নায়েব কাননগোগণ প্রধান কাননগোদিগের সহকারী থাকিয়া সেরেস্তার কার্য্য অতি সুন্দররূপে সম্পন্ন করিতেন। গঙ্গাগোবিন্দ নায়েব কাননগো ও রাজস্ব-সমিতির দেওয়ান উভয় পদ প্রাপ্ত হইয়া, রাজস্ব বিভাগকে একেবারে নিজ করতলগত করিয়া ফেলিলেন। মুসলমান রাজত্বের সময় হইতে নায়েব কানগোর এবং ইংরেজরাজত্বের সময় হইতে দেওয়ানের উৎপত্তি। উভয় রাজত্বের রাজস্বসম্বন্ধীয় প্রধান প্রধান পদে এক ব্যক্তি নিযুক্ত হওয়ায় তাঁহার যতদূর সুবিধা ঘটিবার, সমস্তই ঘটিল।
ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দুইটি পদের সৃষ্টি হওয়ায়, একের উপর অন্যের কোন ক্ষমতা ছিল না; কিন্তু এক্ষণে একজনেই উভয় পদে প্রতি-ষ্ঠিত হওয়ায়, দেশমধ্যে গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। এদিকে রাজস্ব-সমিতির সভ্যেরা সমস্ত ভার গঙ্গাগোবিন্দের হস্তে সমর্পণ করিয়া, তাঁহার ক্রীড়াপুত্তলস্বরূপ হইয়া উঠিলেন।
গঙ্গা-গোবিন্দ তাঁহাদিগকে যে পরামর্শ দিতেন, তাঁহারা তৎক্ষণাৎ তাহাই করিতেন। হেষ্টিংস চারি জনকে সভ্য নিযুক্ত করেন। সমিতির জন্য বৎসরে ৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হইত। সমিতির সভ্যেরা আপন. আপন প্রাপ্য অংশ পাইয়াই সন্তুষ্ট হইতেন এবং গঙ্গাগোবিন্দের হস্তে সমস্ত ভার দিয়া নিশ্চিন্ত মনে কাল কাটাইতেন। শোর ও এন্ডারসন্ এই দুই জন সমিতির প্রধান সভ্য ছিলেন; শোর কিছুদিন সমিতির সভাপতির কার্য্যও করেন। তাঁহারা স্পষ্টই স্বীকার করিয়াছিলেন যে, গঙ্গাগোবিন্দ সমিতির সর্ব্বেসর্ব্বা ছিলেন; তাঁহারা তাঁহার হস্তে ক্রীড়া-পুত্তলরূপে অবস্থিতি করিতেন।
গঙ্গাগোবিন্দের এরূপ প্রভুত্বের কারণ যে স্বয়ং হেষ্টিংস সাহেব, তাহা বোধ হয়, সকলে অনুমান করিতে পারি-বেন। গঙ্গাগোবিন্দকে রাজস্ব বিভাগের সর্ব্বেসর্ব্বা না করিলে, তাঁহার দুপূরণীয় ধন-লালসা মিটে কৈ? কাজেই সমিতির সভ্যগণকে কেবল বৃত্তিভোগী করিয়া হেষ্টিংস গঙ্গাগোবিন্দের হস্তে রাজস্ববিভাগের সমস্ত ভার প্রদান করেন।