বাজেট ঘোষণার দিনে আতঙ্ক: নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট আজ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী কর কাঠামো এবং ভর্তুকি নীতিতে কিছু পরিবর্তনের ঘোষণা দেন, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের উপর।
বিশেষ করে, খাদ্যদ্রব্য, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে কর বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি কমানোয় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, আগাম আতঙ্কে ভুগছে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নিম্নোক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে:
- চাল: আমদানির উপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে সাধারণ মিনিকেট ও মাঝারি মানের চালের দাম বাড়তে পারে।
- তেল: সয়াবিন ও পাম তেলের উপর সম্পূরক শুল্ক ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% করা হয়েছে।
- চিনি: শুল্ক অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে, যার ফলে চিনির দাম ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
- ডিম ও মুরগি: খাদ্যদ্রব্য আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং খামার খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিম ও মুরগির দাম আরও চড়া হতে পারে।
- সবজি ও ফল: পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য।
- গ্যাস ও বিদ্যুৎ: ভর্তুকি হ্রাসের প্রভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের বিল সরাসরি ২০-২৫% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
প্রভাব কোথায় সবচেয়ে বেশি পড়বে?
নিম্ন আয়ের মানুষ
যারা দিনমজুরি, রিকশা চালানো, গার্মেন্টস শ্রমিক কিংবা ঘরে বসে ক্ষুদ্র কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের আয় বাড়ছে না বরং জীবনযাত্রার খরচ লাগামহীনভাবে বাড়ছে। প্রতি মাসে বাড়তি ১০০০-১৫০০ টাকা খরচ শুধু খাবার আর বিদ্যুতে গেলে তাদের হাতে আর কিছুই থাকবে না।
শাহিন নামে এক রিকশাচালক বললেন:
“আগে ৩০০ টাকায় বাজার করে একদিন চলত, এখন লাগে ৫০০ টাকার ওপরে। আজ বাজেটে যা বলছে, তাতে তো আরও বিপদ।”
মধ্যবিত্ত পরিবার
মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক পরিবার মাস শেষে ঋণ করে চলে। সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসাভাড়া চালিয়ে হাতে আর কিছুই থাকে না। তাদের উপর চাপ বাড়ছে আরও।
সুলতানা আফরোজ, একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন:
“আমার মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা। বাড়িভাড়া ৮ হাজার, খাবার ১০ হাজার। এবার গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল আর বাজারের খরচ বাড়লে বাচ্চার স্কুলের ফি দিতে পারব কি না জানি না।”
সরকার কী বলছে?
অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতির কারণে কিছু কর পুনঃবিন্যাস করা হয়েছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, দেশের উৎপাদন বাড়ালে এবং কৃষিখাতে সহযোগিতা দিলে দীর্ঘমেয়াদে দাম স্বাভাবিক হবে।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামাল দিতে হলে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য সরাসরি নগদ সহায়তা বা খাদ্যপণ্য কার্ড চালু করা জরুরি।
সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া
- জনগণের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও হতাশা বিরাজ করছে।
- বাজারে জিনিসপত্রের দাম আগেই বেড়ে গেছে; বাজেট ঘোষণার পর নতুন করে দাম আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের মধ্যেও।
- খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, “পণ্য কিনে আনার খরচ বাড়ছে প্রতিদিন, এখন নতুন কর বসলে কিভাবে চালাব?”
বাজেট বাস্তবমুখী হলেও মানবিকতা কোথায়?
এই বাজেট ব্যবসায় ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিলেও জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তেমন কোনো সরাসরি উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। নিম্নবিত্ত মানুষদের হাতে অর্থ তুলে দেওয়ার কোনো বড় পরিকল্পনার অনুপস্থিতি প্রশ্ন তুলছে—এই বাজেট কার জন্য?