যুক্তরাজ্যের গোপন গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ (সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস)-এর ১৮তম প্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ব্লেইজ মেট্রুয়েলি, যিনি ‘কিউ’ নামে পরিচিত প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শাখার পরিচালক, ১৯৯৯ সালে এমআই৬-এ যোগ দেন এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ‘বেইজিং বারবারা’ বিতর্ক
এই পদে মেট্রুয়েলির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডেম বারবারা উডওয়ার্ড, যিনি ২০১৫–২০২০ সালে চীনে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সমালোচকেরা তাঁকে চীনের প্রতি ‘অতি নমনীয়’ বলে আক্রমণ করলে তাঁর সম্ভাবনা ক্ষুণ্ন হয়। সমালোচনার মুখে তাঁকে ‘বেইজিং বারবারা’ আখ্যাও দেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যের চীন নীতি বদলে যাওয়া প্রেক্ষাপট
গত এক দশকে যুক্তরাজ্যের চীন নীতিতে ‘গোল্ডেন এরা’র উষ্ণ সম্পর্ক শীতল হয়ে কড়া অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর বেইজিংকে ঘিরে ব্রিটিশ কূটনীতিতে নতুন সমন্বয় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বাণিজ্যের স্বার্থে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টাও করছেন।
নতুন ‘সি’-এর পরিচয় ও অর্জন
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেমব্রুক কলেজে নৃতত্ত্ব পড়া মেট্রুয়েলি ১৯৯৭ সালে উইমেনস বোট রেসে কেমব্রিজ দলকে জয় এনে দেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি এমআই৫-এ পরিচালক স্তরের পদেও দায়িত্ব পালন করেন। গত গ্রীষ্মে রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্মদিনের সম্মানসূচক তালিকায় পররাষ্ট্রনীতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে সিএমজি উপাধি দেওয়া হয়।
প্রতিক্রিয়া ও অগ্রাধিকারের ইঙ্গিত
নতুন চিফ মেট্রুয়েলি বলেছেন, ‘এমআই৬, এমআই৫ এবং জিসিএইচকিউয়ের সঙ্গে একযোগে ব্রিটিশ জনগণের নিরাপত্তা রক্ষাই আমার লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানান, প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিযোগিতা ও জোটবদ্ধ প্রতিপক্ষের যুগে ব্রিটেনকে নিরাপদ রাখতে মেট্রুয়েলির নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ হবে। তিনি গোয়েন্দা খাতে অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের কথাও উল্লেখ করেন।
বিদায়ী প্রধানের প্রশংসা
২০২০ সাল থেকে এমআই৬-এর প্রধান থাকা স্যার রিচার্ড মুর মেট্রুয়েলির নিয়োগকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, প্রযুক্তি বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্ব সংস্থাকে এগিয়ে রাখবে।
পরবর্তী কর্ণধারের দায়িত্ব
এখন থেকে মেট্রুয়েলি সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির অধীনে কাজ করবেন। ল্যামি তাঁকে ‘যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞ হাতে গড়া আদর্শ নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এই ঐতিহাসিক নিয়োগ শুধু গোয়েন্দা জগতেই নয়, ব্রিটিশ নীতিনির্ধারণেও নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল—যেখানে প্রযুক্তি, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও কূটনীতি একসঙ্গে মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জে নারী নেতৃত্ব প্রথমবারের মতো শীর্ষ আসনে।