০৮:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের নতুন সেবা মডেল নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি থামছেই না: গরিবের হাঁড়িতে সঙ্কট আবু সাঈদকে নিয়ে ফেসবুক কটুক্তির জেরে স্কুল ছাত্র গ্রেফতার, তিনদিন পর জামিন বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ ঢাকায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা, সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর  সংকেত জুলাই হলি আর্টিজান হামলা: বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মৌলবাদী মানসিকতার বীজ আন্তর্জাতিক বই আমদানিতে শুল্কারোপ: জ্ঞানের দরজায় দেয়াল, খুলছে কি? গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিক কমে যাচ্ছে একশ বছরের গাথা: মাতামুহুরী নদীর উত্থান-পতন জুলাইয়ে সম্ভাব্য বন্যা: কোন এলাকায় বেশি ঝুঁকি

ডিসেম্বরেই নির্বাচনে অনড় বিএনপি, এনসিপি বলছে, জুলাই সনদের আগে ভোটের তারিখ নয়

  • Sarakhon Report
  • ০৬:০০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • 44

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা

এক মাসের মধ্যে সংস্কার শেষে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনে অনড় বিএনপি। তবে এনসিপি স্পষ্ট করে বলেছে, আগে জুলাই সনদ ঘোষণার পরে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ দিতে হবে। অন্যদিকে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ভোট আয়োজনের কথা বলেছে জামায়াতে ইসলামী।

দেশের ৩০টির রাজনৈতিক দলের সাথে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে এসব দাবি তুলে ধরে রাজনৈতিক দলগুলো।

বিকেল পাঁচটার কিছু আগে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক শুরু হয়। এই বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের অন্য সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরু ও শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক ইউনূস এই বৈঠকে বলেন,”আমরা তো এমন বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রাজনীতি সৃষ্টি করি নাই। আমরা সৃষ্টি করেছি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য। দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য”।

সবার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে জুলাই সনদ করার করা হবে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “যতগুলো ঐকমত্যের বিষয় আছে সেগুলোতে যেন আরো কিছু যোগ করতে পারি, তাহলে দেখতে সুন্দর লাগবে, জাতীয় একটা সনদ হলো”।

এই বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপি, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপিসহ বিভিন্ন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই বৈঠকে অংশ নেয়।

ঐকমত্যে পৌঁছাতে মঙ্গলবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে বসবে ঐকমত্য কমিশন।

গত ২০শে মার্চ থেকে দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে প্রথম পর্বের আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বের আলোচনা শেষ হয় ১৯শে মে। সোমবারের এই বৈঠক থেকে শুরু হলো দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ

‘নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার কোন কারণ নেই’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক করে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।

পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন কোন সংস্কার নেই যেগুলো একমাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেছেন, “আমরা মনে করি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা খুবই সম্ভব। এর আগে যে সব সংস্কার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নির্বাচনমূখী সেই সংস্কারগুলো চিহ্নিত করে ঐকমত্যের মাধ্যমে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা যায়”।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

এই বৈঠকে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সংবিধান সংশোধন ছাড়া কিছু কিছু সংস্কার অফিস আদেশের মাধ্যমে, অর্ডিন্যান্স কিংবা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব”।

“সংবিধান সংক্রান্ত যে সমস্ত প্রস্তাব বিভিন্ন দল দিয়েছে, তাতে ওনারা যেভাবে আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন তাতে একটা সনদে আসা সম্ভব। কিছু কিছু বিষয়ে অবশ্যই দ্বিমত থাকবে। সব দল তো সব বিষয়ে একমত হবে এমন আশাও আমরা করি না। তবে যেগুলো ঐকমত্যে আমরা আসতে পারবো সেই বিষয়গুলো অবশ্যই আগামী জাতীয় সংসদে সেগুলো সংশোধন হবে”, যোগ করেন মি. আহমেদ।

তিনি বলেন, “কিছু কিছু বিষয়ে অবশ্যই দ্বিমত থাকবে। সব দলতো সব বিষয়ে একমত হবে এমন আশাও আমরা করি না। তবে যেগুলো ঐকমত্যে আমরা আসতে পারবো সেই বিষয়গুলো অবশ্যই আগামী জাতীয় সংসদে সেগুলো সংশোধনী হবে”।

“কিন্তু তার আগে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরিত হলেই যথেষ্ট। সেটা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারেও আসবে। জাতির কাছে অঙ্গীকার হিসেবেও থাকবে”, যোগ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে কথা বলেন জামায়াত নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের

জামায়াত বলছে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

তবে, এই নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেইং ফিল্ড প্রস্তুত ও প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এই কথা তুলে ধরেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

মি. তাহের বলেন, “আমরা বলেছি জুলাইয়ের ভেতর এই সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে সামান্য দ্বিমত আছে। জুলাইয়ের ভেতর সংস্কার শেষ হবে, তারপর একটা জুলাই সনদ হবে, সেখানে আমরা সকল রাজনৈতিক দল নীতিগত একমত হয়েছি যে সেই চার্টারে আমরা সাইন করবো”।

নির্বাচনের তারিখ প্রসঙ্গে এই জামায়াত নেতা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছে ডিসেম্বর টু জুন। কিছু রাজনৈতিক দল বলেছে ডিসেম্বর। আর আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বলেছি জুন ও মে মাস আবহাওয়াগতভাবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়”।

“ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে সুইটাবেল টাইমে ভোট চেয়েছি। আমরা বলেছি এর মধ্যে একটা ডেট দিলেই জনমনে যে অস্বস্তি আছে সেটা কেটে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় মনযোগী হবে” যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, বৈঠকে সব দল প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তাদের সমর্থন পূর্নব্যক্ত করেছে।

মি. তাহের বলেন, “সব কিছুর মূলে সুষ্ঠু অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন। নীতিগত সকলেই একমত বাংলাদেশের বাইরে ১ কোটির ওপর ভোটার রয়েছে। তাদেরকে ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে বলে দাবি করেছি। সুষ্ঠু ভোটের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথাও বলেছি”।

তিনি জানান, এই বৈঠকে সবাই প্রধান উপদেষ্টার প্রতি তাদের সমর্থন পূর্ণব্যক্ত করেছে।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন নাহিদ ইসলাম

জুলাই সনদের আগে ভোটের তারিখ চায় না এনসিপি

আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয় এই বৈঠকে।

এই বৈঠকে এ বছর জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণা ও এর আগে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করতে প্রধান উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশনের কাছে আহবান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে সর্বদলীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, “জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হবে। পাঁচই অগাস্টের আগেই, জুলাই মাসের মধ্যে যেন জুলাই সনদ কার্যকর করা হয় সকলের স্বাক্ষর নিয়ে, আমরা যেন জুলাই সনদ করতে পারি এবং জুলাই সনদ কার্যকর হওয়ার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা ঠিক হবে না”।

তিনি বলেন, “আমরা আহ্বান জানিয়েছি, ১৬ বছর আমরা অপেক্ষা করেছি, এরপর ১০ মাস অপেক্ষা করেছি, আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে চাই এবং সরকারকে সময় দিতে চাই সব রাজনৈতিক দল মিলে। দুই মাসের মধ্যে আমাদের জুলাই সনদ, যেখানে জনগণ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ শাসনের রূপরেখা, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা দেখতে পারবে”।

“সেই জুলাই সনদ হওয়ার পরে সরকার যাতে নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করে, সে দাবি আমরা জানিয়েছি। জুলাই সনদ হওয়ার পরে আমরা আমাদের দলীয় মন্তব্য জানাব যে আমরা কখন নির্বাচন চাচ্ছি”, যোগ করেন তিনি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে দাবি করে এনসিপি নেতা বলেন, “আমাদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার। নির্বাচন–সংক্রান্ত ও নির্বাচন কমিশন–সংক্রান্ত যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি”।

বিবিসি নিউজ বাংলা

শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের নতুন সেবা মডেল

ডিসেম্বরেই নির্বাচনে অনড় বিএনপি, এনসিপি বলছে, জুলাই সনদের আগে ভোটের তারিখ নয়

০৬:০০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

এক মাসের মধ্যে সংস্কার শেষে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনে অনড় বিএনপি। তবে এনসিপি স্পষ্ট করে বলেছে, আগে জুলাই সনদ ঘোষণার পরে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ দিতে হবে। অন্যদিকে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ভোট আয়োজনের কথা বলেছে জামায়াতে ইসলামী।

দেশের ৩০টির রাজনৈতিক দলের সাথে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে এসব দাবি তুলে ধরে রাজনৈতিক দলগুলো।

বিকেল পাঁচটার কিছু আগে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক শুরু হয়। এই বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের অন্য সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরু ও শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক ইউনূস এই বৈঠকে বলেন,”আমরা তো এমন বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রাজনীতি সৃষ্টি করি নাই। আমরা সৃষ্টি করেছি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য। দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য”।

সবার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে জুলাই সনদ করার করা হবে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “যতগুলো ঐকমত্যের বিষয় আছে সেগুলোতে যেন আরো কিছু যোগ করতে পারি, তাহলে দেখতে সুন্দর লাগবে, জাতীয় একটা সনদ হলো”।

এই বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপি, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপিসহ বিভিন্ন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই বৈঠকে অংশ নেয়।

ঐকমত্যে পৌঁছাতে মঙ্গলবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে বসবে ঐকমত্য কমিশন।

গত ২০শে মার্চ থেকে দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে প্রথম পর্বের আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বের আলোচনা শেষ হয় ১৯শে মে। সোমবারের এই বৈঠক থেকে শুরু হলো দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ

‘নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার কোন কারণ নেই’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক করে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।

পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন কোন সংস্কার নেই যেগুলো একমাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেছেন, “আমরা মনে করি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা খুবই সম্ভব। এর আগে যে সব সংস্কার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নির্বাচনমূখী সেই সংস্কারগুলো চিহ্নিত করে ঐকমত্যের মাধ্যমে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা যায়”।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

এই বৈঠকে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সংবিধান সংশোধন ছাড়া কিছু কিছু সংস্কার অফিস আদেশের মাধ্যমে, অর্ডিন্যান্স কিংবা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব”।

“সংবিধান সংক্রান্ত যে সমস্ত প্রস্তাব বিভিন্ন দল দিয়েছে, তাতে ওনারা যেভাবে আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন তাতে একটা সনদে আসা সম্ভব। কিছু কিছু বিষয়ে অবশ্যই দ্বিমত থাকবে। সব দল তো সব বিষয়ে একমত হবে এমন আশাও আমরা করি না। তবে যেগুলো ঐকমত্যে আমরা আসতে পারবো সেই বিষয়গুলো অবশ্যই আগামী জাতীয় সংসদে সেগুলো সংশোধন হবে”, যোগ করেন মি. আহমেদ।

তিনি বলেন, “কিছু কিছু বিষয়ে অবশ্যই দ্বিমত থাকবে। সব দলতো সব বিষয়ে একমত হবে এমন আশাও আমরা করি না। তবে যেগুলো ঐকমত্যে আমরা আসতে পারবো সেই বিষয়গুলো অবশ্যই আগামী জাতীয় সংসদে সেগুলো সংশোধনী হবে”।

“কিন্তু তার আগে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরিত হলেই যথেষ্ট। সেটা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারেও আসবে। জাতির কাছে অঙ্গীকার হিসেবেও থাকবে”, যোগ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে কথা বলেন জামায়াত নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের

জামায়াত বলছে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

তবে, এই নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেইং ফিল্ড প্রস্তুত ও প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এই কথা তুলে ধরেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

মি. তাহের বলেন, “আমরা বলেছি জুলাইয়ের ভেতর এই সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে সামান্য দ্বিমত আছে। জুলাইয়ের ভেতর সংস্কার শেষ হবে, তারপর একটা জুলাই সনদ হবে, সেখানে আমরা সকল রাজনৈতিক দল নীতিগত একমত হয়েছি যে সেই চার্টারে আমরা সাইন করবো”।

নির্বাচনের তারিখ প্রসঙ্গে এই জামায়াত নেতা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছে ডিসেম্বর টু জুন। কিছু রাজনৈতিক দল বলেছে ডিসেম্বর। আর আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বলেছি জুন ও মে মাস আবহাওয়াগতভাবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়”।

“ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে সুইটাবেল টাইমে ভোট চেয়েছি। আমরা বলেছি এর মধ্যে একটা ডেট দিলেই জনমনে যে অস্বস্তি আছে সেটা কেটে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় মনযোগী হবে” যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, বৈঠকে সব দল প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তাদের সমর্থন পূর্নব্যক্ত করেছে।

মি. তাহের বলেন, “সব কিছুর মূলে সুষ্ঠু অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন। নীতিগত সকলেই একমত বাংলাদেশের বাইরে ১ কোটির ওপর ভোটার রয়েছে। তাদেরকে ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে বলে দাবি করেছি। সুষ্ঠু ভোটের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথাও বলেছি”।

তিনি জানান, এই বৈঠকে সবাই প্রধান উপদেষ্টার প্রতি তাদের সমর্থন পূর্ণব্যক্ত করেছে।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন নাহিদ ইসলাম

জুলাই সনদের আগে ভোটের তারিখ চায় না এনসিপি

আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয় এই বৈঠকে।

এই বৈঠকে এ বছর জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণা ও এর আগে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করতে প্রধান উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশনের কাছে আহবান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি।

ঐকমত্য কমিশনের সাথে সর্বদলীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, “জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হবে। পাঁচই অগাস্টের আগেই, জুলাই মাসের মধ্যে যেন জুলাই সনদ কার্যকর করা হয় সকলের স্বাক্ষর নিয়ে, আমরা যেন জুলাই সনদ করতে পারি এবং জুলাই সনদ কার্যকর হওয়ার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা ঠিক হবে না”।

তিনি বলেন, “আমরা আহ্বান জানিয়েছি, ১৬ বছর আমরা অপেক্ষা করেছি, এরপর ১০ মাস অপেক্ষা করেছি, আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে চাই এবং সরকারকে সময় দিতে চাই সব রাজনৈতিক দল মিলে। দুই মাসের মধ্যে আমাদের জুলাই সনদ, যেখানে জনগণ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ শাসনের রূপরেখা, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা দেখতে পারবে”।

“সেই জুলাই সনদ হওয়ার পরে সরকার যাতে নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করে, সে দাবি আমরা জানিয়েছি। জুলাই সনদ হওয়ার পরে আমরা আমাদের দলীয় মন্তব্য জানাব যে আমরা কখন নির্বাচন চাচ্ছি”, যোগ করেন তিনি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে দাবি করে এনসিপি নেতা বলেন, “আমাদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার। নির্বাচন–সংক্রান্ত ও নির্বাচন কমিশন–সংক্রান্ত যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি”।

বিবিসি নিউজ বাংলা