বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। ২০৫০ সাল নাগাদ এর চাহিদা আরও ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস, অথচ জলবায়ু পরিবর্তন, উর্বর মাটি হ্রাস, উচ্চ নিঃসরণ ও সীমিত পুষ্টিগুণ—সব মিলিয়ে “যেমন চলছে” নীতি আর টেকসই নয়। এ বাস্তবতায় ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারত দ্রুত ফলন, কম নিঃসরণ ও পানিসাশ্রয়ের লক্ষ্যে নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে; বিশ্বব্যাংক এসব প্রচেষ্টায় সহায়তা দিচ্ছে।
ভিয়েতনামে উচ্চমানের চাল কর্মসূচি
বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনামের অর্ধেক চাল আসে মেকং ডেল্টা থেকে, কিন্তু এখান থেকেই কৃষিক্ষেত্রের প্রায় অর্ধেক গ্রিনহাউস গ্যাস ছাড়ে। “এক মিলিয়ন হেক্টর উচ্চমানের চাল” প্রকল্পে সরকার বিকল্প ভেজা–শুকনা (AWD) পদ্ধতিসহ কম নিঃসরণকারী প্রযুক্তি চালু করেছে। ২০১৬-২২ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১ লাখ ৫৫ হাজার পরিবার ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরে নতুন কৌশল শিখেছে। কৃষক লে দং ফুয়ং জানালেন, “বীজ ও সারে খরচ কমিয়েও আমি হেক্টরপ্রতি ৮ টন ফলন পাই—পানির খরচও অনেক কম।”
ইন্দোনেশিয়ায় সেচের আধুনিকায়ন
দেশটির ৭৭ শতাংশ কৃষক ধানের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু ক্ষুদ্র সেচব্যবস্থার অব্যবস্থাপনায় ফলন বাধাগ্রস্ত হতো। এখন ‘সেচ সেবা চুক্তি’ পদ্ধতিতে পানি সরবরাহকারী ও কৃষকের মধ্যে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হচ্ছে; উপকৃত ৩ লাখ ৫০ হাজার কৃষকের একজন সুকেনি বললেন, “আগে সময়মতো পানি পেতাম না; এখন ধান পরিপুষ্ট, লাভও বাড়ছে।”
বাংলাদেশের দ্বিগুণ ফলনের লক্ষ্য
এক সময় ৯.৭ মিলিয়ন টন থেকে আজ ৪১ মিলিয়ন টনে পৌঁছানোর পরও গত দশকে যান্ত্রিকীকরণ ও মাটি অবক্ষয় ফলন বাড়ার গতি থামিয়েছে। সরকার ২০৫০ সালের মধ্যে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৪ টন থেকে ৬ টনে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে চাষের পরিধি, যান্ত্রিকীকরণ ও কম গ্লাইসেমিক সূচকের উন্নত জাত ছড়িয়ে দিতে বিনিয়োগ পুনর্বিন্যাসের কথা রয়েছে।
ভারতের চার দফা রোডম্যাপ
প্রায় ৪ কোটি ৭৭ লাখ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেও তুলনামূলক কম ফলনশীল ভারত চারটি লক্ষ্য ঠিক করেছে—উৎপাদনশীলতা, পানির দক্ষতা, নিঃসরণ হ্রাস ও ফসল বৈচিত্র্য। সরাসরি বপন, জৈব মাটি সংরক্ষণ ও মৌসুমের মাঝামাঝি নিষ্কাশনের মতো প্রযুক্তি এতে ব্যবহার হবে। বিশাল ধানখাত হওয়ায় এসব উন্নয়নের প্রভাব শুধু দেশে নয়, বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তাতেও পড়বে।
বৈশ্বিক সহযোগিতায় ‘নেক্সট জেনারেশন রাইস’
দেশগুলোর অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক ‘স্কেলিং নেক্সট জেনারেশন রাইস ইমপ্যাক্ট প্রোগ্রাম’ চালু করছে, যাতে উদ্ভাবনী কৌশল দ্রুত ছড়ায়। ভিয়েতনামের AWD থেকে ইন্দোনেশিয়ার সেচ চুক্তি, বাংলাদেশের দ্বিগুণ ফলনের টার্গেট ও ভারতের চার-স্তর পরিকল্পনা—সবই দেখাচ্ছে, সঠিক সহায়তা ও নীতিগত দৃষ্টি থাকলে চালখাতে টেকসই রূপান্তর সম্ভব। এতে শুধু খাদ্যনিরাপত্তা নয়, কোটি কৃষকের জীবিকাও আরও স্থিতিশীল হবে।