নজরুল: পরিশিষ্ট
কবি নজরুল ইসলামের বিষয়ে স্মৃতিকথা লিখিয়াছিলাম ১৪/১৫ বৎসর আগে। সেই লেখার মধ্যে যথাসম্ভব নিজেকে আড়ালে রাখিয়া কবির কথাই লিখিয়াছি।
রোগগ্রস্ত কবির জন্য আমি কি করিয়াছি তাহা অতি সন্তর্পণে যবনিকার অন্তরালে রাখিয়াছিলাম। কিন্তু কোনো নজরুল-ভক্তের উত্যক্ততায় নিজের কথাও আজ কিছু বলিতে হইল।
ফজলুল হক সাহেব যখন যুক্ত বাঙলার প্রধানমন্ত্রী হইলেন আমি তখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা বিভাগের অন্যতম সহকারী। এই সময়ে আমরা ছাত্রবন্ধুরা বার বার হক সাহেবকে অনুরোধ করিয়াছি “আপনি নজরুল ইসলাম সাহেবের জন্য একটি সাহিত্যিক-ভাতার ব্যবস্থা করুন।” সেবার হক সাহেব মন্ত্রিসভার বিশেষ কোনো অধিবেশনে দারজিলিং যাইবেন। নান্না (ভূতপূর্ব মন্ত্রী আজিজুল হক), মরহুম আবদুল ওয়াসেক, শামসুর রহমান (অধুনা যশোরের প্রসিদ্ধ উকিল), ওয়াহেদুজ্জামান, আমি এবং অন্যান্য ছাত্র বন্ধুরা মিলিয়া হক সাহেবকে বিদায় দিতে শেয়ালদা আসিয়াছি।
গাড়ি যখন ছাড়িল তখন আমরা সমবেত কণ্ঠে ধ্বনি তুলিলাম, “নজরুলের জন্য সাহিত্যিক ভাতা চাই।” আমাদের ধ্বনিতে সেদিন শিয়ালদা স্টেশন প্রকম্পিত হইয়াছিল। ফজলুল হক সাহেব নিজেও নজরুলের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও হক সাহেব নজরুলের জন্য কোনো সাহিত্যিক ভাতার বন্দোবস্ত করিতে পারেন নাই। সেকালের প্রধানমন্ত্রীরা যে বুরোক্রাসির হাতে কতটা অসহায় ছিলেন, নজরুলকে সাহিত্যিক ভাতা না দিতে পারা উহার একটি বড় প্রমাণ।
কিছু ভালো থাকিতে একবার আমি কবিকে দেখিতে যাই। কবি তখনও আমাকে চিনিতে পারিতেন। তিনি আমাকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কেমন আছ-তোমার পিতা কেমন আছেন?”
আমি যথাযথ উত্তর দিলাম! কবি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার বউ কেমন আছে-তোমার ছেলেরা কেমন আছে?” সে কথার উত্তর দিতে কবি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার ছেলেরা কেমন আছে? তোমার বউ কেমন আছে?”
চলবে…..