বাংলাদেশের আবহাওয়া ধীরে ধীরে বর্ষা ঋতুর চিরচেনা রূপে প্রবেশ করছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে আগামী তিন দিনে বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ ও ঝোড়ো বাতাসের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। আবহাওয়ার এ ধরনের আচরণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় যেমন প্রভাব ফেলবে, তেমনি কৃষি, যোগাযোগ এবং জনস্বাস্থ্যের দিক থেকেও তা হবে গুরুত্বপূর্ণ।
রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি আর মেঘের ছায়া
ঢাকাবাসীকে এই তিন দিনে প্রায় সারাদিনই মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টির সঙ্গী হতে হবে।
১৬ জুন (আজ সোমবার):
সকাল থেকে আকাশে মেঘের আনাগোনা রয়েছে। সকালে সামান্য বৃষ্টির পর দুপুর থেকে বিকেলের দিকে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে প্রায় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। বাতাস থাকবে কিছুটা দমকা এবং আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি হবে।
১৭ জুন (মঙ্গলবার):
এই দিনটিও মূলত মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টিপাতের অধীন থাকবে। দিনের বেশিরভাগ সময় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। ঝোড়ো বাতাসেরও সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে দাঁড়াবে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় ২৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকবে। যাদের বাইরে কাজ রয়েছে, তাদের ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
১৮ জুন (বুধবার):
বুধবারও পরিস্থিতি প্রায় একই থাকবে। দুপুরের পর থেকে ঝোড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে। দিনের তাপমাত্রা থাকবে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি এবং রাতের দিকে তাপমাত্রা থাকবে প্রায় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভিজে রাস্তা ও পানি জমে যাওয়া শহরের ট্রাফিককে ধীরগতির করে তুলতে পারে।
দেশের অন্যান্য অংশেও একই রকম পূর্বাভাস
ঢাকার বাইরের অনেক জেলাতেও একই ধরনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী এবং সিলেট অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
কৃষির জন্য বর্ষার আশীর্বাদ
বর্ষাকালের বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের কৃষির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। বিশেষ করে আমন ধানের চারা রোপণ ও শাকসবজি চাষে এই বৃষ্টির যথেষ্ট উপকার পাওয়া যাবে। তবে অতিবৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা এবং বীজতলার ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সতর্কতা
বর্ষার এ সময়ে ডেঙ্গু, মশাবাহিত রোগ, সর্দি-কাশি ও চর্মরোগ বাড়ার প্রবণতা থাকে। তাই নাগরিকদের উচিত হবে:
- বৃষ্টির জমা পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা।
- বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা।
- প্রয়োজনে বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে ছাতা বা রেইনকোট ব্যবহার করা।
- শিশুরা যাতে ভিজে না যায়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা।
যাতায়াত ও যানজটের দুর্ভোগ বাড়তে পারে
বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে মিরপুর, রামপুরা, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশানসহ বেশ কিছু এলাকায় যানজটের সমস্যা মারাত্মক আকার নিতে পারে। তাই জরুরি কাজ ছাড়া নাগরিকদের অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়াই ভালো হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরামর্শ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশের বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করায় এ ধরনের বৃষ্টির প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। বৃষ্টির এ ধারা আগামী সপ্তাহজুড়েও অব্যাহত থাকতে পারে। তাই নৌযান চলাচল, পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা এবং কৃষকদেরকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।