০৬:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মার্কিন-ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞায় বিদেশে পড়তে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে

ভিসা নিষেধাজ্ঞায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন অনিশ্চয়তায়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতসহ একাধিক দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ও শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত অথবা সীমিত হওয়ার ঘটনায় দেশের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ক্রমেই গভীর হচ্ছে। করোনোত্তর সময়ে শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও এখন আবার বৈশ্বিক ভিসানীতির কড়াকড়িতে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন চীনসহ বহুদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করলে তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়ে পড়েছে, শিক্ষার্থী-ইন্টারভিউয়ের তারিখ মিলছে না, আর যাঁরা অ্যাডমিশন পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে ফ্লাইট বুক করতে পারছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, “ভিসা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই—এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার পরিকল্পনা করা মানেই বড় ঝুঁকি।”

ইউরোপের দ্বারও বন্ধ হচ্ছে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু দেশ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশিদের শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে ভিসা প্রদান থেকে বিরত রয়েছে। বিশেষত নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও জার্মানিতে শিক্ষার্থীদের আবেদন বাতিলের হার ব্যাপক হারে বেড়েছে। ভিসা অনুমোদনের হার কমে এসেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ফ্রান্স ও ইতালিতেও বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা অনুমোদন প্রক্রিয়া কার্যত থমকে গেছে।

শিক্ষাবিষয়ক একাধিক কনসালট্যান্ট জানিয়েছেন, “ছাত্রদের ব্যাকগ্রাউন্ড শক্ত হলেও ভিসা পাচ্ছেন না। নীতিগতভাবে কিছুই স্পষ্ট নয়, তাই অভিভাবকরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।”

ভারতের দিক থেকেও বন্ধ উচ্চশিক্ষার সুযোগ

ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য ছিল। তবে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পরে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় ভারত সরকার বাংলাদেশের ছাত্রদের জন্য, বিশেষত মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায়, ভিসা সীমিত করেছে। একই সঙ্গে SAARC-স্কলারশিপ ও ITEC-প্রোগ্রামও স্থগিত করা হয়েছে।

বিকল্প খুঁজছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

এই পরিস্থিতিতে অনেক পরিবার এখন কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং তুরস্কের দিকে ঝুঁকছে। কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কিছু প্রদেশে বাংলাদেশিদের জন্য তুলনামূলক সহজ প্রক্রিয়া থাকলেও অতিরিক্ত খরচ, দীর্ঘ সময় এবং সীমিত সুযোগের কারণে সেগুলোও সবার জন্য সম্ভব হয়ে উঠছে না।

ঢাকার উত্তরার এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলেকে মেডিকেল পড়াতে চেয়েছিলাম ভারতে। এখন ভাবছি মালয়েশিয়ার কোনো প্রাইভেট মেডিক্যালে পাঠাব। কিন্তু খরচ অনেক বেশি—তবুও উপায় নেই।”

Cluster Admission Test in All Public Universities!

ভিসা না পেলে কী করবে শিক্ষার্থীরা?

ভিসা না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী এখন দেশের মধ্যেই পড়াশোনার চেষ্টা করছেন। তবে দেশে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার সীমাবদ্ধতা, গবেষণার স্বল্পতা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাব এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের হতাশ করছে।

এক শিক্ষার্থী জানান, “BUET বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পেলে, অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাবে কর্পোরেট চাকরিতে সুযোগ হারাচ্ছে। বিদেশে পড়ার স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।”

ড্রিম’ নয়এখন িসিশন’: উচ্চশিক্ষা এখন একটি বিনিয়োগ

বিদেশে পড়াশোনা এক সময় ছিল একটি স্বপ্ন, কিন্তু এখন তা হয়ে উঠেছে কঠিন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অভিবাসন নীতি, ভিসা প্রক্রিয়া, খরচ এবং ভবিষ্যৎ নাগরিকত্বের সুযোগ—সব কিছু মিলিয়ে একটি পরিবারকে এখন বহুমুখীভাবে ভাবতে হচ্ছে।

রাজধানীর এক বিদেশে পাঠানোর কনসালট্যান্ট বলেন, “এখন আমরা ছাত্র ও অভিভাবকদের বলি—স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। যে দেশে পড়াশোনার পরে চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ আছে, তাকেই বেছে নিন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।”

ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার?

ভিসা সংকট, বৈশ্বিক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। সরকারি স্তরেও এই সংকট উত্তরণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দ্রুত কোনো কূটনৈতিক ও শিক্ষানীতি ভিত্তিক সমাধান না আসে, তাহলে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষার প্রতিযোগিতা থেকে হারিয়ে ফেলতে পারে।

মার্কিন-ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞায় বিদেশে পড়তে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে

১০:০০:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

ভিসা নিষেধাজ্ঞায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন অনিশ্চয়তায়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতসহ একাধিক দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ও শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত অথবা সীমিত হওয়ার ঘটনায় দেশের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ক্রমেই গভীর হচ্ছে। করোনোত্তর সময়ে শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও এখন আবার বৈশ্বিক ভিসানীতির কড়াকড়িতে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন চীনসহ বহুদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করলে তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়ে পড়েছে, শিক্ষার্থী-ইন্টারভিউয়ের তারিখ মিলছে না, আর যাঁরা অ্যাডমিশন পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে ফ্লাইট বুক করতে পারছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, “ভিসা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই—এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার পরিকল্পনা করা মানেই বড় ঝুঁকি।”

ইউরোপের দ্বারও বন্ধ হচ্ছে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু দেশ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশিদের শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে ভিসা প্রদান থেকে বিরত রয়েছে। বিশেষত নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও জার্মানিতে শিক্ষার্থীদের আবেদন বাতিলের হার ব্যাপক হারে বেড়েছে। ভিসা অনুমোদনের হার কমে এসেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ফ্রান্স ও ইতালিতেও বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা অনুমোদন প্রক্রিয়া কার্যত থমকে গেছে।

শিক্ষাবিষয়ক একাধিক কনসালট্যান্ট জানিয়েছেন, “ছাত্রদের ব্যাকগ্রাউন্ড শক্ত হলেও ভিসা পাচ্ছেন না। নীতিগতভাবে কিছুই স্পষ্ট নয়, তাই অভিভাবকরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।”

ভারতের দিক থেকেও বন্ধ উচ্চশিক্ষার সুযোগ

ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য ছিল। তবে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পরে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় ভারত সরকার বাংলাদেশের ছাত্রদের জন্য, বিশেষত মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায়, ভিসা সীমিত করেছে। একই সঙ্গে SAARC-স্কলারশিপ ও ITEC-প্রোগ্রামও স্থগিত করা হয়েছে।

বিকল্প খুঁজছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

এই পরিস্থিতিতে অনেক পরিবার এখন কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং তুরস্কের দিকে ঝুঁকছে। কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কিছু প্রদেশে বাংলাদেশিদের জন্য তুলনামূলক সহজ প্রক্রিয়া থাকলেও অতিরিক্ত খরচ, দীর্ঘ সময় এবং সীমিত সুযোগের কারণে সেগুলোও সবার জন্য সম্ভব হয়ে উঠছে না।

ঢাকার উত্তরার এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলেকে মেডিকেল পড়াতে চেয়েছিলাম ভারতে। এখন ভাবছি মালয়েশিয়ার কোনো প্রাইভেট মেডিক্যালে পাঠাব। কিন্তু খরচ অনেক বেশি—তবুও উপায় নেই।”

Cluster Admission Test in All Public Universities!

ভিসা না পেলে কী করবে শিক্ষার্থীরা?

ভিসা না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী এখন দেশের মধ্যেই পড়াশোনার চেষ্টা করছেন। তবে দেশে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার সীমাবদ্ধতা, গবেষণার স্বল্পতা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাব এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের হতাশ করছে।

এক শিক্ষার্থী জানান, “BUET বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পেলে, অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাবে কর্পোরেট চাকরিতে সুযোগ হারাচ্ছে। বিদেশে পড়ার স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।”

ড্রিম’ নয়এখন িসিশন’: উচ্চশিক্ষা এখন একটি বিনিয়োগ

বিদেশে পড়াশোনা এক সময় ছিল একটি স্বপ্ন, কিন্তু এখন তা হয়ে উঠেছে কঠিন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অভিবাসন নীতি, ভিসা প্রক্রিয়া, খরচ এবং ভবিষ্যৎ নাগরিকত্বের সুযোগ—সব কিছু মিলিয়ে একটি পরিবারকে এখন বহুমুখীভাবে ভাবতে হচ্ছে।

রাজধানীর এক বিদেশে পাঠানোর কনসালট্যান্ট বলেন, “এখন আমরা ছাত্র ও অভিভাবকদের বলি—স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। যে দেশে পড়াশোনার পরে চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ আছে, তাকেই বেছে নিন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।”

ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার?

ভিসা সংকট, বৈশ্বিক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। সরকারি স্তরেও এই সংকট উত্তরণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দ্রুত কোনো কূটনৈতিক ও শিক্ষানীতি ভিত্তিক সমাধান না আসে, তাহলে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষার প্রতিযোগিতা থেকে হারিয়ে ফেলতে পারে।