যু থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আলাদা রাখতে। কিন্তু প্রতি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং মার্কিন প্রতিক্রিয়া আবার সম্পর্ককে ধোঁয়াশায় ফেলে। ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি হবে।

জনসমক্ষে কূটনৈতিক বক্তব্যের গুরুত্ব থাকলেও, সম্পর্কের বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য কোনও কৌশলগত ঢাল হবে না — চীনকে কেন্দ্র করে হলেও নয়। যেমনটা ভারতও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার যুদ্ধে জড়াবে না। দুই দেশের অগ্রাধিকার ও উদ্বেগ এক হলেও সম্পূর্ণ অভিন্ন নয়।

পাকিস্তান প্রসঙ্গে মার্কিন কৌশল এবং ভারতের সাবধানতা

যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অঘোষিত জোট গড়তে চাইলেও পাকিস্তানকে তারা এখনো মূল্যবান মনে করে। তাই ভারত-আমেরিকা নিরাপত্তা কাঠামো থেকে পাকিস্তানকে বাইরে রাখার দৃষ্টিভঙ্গি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ভারতের উচিত নিজেদের প্রতিপক্ষদের কাছে ভুল বার্তা না দেওয়া এবং এক শত্রুর প্রতি দুর্বলতা যেন আরেক শত্রুর ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি না করে, তা নিশ্চিত করা।

বদলে যাওয়া বৈশ্বিক বাস্তবতা এবং ভারতের কৌশল

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক যেই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছিল, তা আর নেই। ট্রাম্প এই পরিবর্তনকে দ্রুততর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এখন নিজের ভিতরে পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও সম্পৃক্ততার সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করতে চাইছে। প্রশাসনিক পরিবর্তনেও এই ধারা বদলাবে না। ট্রাম্পের ফেরার ফলে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে চীন-প্লাস-ওয়ান থেকে আমেরিকা-প্লাস-ওয়ান কৌশলে পরিবর্তন আসতে পারে।

ভারতের পক্ষেও অতীতের অনুমান দিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চলে না। এখন এক বৈশ্বিক সমীকরণের জটিল সময় চলছে — যেখানে প্রতিবেশী থেকে বিশ্বব্যাপী সম্পর্কের ওপর জোর দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র: ভারতের উন্নয়নের অপরিহার্য অংশীদার

‘বিকসিত ভারত’-এর লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য অপরিহার্য। এ জন্য দরকার বাজার, প্রযুক্তি, অর্থ, কাঁচামাল; শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, গবেষণা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা; শক্তি খাত — চিরাচরিত থেকে নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক পর্যন্ত — এ অংশীদারিত্ব; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যতের শিল্পে সহায়তা; এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালা ও ইতিহাসকে মাথায় রেখে সীমিত পরিসরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা।

তবে এসব কেবল তখনই কার্যকর হবে, যদি ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ উপযুক্ত থাকে। এজন্য প্রয়োজন বড় ধরনের নীতি সংস্কার এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি — যা কেবল একটি প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিকারের অংশীদার হতে চায়, তাহলে তাদের উচিত সম্পর্কের ওপর বারবার ফিরে আসা সেই ছায়াগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা।

লেখক পরিচিতি:
জাওয়েদ আশরফ একজন ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক।