১১:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

কম খরচে বেশি বিদ্যুৎ: উন্নয়নশীল দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা

শক্তির চাহিদা বাড়ছেকিন্তু অপচয়ও ভয়াবহ

বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে গরম আবহাওয়ায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার, ভারী শিল্প উৎপাদন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক তথ্যকেন্দ্রগুলোর প্রসার। কিন্তু এই চাহিদা মেটাতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার পেছনে খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ দক্ষতা বা এনার্জি এফিসিয়েন্সি হতে পারে সবচেয়ে কম খরচে টেকসই সমাধান।

বিশ্বব্যাংকের সদ্যপ্রকাশিত প্রতিবেদন ‘কম খরচে বেশি বিদ্যুৎ: প্রবৃদ্ধি ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ দক্ষতা বৃদ্ধির রূপরেখা’ এই সম্ভাবনার বাস্তব উদাহরণ ও নীতিমালাগুলো তুলে ধরেছে।

বৈশ্বিক বিদ্যুৎ দক্ষতা সংকট

  • বর্তমান বিশ্বে উৎপাদিত জ্বালানির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অপচয় হয়, যা বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ ক্ষতির সমান।
  • ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জ্বালানি বিনিয়োগের অন্তত ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ দক্ষতা বাড়াতে ব্যয় করতে হবে।
  • উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যুৎ চাহিদা ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি বাড়বে।
  • অথচ বিদ্যুৎ দক্ষতা এখনো বেশিরভাগ সরকারের অগ্রাধিকারে নেই। প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তথ্য ঘাটতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে।

বিদ্যুৎ দক্ষতায় বিনিয়োগ মানে বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত

  • বিদ্যুৎ দক্ষতায় প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগে ৩ থেকে ৫ ডলার পর্যন্ত আর্থিক লাভ পাওয়া সম্ভব।
  • এর পাশাপাশি কমে যাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিদ্যুৎ ব্যয়, সরকারি ব্যয় ও পরিবেশ দূষণ; বাড়বে টেকসইতা ও সাশ্রয়ী জ্বালানির প্রাপ্যতা।
  • একটি সাধারণ মধ্যম আয়ের দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ দক্ষতায় বিনিয়োগ করে প্রায় ১১.৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে।

কর্মসংস্থান ও প্রতিযোগিতায় বাড়তি সুবিধা

  • ২০২২ সালে বিদ্যুৎ দক্ষতা খাত ছিল বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের সর্ববৃহৎ চাকরির উৎস, যেখানে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ কাজ করে।
  • পোল্যান্ডে ‘ক্লিন এয়ার প্রাইওরিটি প্রোগ্রাম’ নামে একটি উদ্যোগে ১০ বছরে ১ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ভারতের ‘এনার্জি এফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড’ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদন ও বিতরণে কয়েক হাজার সরাসরি ও পরোক্ষ চাকরি তৈরি করেছে।
  • কসোভোতে বিদ্যুৎ দক্ষতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি প্রকল্পে ৪০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। একই সঙ্গে ভবন রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং জ্বালানি নিরীক্ষা খাতে দক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

বৃহৎ কর্মসূচির আহ্বান

  • সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও দাতা সংস্থাগুলোকে একযোগে বিদ্যুৎ দক্ষতাকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

  • ছোট প্রকল্প নয়, বরং হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও শিল্পখাতে জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি নিতে হবে।
  • এই জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, যাতে বিনিয়োগ সহজ হয়।
  • বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে নীতিগত সহায়তা, অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়ে দেশগুলোকে ধাপে ধাপে বড় প্রকল্পের পথে এগিয়ে নিতে হবে।

বিশ্বব্যাংক কী করছে?

  • বিশ্বব্যাংক গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় এখন আর ক্ষুদ্র প্রকল্প নয়, বরং বৃহৎ কর্মসূচি, উদ্ভাবনী অর্থায়ন ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
  • ‘স্কেলিং আপ এনার্জি এফিসিয়েন্সি একাডেমি’-এর মাধ্যমে অংশীদারদের প্রশিক্ষণ, জ্ঞানবিনিময় ও সক্ষমতা গড়ে তোলা হচ্ছে।
  • ‘LEAP’ (Leading Efficiency Action Platform) পদ্ধতির মাধ্যমে নীতিগতভাবে দেশগুলোর বিদ্যুৎ পরিকল্পনায় দক্ষতাকে কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।

কম খরচে বেশি বিদ্যুৎ: উন্নয়নশীল দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা

০২:০০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

শক্তির চাহিদা বাড়ছেকিন্তু অপচয়ও ভয়াবহ

বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে গরম আবহাওয়ায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার, ভারী শিল্প উৎপাদন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক তথ্যকেন্দ্রগুলোর প্রসার। কিন্তু এই চাহিদা মেটাতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার পেছনে খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ দক্ষতা বা এনার্জি এফিসিয়েন্সি হতে পারে সবচেয়ে কম খরচে টেকসই সমাধান।

বিশ্বব্যাংকের সদ্যপ্রকাশিত প্রতিবেদন ‘কম খরচে বেশি বিদ্যুৎ: প্রবৃদ্ধি ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ দক্ষতা বৃদ্ধির রূপরেখা’ এই সম্ভাবনার বাস্তব উদাহরণ ও নীতিমালাগুলো তুলে ধরেছে।

বৈশ্বিক বিদ্যুৎ দক্ষতা সংকট

  • বর্তমান বিশ্বে উৎপাদিত জ্বালানির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অপচয় হয়, যা বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ ক্ষতির সমান।
  • ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জ্বালানি বিনিয়োগের অন্তত ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ দক্ষতা বাড়াতে ব্যয় করতে হবে।
  • উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যুৎ চাহিদা ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি বাড়বে।
  • অথচ বিদ্যুৎ দক্ষতা এখনো বেশিরভাগ সরকারের অগ্রাধিকারে নেই। প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তথ্য ঘাটতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে।

বিদ্যুৎ দক্ষতায় বিনিয়োগ মানে বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত

  • বিদ্যুৎ দক্ষতায় প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগে ৩ থেকে ৫ ডলার পর্যন্ত আর্থিক লাভ পাওয়া সম্ভব।
  • এর পাশাপাশি কমে যাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিদ্যুৎ ব্যয়, সরকারি ব্যয় ও পরিবেশ দূষণ; বাড়বে টেকসইতা ও সাশ্রয়ী জ্বালানির প্রাপ্যতা।
  • একটি সাধারণ মধ্যম আয়ের দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ দক্ষতায় বিনিয়োগ করে প্রায় ১১.৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে।

কর্মসংস্থান ও প্রতিযোগিতায় বাড়তি সুবিধা

  • ২০২২ সালে বিদ্যুৎ দক্ষতা খাত ছিল বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের সর্ববৃহৎ চাকরির উৎস, যেখানে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ কাজ করে।
  • পোল্যান্ডে ‘ক্লিন এয়ার প্রাইওরিটি প্রোগ্রাম’ নামে একটি উদ্যোগে ১০ বছরে ১ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ভারতের ‘এনার্জি এফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড’ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদন ও বিতরণে কয়েক হাজার সরাসরি ও পরোক্ষ চাকরি তৈরি করেছে।
  • কসোভোতে বিদ্যুৎ দক্ষতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি প্রকল্পে ৪০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। একই সঙ্গে ভবন রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং জ্বালানি নিরীক্ষা খাতে দক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

বৃহৎ কর্মসূচির আহ্বান

  • সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও দাতা সংস্থাগুলোকে একযোগে বিদ্যুৎ দক্ষতাকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

  • ছোট প্রকল্প নয়, বরং হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও শিল্পখাতে জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি নিতে হবে।
  • এই জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, যাতে বিনিয়োগ সহজ হয়।
  • বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে নীতিগত সহায়তা, অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়ে দেশগুলোকে ধাপে ধাপে বড় প্রকল্পের পথে এগিয়ে নিতে হবে।

বিশ্বব্যাংক কী করছে?

  • বিশ্বব্যাংক গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় এখন আর ক্ষুদ্র প্রকল্প নয়, বরং বৃহৎ কর্মসূচি, উদ্ভাবনী অর্থায়ন ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
  • ‘স্কেলিং আপ এনার্জি এফিসিয়েন্সি একাডেমি’-এর মাধ্যমে অংশীদারদের প্রশিক্ষণ, জ্ঞানবিনিময় ও সক্ষমতা গড়ে তোলা হচ্ছে।
  • ‘LEAP’ (Leading Efficiency Action Platform) পদ্ধতির মাধ্যমে নীতিগতভাবে দেশগুলোর বিদ্যুৎ পরিকল্পনায় দক্ষতাকে কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।