যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর সাক্ষাৎকারে পরমাণু হামলা, কূটনীতি ও যুদ্ধের সম্ভাবনার খোলামেলা আলোচনা
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও রবিবার সিবিএসের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে স্পষ্ট ভাষায় জানান, ইরান চাইলে এখনো শান্তির পথ বেছে নিতে পারে। তবে তারা যদি ভিন্ন পথ গ্রহণ করে, তাহলে তার পরিণতি খুবই গুরুতর হবে। রুবিও বলেন, “আমরা শান্তির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমরা ইরানকে লিখিত প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছি। যদি এখনো তারা আলোচনায় বসতে চায়, আমরা প্রস্তুত।”
সুনির্দিষ্ট অভিযানের লক্ষ্য ছিল তিনটি পরমাণু স্থাপনা
রুবিও জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে পরিচালিত এই সামরিক অভিযান ছিল সুনির্দিষ্ট। এটি কোনোভাবেই ইরান বা ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে হামলা ছিল না। “আমাদের লক্ষ্য ছিল ফোর্ডো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র। আমরা এসবের সক্ষমতা ধ্বংস বা হ্রাস করতে চেয়েছি।”
পরমাণু অস্ত্রের আশঙ্কা: ‘সব উপাদান তাদের হাতে’
রুবিও দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, ইরানের হাতে এখন পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান রয়েছে। “৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কেন? তারা কি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, নাকি অস্ত্র বানাতে? ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম শুধুমাত্র তারা রাখে, যারা ৯০ শতাংশে পৌঁছাতে চায়।” তিনি বলেন, “তাদের মহাকাশ কর্মসূচি আসলে আইসিবিএম (আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র) বানানোর আড়ালে পরমাণু যুদ্ধক্ষমতা তৈরি।”
কৌশলগত প্রতিক্রিয়া: যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চায় না, তবে আত্মরক্ষা করবে
বাহরাইন, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রুবিও বলেন, “এই ঘাঁটিগুলো রাখা হয়েছে কারণ ইরানকে ওই দেশগুলো হুমকি হিসেবে দেখে। আমরা আমাদের ঘাঁটি এবং সেনা রক্ষার জন্য প্রস্তুত।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “আমাদের ওপর সরাসরি বা প্রক্সির মাধ্যমে হামলা হলে, ইরানকে তার মূল্য দিতে হবে।”
‘আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে বিকল্প প্রস্তুত’
রুবিও একাধিকবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি কূটনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান। “আমরা এমন একটি চুক্তি করতে চাই যা ইরান, ইরানি জনগণ এবং বিশ্ব সবার জন্য ভালো। তবে তারা যদি ফের প্রতারণা করে, তাহলে এর ফল ভোগ করতে হবে।” তিনি জানান, ইরান চাইলে বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকার পেতে পারে, তবে দেশের মাটিতে সমৃদ্ধকরণ নয়।
ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে?
হরমুজ প্রণালী নিয়ে রুবিও বলেন, “ওই পথ বন্ধ করা মানেই গোটা পৃথিবীর, বিশেষ করে চীনের তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে। এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।” তিনি জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনই সামরিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছেন না, তবে প্রয়োজনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাশিয়া-চীন ও ইরানের সম্পর্ক: নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
রুবিও বলেন, “রাশিয়া ইরান থেকে ড্রোন নিচ্ছে, তাদের সম্পর্ক গভীর হচ্ছে। আমরা জানি, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।” তবে মার্কিন লক্ষ্য পরিষ্কার—ইরান যেন পরমাণু অস্ত্রে একেবারেই হাত না বাড়াতে পারে, তা নিশ্চিত করা।
বিশ্বাসের সংকট: শান্তি চুক্তির বাস্তবতা
রুবিওর ভাষ্য, “বিশ্বাসঘাতকতা তো ইরানের দিক থেকেই এসেছে। তারা সন্ত্রাসবাদে যুক্ত, কূটনৈতিক মিথ্যা বলেছে এবং আমেরিকানদের রক্ত ঝরিয়েছে। আমরা এমন একটি চুক্তি চাই যা পরমাণু অস্ত্রের আশঙ্কা একেবারে দূর করবে।”
ট্রাম্প যা বলেন, তা করেন
রুবিওর মতে, “এই প্রেসিডেন্ট গেম খেলেন না। তিনি যা বলেন, তা করেন। আমরা কূটনৈতিক পথ খোলা রেখেছি, কিন্তু যদি তারা যুদ্ধ চায়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি সম্পন্ন।”
রুবিওর এ বক্তব্যে স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্র এখনো আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে, তবে যেকোনো মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত। শান্তির পথ ও সংকটের আশঙ্কা—উভয় সম্ভাবনাই এখন ইরানের সামনে খোলা। তারা কোনটি বেছে নেবে, সেটাই পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে।