মার্কিন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা
টোকিও ও এশিয়ার অন্যান্য শেয়ারবাজারে সোমবার জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা কোম্পানির শেয়ারে দাম বেড়েছে। কারণ, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়েছে। গত সপ্তাহান্তে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে “অসাধারণ সামরিক সাফল্য” বলে বর্ণনা করেছেন।
এই সংঘাতে তেলের দাম বাড়ায় বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সোমবার দিনের শুরুতে ৫ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮১ ডলার ছাড়িয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দামও পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চতে পৌঁছায়।
জাপানে বাজারে পতন, জ্বালানি শেয়ার উর্ধ্বমুখী
সোমবার সকালে টোকিও শেয়ারবাজারে সামগ্রিকভাবে পতন দেখা দেয়, নিক্কেই সূচক এক পর্যায়ে ৩৫০ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ পড়ে যায়। তবে দুপুরের দিকে কিছু খাতে বিনিয়োগ বাড়ায় সূচক পতন কমে গিয়ে দিনের শেষে মাত্র ০.১৩ শতাংশ কমে ৩৮,৩৫৪.০৯ পয়েন্টে থামে।
জ্বালানি খাতে সব শেয়ারের দাম বাড়ে। জাপানের ইনপেক্স কোম্পানির শেয়ার এ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায় এবং শেষে ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। জাপান পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন (JAPEX) কোম্পানির শেয়ারের দামও ১ শতাংশ বেড়ে যায়। এই দুটি কোম্পানি বিশ্বজুড়ে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জড়িত, ফলে তেলের দাম বাড়লে তাদের লাভও বাড়ে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এস-অয়েলের শেয়ার ১.৮ শতাংশ এবং হ্যাঙ্কুক শেলের শেয়ার ১.৪ শতাংশ বেড়ে যায়। হংকংয়ে পেট্রোচায়না ও সিনোপেকের শেয়ার শুরুতে উল্কাগতিতে বাড়লেও পরে সে গতি হারায়।
ইয়েনের দরপতন ও তার প্রভাব
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা ডলার কিনে নিরাপদ সম্পদে ঝুঁকেছেন, ফলে ইয়েন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ডলারের বিপরীতে ১৪৭-তে পৌঁছে যায়, যা মে মাসের মাঝামাঝির পর সর্বনিম্ন। ইয়েন দুর্বল হলে জাপানি রপ্তানিকারকরা বিদেশে আয় বাড়াতে পারে, ফলে তা শেয়ারবাজারে কিছুটা সহায়ক হয়।
তবে তেলের দাম বাড়ায় জাপানের বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রতিরক্ষা খাতেও শেয়ার বৃদ্ধি, তবে দিনের শেষে মিশ্র ফলাফল
ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ায় কিছু প্রতিরক্ষা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লেও দিনের শেষে তা অনেকটাই কমে আসে। আইএইচআই কোম্পানির শেয়ার এক পর্যায়ে ৫ শতাংশ বেড়ে গেলেও দিনশেষে মাত্র ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে বন্ধ হয়। মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নতুন উচ্চতায় পৌঁছালেও শেষ পর্যন্ত কিছুটা পড়ে যায়। কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারও ৪ শতাংশ বাড়ার পর হ্রাস পায়।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে বিশ্লেষণ
নোমুরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী অর্থনীতিবিদ তাকাহিদে কিউচি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্য সংকট নতুন মাত্রায় প্রবেশ করেছে এবং ভবিষ্যতে সংঘাত আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘তেলের দাম যদি ১২০ ডলারে পৌঁছায়, তাহলে জাপানের প্রকৃত জিডিপি এক বছরের মধ্যে ০.৬০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।’’
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, যদি তেলের দাম আরও বাড়ে, তাহলে জাপানের অর্থনীতির ওপর বিপুল নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’-এর চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে এশিয়া ভয়াবহ সংকটে পড়বে, কারণ এই অঞ্চল জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল।
পর্যটন ও বিমান কোম্পানিগুলোর শেয়ারে পতন
জাপানে ভ্রমণ সংস্থা ও বিমান পরিবহন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাপান এয়ারলাইন্স ও এএনএ হোল্ডিংসের শেয়ার ১ শতাংশের বেশি পড়ে যায়। একইসঙ্গে এইচআইএস ও কেএনটি-সিটি হোল্ডিংসের শেয়ারও নিম্নমুখী।
বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব
মাতসুই সিকিউরিটিজের সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক তোমইচিরো কুবোতা বলেন, “জাপানে খুচরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তেমন দেখা যাচ্ছে না, কারণ অনেকেই পড়ে যাওয়া শেয়ার কিনছেন।”
তবে তিনি সতর্ক করেন, “জুলাইয়ে বাজারের জন্য পরীক্ষার সময় আসতে পারে। তেলের দামের প্রভাব অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হতে পারে, তার সঙ্গে ট্রাম্পের শুল্ক যোগ হলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।”