খাতটির জন্য কিছু স্বস্তির পদক্ষেপ
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর তৈরি পোশাক শিল্পে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাজেটে উৎসে কর ১ শতাংশ হারেই বহাল রাখা, রপ্তানি প্রণোদনা চালু রাখার প্রতিশ্রুতি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ভর্তুকি অব্যাহত রাখার ঘোষণা খাতটির জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে। শিল্প নেতারা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে সরকারের এই পদক্ষেপগুলো শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হতে পারে।
বিজিএমইএ সভাপতি সাদিকুর রহমান বলেন,
“আমরা চেয়েছিলাম উৎসে কর আরও কমানো হোক। তবে যেহেতু বাড়ানো হয়নি, এটি এখনকার প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক। সরকারের পক্ষ থেকে স্থিতিশীলতা রক্ষার বার্তা আমরা পেয়েছি।”
গ্যাস-বিদ্যুৎ ভর্তুকি ভালো খবর, বাস্তবায়ন অনিশ্চিত
বাজেটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ভর্তুকির বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, বরাদ্দ যতটা ঘোষিত হয়েছে, বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। গত বছর গ্যাসের উচ্চমূল্য এবং সরবরাহজনিত সংকট অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত করেছিল।
বিকেএমইএ সহসভাপতি জাকির হোসেন বলেন,
“ভর্তুকির ঘোষণা কাগজে ভালো শোনালেও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন অনিশ্চিত। আমাদের দরকার নিরবচ্ছিন্ন ও প্রতিশ্রুতিমতো সেবা।”
ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ, তবে প্রক্রিয়া জটিল
এসএমই ঋণ সহায়তার ঘোষণা অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য আশার কথা হলেও, বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে—ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণ পেতে দীর্ঘ সময় এবং জটিল প্রক্রিয়া পাড়ি দিতে হয়। অনেকেই বলেন, ঘোষণার চেয়ে বাস্তব প্রয়োগে জোর না দিলে সুবিধা হাতে পৌঁছাবে না।
ক্ষুদ্র রপ্তানিকারক শাহানা পারভীন বলেন,
“বাজেটে সুবিধার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ব্যাংকে গেলে তার ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায় না। যদি প্রকৃত উদ্যোক্তারা এই তহবিল ব্যবহার করতে পারে, তবেই এটা কার্যকর হবে।”
কাঁচামালের ওপর শুল্ক না কমায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা
সুবিধার পাশাপাশি বাজেটের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবে উঠে এসেছে কাঁচামাল, বিশেষ করে সুতা ও কাপড় আমদানির ওপর শুল্ক কাঠামো অপরিবর্তিত রাখা। এতে ভারত, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন,
“আমরা যেহেতু নিজস্বভাবে পর্যাপ্ত কাঁচামাল তৈরি করতে পারি না, তাই সুতা আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে সরকারকে আরও বাস্তববাদী হতে হবে।”
শ্রমিকদের জন্য বাজেটে নেই আলাদা কিছু
বাজেট বক্তৃতায় তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের জন্য আলাদা কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বা স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনার ঘোষণা পাওয়া যায়নি। এটি একটি বড় হতাশার জায়গা বলে মনে করছেন শ্রমিক নেতারা।
রপ্তানি গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মিজানুর রহমান বলেন,
“শিল্প বাঁচলেই হবে না, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন না হলে কোনো প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। বাজেটে তাদের কথা অনুপস্থিত।”
স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রচেষ্টা, কিন্তু গভীর সংস্কার অনুপস্থিত
২০২৫-২৬ সালের বাজেট তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বড় কোনো বিপ্লবী পরিবর্তন না আনলেও, সংকটের মধ্যে শিল্পকে স্থির রাখার কিছু প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে যে গভীর কাঠামোগত সংস্কার—যেমন কাঁচামাল খরচ কমানো, শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণ বা গ্যাস-বিদ্যুৎ নির্ভরযোগ্যতা—সেগুলোর দিকেই এখন নজর দেওয়া জরুরি।