সাবেক সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট “ভুল বোঝাবুঝি” দূর করতে আগামী সপ্তাহে লন্ডন সফরে আসা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ করেছেন। এসব অভিযোগের জেরে তিনি সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ঢাকার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, তিনি সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ব্যক্তিগত সুবিধা পেয়েছেন। অন্যদিকে, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে একাধিক অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দাবি করেছে—টিউলিপ সিদ্দিক বা তাঁর মা ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে ৭,২০০ বর্গফুটের একটি প্লট পেয়েছেন।
সিদ্দিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, এগুলো “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” এবং ভিত্তিহীন। তিনি আরও জানান, এসব অভিযোগ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করা হয়নি।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীর মানদণ্ডবিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করলেও, নতুন লেবার সরকারের কাজে “বাধা” সৃষ্টি হওয়ায় তিনি অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে সিদ্দিক লেখেন, লন্ডন সফরে রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে দেখা হলে “ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশন যে ভুল ধারণা ছড়িয়েছে, তা পরিষ্কার করা সহজ হবে—যেন আমাকে খালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়টি নিয়ে জবাবদিহি করতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি লন্ডনে জন্ম নেওয়া একজন যুক্তরাজ্যের নাগরিক; Hampstead ও Highgate-এর মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করছি গত দশ বছর ধরে।
“বাংলাদেশে আমার কোনও সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। দেশটি আমার হৃদয়স্পর্শী হলেও আমার জীবন, বসবাস কিংবা পেশা সেখানে গড়ে ওঠেনি।
“আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে বিষয়টি স্পষ্ট করতে চাইলেও তারা লন্ডনের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ঢাকার কোনও ভুয়া ঠিকানায় কাগজপত্র পাঠিয়ে যাচ্ছে।”
সিদ্দিক অভিযোগ করেন, “এই কল্পিত তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপই আগে থেকেই গণমাধ্যমে ফাঁস করা হয়; কিন্তু আমার আইনি দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয় না। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝবেন, এসব প্রতিবেদন আমার নির্বাচনী এলাকার ও দেশের কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।”
দুর্নীতি দমন কমিশন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিপক্ষে অবকাঠামো খাতে শত শত কোটি পাউন্ড আত্মসাতের তদন্ত করছে, যা মূলত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ববি হাজ্জাজের অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয়।
সিদ্দিকের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে চলছে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নোংরা ক্যাম্পেইন”, যা চালাচ্ছেন তাঁর খালার বিরোধীরা।
গত মাসে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবর প্রকাশিত হয়। তবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো খবর নেই; কোনো আদালতে হাজির হওয়ার নোটিশও পাননি। যুক্তরাজ্যের ২০০৩ সালের প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের স্পষ্ট প্রমাণ না পেলে ব্রিটিশ আদালত বা মন্ত্রী কাউকে গ্রেপ্তার করেন না।
গত বছর নিজেই মানদণ্ড উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি পাঠানোর পর, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ম্যাগনাস ঘোষণা করেন যে সিদ্দিকের সম্পদ আইনি উপায়ে অর্জিত এবং তিনি কোনো অনিয়ম করেননি। তবে বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় সম্মানহানির ঝুঁকি সম্পর্কে আরও সচেতন থাকতে পারতেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তদন্তে আরও উঠে আসে, ২০১৩ সালে শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে মস্কোতে স্বাক্ষরিত একটি পারমাণবিক চুক্তির সময় সিদ্দিকের উপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ। সিদ্দিক জানান, তিনি সেখানে সামাজিক ও পর্যটক হিসেবেই গিয়েছিলেন, যা উপদেষ্টা মেনে নেন।
গত মাসেই ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিলাসবহুল লন্ডনের সম্পত্তি জব্দ করেছে, যা সিদ্দিকের খালার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন বলে মনে করা হয়।
(৮ জুন , গার্ডিয়ানে প্রকাশিত)