বাজেট ঘোষণা: বিনিয়োগ আহ্বানের বার্তা
আজ ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই বাজেট ঘোষণায় স্পষ্টভাবেই শিল্প, রপ্তানি এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকনির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর কাঠামোর কিছু সংস্কার, বড় আকারের সরকারি ব্যয় পরিকল্পনা এবং ব্যাংক খাতের তারল্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এখনই বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়।”
কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আস্থা কি মিলবে?
অবশ্যই প্রশ্ন উঠেছে—নির্বাচিত নয়, বরং একটি পরিপূর্ণভাবে নিযুক্ত (unelected) সরকারের অধীনে এই বাজেট কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে দেশি বা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে?
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আব্দুল হক বলেন, “বাজেটের ভাষা বিনিয়োগবান্ধব, কিন্তু বাস্তবায়নের রাজনৈতিক কাঠামোই প্রধান চ্যালেঞ্জ। একটি অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ নীতিতে কতটা ধারাবাহিকতা রাখতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।”
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল নীতিনির্ধারণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং নির্বাচিত সরকারের দায়বদ্ধতা—এসবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারের পরিপ্রেক্ষিতে এসব কিছুরই ঘাটতি রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কিংবা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজেটের কাগুজে প্রস্তাব নয়, বরং এর বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক স্থায়িত্বকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশের বাজেটে অনেক ইতিবাচক উদ্যোগ রয়েছে, তবে রাজনৈতিক নির্ভরযোগ্যতা ছাড়া তা বিনিয়োগে রূপ নিতে পারে না।”
বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে
বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। এর প্রভাব ব্যাংক খাতের উপর এবং বেসরকারি খাতের ঋণপ্রাপ্তির সুযোগের উপর পড়বে। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও বাজেট বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা।
অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন ইসলাম বলেন, “এই বাজেটে বিনিয়োগ ও শিল্পের প্রতি মনোযোগ আছে, কিন্তু রাজনৈতিক ম্যান্ডেটহীন সরকারের বাস্তবায়নের সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।”
আস্থা গঠনের চেয়েও বড় প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা
২০২৫–২৬ সালের বাজেটে অর্থনৈতিক গতি ফেরানোর চেষ্টা স্পষ্ট, তবে এটি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে শুধু নীতিগত প্রণোদনা নয়, দরকার একটি গণভিত্তিক নির্বাচিত সরকারের আস্থা ও দায়বদ্ধতা। আপাতত বাজেট বিনিয়োগ আহ্বান করতে পারে, কিন্তু আস্থা অর্জন করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্থায়িত্বই বড় নির্ধারক হয়ে থাকবে।