প্রতিদিন ২০০ কোটির বেশি কাপ
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি কাপ কফি পান করা হয়। যারা এই সংখ্যার অংশ তাদের জন্য সুসংবাদ হলো, মাঝারি পরিমাণে নিয়মিত কফি পান শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়—বরং কিছু ক্ষেত্রে উপকারীও হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কফির উপাদান যেমন ক্যাফেস্টল, কাহওয়েওল, ক্যাফেইন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড কোষ ক্ষয় ও জ্বালাভাব কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেও সম্ভাবনা
পর্তুগালের ইউনিভার্সিটি অব পোর্তোর মারজিয়ে মোয়েন-ফার্ডের নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখা যায়, কফির উপাদান ক্যাফেস্টল ও কাহওয়েওল (যা অপরিশোধিত কফিতে বেশি থাকে) টিউমারের আশেপাশে নতুন রক্তনালী গঠনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়, ফলে টিউমার বৃদ্ধিও ধীর হয়। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড শরীরের অভ্যন্তরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান তৈরির সম্ভাবনাও হ্রাস করে।
২০১৬ সালে জার্নাল অব সেলুলার বায়োকেমিস্ট্রি-তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। পরে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের জিন-কিয়ং ওহ-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মেনোপজ-পরবর্তী নারী দিনে তিন থেকে চার কাপ কফি পান করেন, তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক কম। জাপানেও এ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে তিন বা তার বেশি কাপ কফি পান করেন, তাদের লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
মানসিক ও স্নায়বিক রোগ প্রতিরোধে কফির ভূমিকা
ক্যাফেইন একটি উত্তেজক উপাদান, যা মেজাজ ভালো করে এবং ক্লান্তি দূর করে। তাই গবেষকরা পরীক্ষা করছেন, এটি কী আলঝেইমার, পারকিনসন, বা বিষণ্নতার মতো মানসিক ও স্নায়বিক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে কিনা। তাইপেই মেডিকেল ইউনিভার্সিটির হং চিয়েন-তাই ২০২০ সালে এক গবেষণায় জানান, যেসব পারকিনসন রোগী নিয়মিত ক্যাফেইন গ্রহণ করেন, তাদের রোগের গতি ধীর হয়।
তবে এসব গবেষণার ফল সবসময় একই রকম হয়নি। অনেক সময় ফলাফল ভিন্ন আসে, যার একটি কারণ কফির বিভিন্ন রূপ। কফির গাছের ভিন্ন প্রজাতি, ভিন্নভাবে রোস্টিং, এবং নানা উপায়ে পরিবেশন করায় এর উপাদানেও তারতম্য ঘটে।
অতিরিক্ত কফি পান ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মাঝারি পরিমাণে কফি পান সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্পষ্ট। দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি ক্যাফেইন (একটি এসপ্রেসোতে প্রায় ৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে) গ্রহণ করলে মাথাব্যথা, স্নায়ুবিক উত্তেজনা, খিটখিটে মেজাজ, মাংসপেশির কাঁপুনি ও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। এটি উদ্বেগজনিত রোগ বা হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা আরও খারাপ করে তুলতে পারে রক্তচাপ বাড়িয়ে। তবে কফির অন্যান্য উপাদানের অতিরিক্ত গ্রহণে কী হয়, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
চিনি, দুধ, সিরাপ—লুকিয়ে থাকা ঝুঁকি
অনেকেই কফিতে চিনি, দুধ, সিরাপ বা ক্রিম মেশান—এগুলো অতিরিক্ত ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। জার্নাল অব নিউট্রিশন-এ মে মাসে প্রকাশিত ৪৬ হাজার প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা দিনে এক থেকে তিন কাপ কফি পান করেন, তারা পরবর্তী দশ বছরে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ শতাংশ কম দেখিয়েছেন। তবে তারা যদি এক চামচের বেশি ক্রিম বা অর্ধ চামচের বেশি চিনি কফিতে মেশান, তবে এই উপকারিতাও নষ্ট হয়ে যায়।
উপকার পেতে হলে কফি খান পরিমিতভাবে
সবশেষে পরামর্শ হলো—কফি পানে পরিমিতি বজায় রাখুন, এবং যতটা সম্ভব কালো কফি (ব্ল্যাক কফি) পান করুন। যত তেতোই হোক, স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে সেটাই সবচেয়ে নিরাপদ।