১০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

পর্ব ৩: ‘আকাশের নিচে মানুষ’ — ঈদের দিনেও বঞ্চিত মানুষের গল্প

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"beautify":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

নাটকের নাম: আকাশের নিচে মানুষ
রচয়িতা ও পরিচালক: মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
প্রচারকাল: ঈদুল আযহা, ১৯৮২, বাংলাদেশ টেলিভিশন
অভিনয়: সেলিম আল দীন, শবনম ফারিয়া, আনোয়ার হোসেন, রেহানা জলি
প্রধান চরিত্র: করিম (সেলিম আল দীন)

নাটকের সারসংক্ষেপ ও বিশ্লেষণ:

‘আকাশের নিচে মানুষ’ ছিল এক ব্যতিক্রমী ঈদ নাটক যা মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির ঈদ উদযাপন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতার চিত্র উপস্থাপন করে। নাটকটির মূল চরিত্র করিম, একজন রিকশাচালক, যার জন্য ঈদ মানে বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা হলেও, দিনটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় বঞ্চনার এক প্রতিচ্ছবিতে। নাটকটি রাজধানী ঢাকার এক ঘিঞ্জি, নিম্নবিত্ত অঞ্চলে সংঘটিত, যেখানে মানুষ ঈদের নতুন জামা, খাবার কিংবা আত্মীয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পায় না।

Roar বাংলা - নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ও তার নাটকের ভুবন

নাটকটির শুরু হয় ভোরের আলোয় করিমের ঘুম ভাঙার মধ্য দিয়ে। তার স্ত্রী অসুস্থ, ঔষধ কিনতে টাকা নেই, কিন্তু ঈদের দিনে কাজ পাওয়া কঠিন। করিম রাস্তায় নামে, কিন্তু যাত্রী মেলে না, বরং এক পুলিশ তাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়। এরপর করিম এক বস্তির গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়, বিনিময়ে কিছু পয়সা পায় না, কিন্তু মানবিক তৃপ্তি পায়। নাটকের পরের দৃশ্যে দেখা যায়, এক ভবঘুরে বাচ্চা করিমকে জিজ্ঞেস করছে, “চাচা, আপনি কি আজ গোশত খাবেন?”—এই একটি প্রশ্নেই নাটকের অন্তর্নিহিত দুঃখ উঠে আসে।

নাটকে বারবার আকাশের দিকে তাকানো ও করিমের সংলাপ “আকাশটা খুব নীল, কিন্তু পেটটা খালি”—এক অসামান্য রূপক হিসেবে কাজ করে। এই আকাশ যেন ঈদের আশ্বাস দেয়, কিন্তু মাটির নিচে থাকা মানুষগুলো সেই আশ্বাস থেকে বঞ্চিত।

অভিনয় ও চরিত্র বিশ্লেষণ:

সেলিম আল দীন এই নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, একজন লেখকও চরিত্রের গভীরতা অনুধাবন করে অসাধারণ উপস্থাপন করতে পারেন। করিম চরিত্রে তিনি ছিলেন সংবেদনশীল, সংযত এবং বাস্তববাদী। তার সংলাপগুলো খুব সরল হলেও চোখের ভাষা ও শরীরের ভঙ্গিমা প্রতিটি দৃশ্যকে স্পষ্ট করে তুলে ধরে।

শবনম ফারিয়া করিমের স্ত্রীর চরিত্রে ছিলেন অসাধারণ। সংলাপ কম হলেও, তার ক্লান্ত মুখ ও চোখের জল নাটকে আবেগের ভার বহন করে।

পাঠ্যবই নিয়ে অভিযোগ, দায় স্বীকার করে যা বললেন জাফর ইকবাল

আনোয়ার হোসেন এক ভবঘুরে বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি করিমের সঙ্গে রাস্তায় কিছু সময় কাটান। তার একটি সংলাপ—“ঈদ এলেই মানুষ মনে রাখে কে নেই, কিন্তু যাদের আছে, তারাও তো কাঁদে”—নাটকের মর্মবাণীকে গভীরভাবে প্রতিফলিত করে।

নির্দেশনার গুণমান:

মুহাম্মদ জাফর ইকবালের নির্দেশনায় নাটকটি ছিল বাস্তবতার খুব কাছাকাছি। সেটে কোনো আলংকারিকতা ছিল না। রাস্তাঘাট, ফুটপাথ আর খোলা আকাশ ছিল নাটকের প্রকৃত মঞ্চ। আবহসংগীত ছিল হালকা বাঁশি ও চমৎকার নিঃশব্দতা।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

এই নাটক ঈদের দিনে সমাজের এক বিস্মৃত শ্রেণিকে তুলে ধরার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিটিভির ঐতিহাসিক ঈদ নাটকের তালিকায় এটি আজও এক ব্যতিক্রম উদাহরণ।

পর্ব ৩: ‘আকাশের নিচে মানুষ’ — ঈদের দিনেও বঞ্চিত মানুষের গল্প

১০:০০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫

নাটকের নাম: আকাশের নিচে মানুষ
রচয়িতা ও পরিচালক: মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
প্রচারকাল: ঈদুল আযহা, ১৯৮২, বাংলাদেশ টেলিভিশন
অভিনয়: সেলিম আল দীন, শবনম ফারিয়া, আনোয়ার হোসেন, রেহানা জলি
প্রধান চরিত্র: করিম (সেলিম আল দীন)

নাটকের সারসংক্ষেপ ও বিশ্লেষণ:

‘আকাশের নিচে মানুষ’ ছিল এক ব্যতিক্রমী ঈদ নাটক যা মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির ঈদ উদযাপন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতার চিত্র উপস্থাপন করে। নাটকটির মূল চরিত্র করিম, একজন রিকশাচালক, যার জন্য ঈদ মানে বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা হলেও, দিনটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় বঞ্চনার এক প্রতিচ্ছবিতে। নাটকটি রাজধানী ঢাকার এক ঘিঞ্জি, নিম্নবিত্ত অঞ্চলে সংঘটিত, যেখানে মানুষ ঈদের নতুন জামা, খাবার কিংবা আত্মীয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পায় না।

Roar বাংলা - নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ও তার নাটকের ভুবন

নাটকটির শুরু হয় ভোরের আলোয় করিমের ঘুম ভাঙার মধ্য দিয়ে। তার স্ত্রী অসুস্থ, ঔষধ কিনতে টাকা নেই, কিন্তু ঈদের দিনে কাজ পাওয়া কঠিন। করিম রাস্তায় নামে, কিন্তু যাত্রী মেলে না, বরং এক পুলিশ তাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়। এরপর করিম এক বস্তির গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়, বিনিময়ে কিছু পয়সা পায় না, কিন্তু মানবিক তৃপ্তি পায়। নাটকের পরের দৃশ্যে দেখা যায়, এক ভবঘুরে বাচ্চা করিমকে জিজ্ঞেস করছে, “চাচা, আপনি কি আজ গোশত খাবেন?”—এই একটি প্রশ্নেই নাটকের অন্তর্নিহিত দুঃখ উঠে আসে।

নাটকে বারবার আকাশের দিকে তাকানো ও করিমের সংলাপ “আকাশটা খুব নীল, কিন্তু পেটটা খালি”—এক অসামান্য রূপক হিসেবে কাজ করে। এই আকাশ যেন ঈদের আশ্বাস দেয়, কিন্তু মাটির নিচে থাকা মানুষগুলো সেই আশ্বাস থেকে বঞ্চিত।

অভিনয় ও চরিত্র বিশ্লেষণ:

সেলিম আল দীন এই নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, একজন লেখকও চরিত্রের গভীরতা অনুধাবন করে অসাধারণ উপস্থাপন করতে পারেন। করিম চরিত্রে তিনি ছিলেন সংবেদনশীল, সংযত এবং বাস্তববাদী। তার সংলাপগুলো খুব সরল হলেও চোখের ভাষা ও শরীরের ভঙ্গিমা প্রতিটি দৃশ্যকে স্পষ্ট করে তুলে ধরে।

শবনম ফারিয়া করিমের স্ত্রীর চরিত্রে ছিলেন অসাধারণ। সংলাপ কম হলেও, তার ক্লান্ত মুখ ও চোখের জল নাটকে আবেগের ভার বহন করে।

পাঠ্যবই নিয়ে অভিযোগ, দায় স্বীকার করে যা বললেন জাফর ইকবাল

আনোয়ার হোসেন এক ভবঘুরে বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি করিমের সঙ্গে রাস্তায় কিছু সময় কাটান। তার একটি সংলাপ—“ঈদ এলেই মানুষ মনে রাখে কে নেই, কিন্তু যাদের আছে, তারাও তো কাঁদে”—নাটকের মর্মবাণীকে গভীরভাবে প্রতিফলিত করে।

নির্দেশনার গুণমান:

মুহাম্মদ জাফর ইকবালের নির্দেশনায় নাটকটি ছিল বাস্তবতার খুব কাছাকাছি। সেটে কোনো আলংকারিকতা ছিল না। রাস্তাঘাট, ফুটপাথ আর খোলা আকাশ ছিল নাটকের প্রকৃত মঞ্চ। আবহসংগীত ছিল হালকা বাঁশি ও চমৎকার নিঃশব্দতা।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

এই নাটক ঈদের দিনে সমাজের এক বিস্মৃত শ্রেণিকে তুলে ধরার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিটিভির ঐতিহাসিক ঈদ নাটকের তালিকায় এটি আজও এক ব্যতিক্রম উদাহরণ।