০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া: ইউটিলিটি ব্যয় বৃদ্ধি শিল্পখাতকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে

বাজেট ঘোষণা ও প্রতিক্রিয়া

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেটকে বাস্তবতাসম্মত ও সময়োপযোগী বলে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো, তবে তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এই বাজেট বাস্তব ভিত্তিতে তৈরি হলেও, তা বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী নেতাদের মিশ্র অভিমত

এফবিসিসিআই (FBCCI):
বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বাজেটকে “বাস্তববাদী ও প্রয়োগযোগ্য” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন যে করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং ব্যাংক খাত থেকে ১.৩৭ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাবও উদ্বেগজনক হতে পারে। এতে ব্যবসা খাতে ঋণের প্রবাহ সীমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা চেম্বার (DCCI):
সভাপতি আশরাফ আহমেদ বাজেটকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন, তবে রাজস্ব আহরণ ও তরল অর্থের সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কর নেট সম্প্রসারণ ও সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমানো জরুরি, যাতে বেসরকারি খাতে যথেষ্ট ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (BCI):
সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বাজেটের বাস্তব ভিত্তিকে স্বীকার করলেও তিনি নীতি-অসঙ্গতি ও বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধিকে শিল্প খাতের বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন। তিনি বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন বাড়ানোর আহ্বান জানান যাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক খাতে চাপ কমে।

বেসিস (BASIS):
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রস্তাবিত ১% মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করেছে। বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, এর ফলে ডিজিটাল খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখা এবং স্মার্ট ডিভাইসে প্রযোজ্য শুল্ক পুনর্বিবেচনার দাবি জানান, যেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পথে প্রতিবন্ধকতা না তৈরি হয়।

অর্থনীতিবিদদের মূল্যায়ন

অর্থনীতিবিদরা বাজেটের একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে এর মুদ্রাস্ফীতিনিয়ন্ত্রণমুখী ‘সংকোচনমূলক’ নীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাজেট ঘাটতি ৪.৬%—গত এক দশকে সর্বনিম্ন। এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারকে নির্দেশ করে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে করজালের পরিধি বাড়ানো এবং কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

ড. আশিকুর রহমানপ্রধান অর্থনীতিবিদপলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট:
তিনি বলেন, বাজেট কাঠামোগতভাবে একটি সঠিক পদক্ষেপ হলেও তার সফলতা নির্ভর করবে কার্যকর বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার ওপর।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

এলডিসি থেকে উত্তরণের পরবর্তী বাস্তবতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা একযোগে নীতি ধারাবাহিকতা, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং কৌশলগত বিনিয়োগকে টেকসই প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি হিসেবে দেখছেন। বাজেট ঘোষণার পর সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী গ্রহণই নির্ধারণ করবে—এই বাজেট কতটা বাস্তবে রূপ পাবে।

বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া: ইউটিলিটি ব্যয় বৃদ্ধি শিল্পখাতকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে

০৬:৫৫:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

বাজেট ঘোষণা ও প্রতিক্রিয়া

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেটকে বাস্তবতাসম্মত ও সময়োপযোগী বলে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো, তবে তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এই বাজেট বাস্তব ভিত্তিতে তৈরি হলেও, তা বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী নেতাদের মিশ্র অভিমত

এফবিসিসিআই (FBCCI):
বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বাজেটকে “বাস্তববাদী ও প্রয়োগযোগ্য” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন যে করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং ব্যাংক খাত থেকে ১.৩৭ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাবও উদ্বেগজনক হতে পারে। এতে ব্যবসা খাতে ঋণের প্রবাহ সীমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা চেম্বার (DCCI):
সভাপতি আশরাফ আহমেদ বাজেটকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন, তবে রাজস্ব আহরণ ও তরল অর্থের সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কর নেট সম্প্রসারণ ও সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমানো জরুরি, যাতে বেসরকারি খাতে যথেষ্ট ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (BCI):
সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বাজেটের বাস্তব ভিত্তিকে স্বীকার করলেও তিনি নীতি-অসঙ্গতি ও বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধিকে শিল্প খাতের বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন। তিনি বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন বাড়ানোর আহ্বান জানান যাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক খাতে চাপ কমে।

বেসিস (BASIS):
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রস্তাবিত ১% মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করেছে। বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, এর ফলে ডিজিটাল খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখা এবং স্মার্ট ডিভাইসে প্রযোজ্য শুল্ক পুনর্বিবেচনার দাবি জানান, যেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পথে প্রতিবন্ধকতা না তৈরি হয়।

অর্থনীতিবিদদের মূল্যায়ন

অর্থনীতিবিদরা বাজেটের একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে এর মুদ্রাস্ফীতিনিয়ন্ত্রণমুখী ‘সংকোচনমূলক’ নীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাজেট ঘাটতি ৪.৬%—গত এক দশকে সর্বনিম্ন। এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারকে নির্দেশ করে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে করজালের পরিধি বাড়ানো এবং কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

ড. আশিকুর রহমানপ্রধান অর্থনীতিবিদপলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট:
তিনি বলেন, বাজেট কাঠামোগতভাবে একটি সঠিক পদক্ষেপ হলেও তার সফলতা নির্ভর করবে কার্যকর বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার ওপর।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

এলডিসি থেকে উত্তরণের পরবর্তী বাস্তবতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা একযোগে নীতি ধারাবাহিকতা, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং কৌশলগত বিনিয়োগকে টেকসই প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি হিসেবে দেখছেন। বাজেট ঘোষণার পর সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী গ্রহণই নির্ধারণ করবে—এই বাজেট কতটা বাস্তবে রূপ পাবে।