যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সোমবারের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন নীতি, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ, গাজা পরিস্থিতি, সিরিয়া, ইউক্রেন, ন্যাটো ও অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন। এতে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরও তিনি দেন।
কঙ্গো-রুয়ান্ডা শান্তিচুক্তি
মুখপাত্র জানান, ২৭ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, আন্ডার সেক্রেটারি অ্যালিসন হুকার এবং সিনিয়র উপদেষ্টা মাসাদ বুলোসের উপস্থিতিতে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মধ্যে একটি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সই হয়েছে। ৩০ বছরের যুদ্ধে ইতি টানার এই উদ্যোগ আফ্রিকান ইউনিয়ন, কাতার ও টোগোর সহায়তায় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ‘কোয়াড‘ বৈঠক
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কোয়াড মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে। মুখপাত্র জানান, এর লক্ষ্য হলো স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা, আঞ্চলিক সীমানা সুরক্ষা জোরদার করা এবং সরবরাহ শৃঙ্খল শক্তিশালী করা।

সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সিরিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছেন। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসাদ, তার সহযোগী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, মাদক পাচারকারী, রাসায়নিক অস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, আইএস জঙ্গি এবং ইরানি সমর্থক গোষ্ঠীর ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর লক্ষ্য হলো সিরিয়াকে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পথে ফেরানো।
মধ্যপ্রাচ্য টাস্কফোর্সের কাজ শেষ
মধ্যপ্রাচ্য টাস্কফোর্স ২৭ জুন কাজ শেষ করেছে। মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো স্বাভাবিক সেবা দিচ্ছে। প্রায় ১০০টি নিরাপত্তা সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। ১৬টি ফ্লাইটে ৬৫০ জনের বেশি মার্কিন নাগরিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ইসরায়েল থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে।
গাজা পরিস্থিতি ও সহায়তা বিতরণ
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কিছু হামলায় ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, ইসরায়েল এই অভিযোগের তদন্ত করছে। তিনি বলেন, হামাস ৭ অক্টোবর আক্রমণ শুরু করে এবং এখনো অস্ত্র জমা দেয়নি বা জিম্মিদের মুক্ত করছে না। এই প্রেক্ষাপটে গাজা একটি যুদ্ধক্ষেত্র। গাজায় ৫১ মিলিয়নের বেশি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। সহায়তা বিতরণে যারা বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের জন্যই গাজার মানুষ বছরের পর বছর কষ্টে আছে। প্রেসিডেন্টের নির্দেশিত নতুন দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবেই এই সহায়তা।

গাজায় সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে অবস্থান
গাজার উত্তর অংশে ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক হতাহতের খবর নিয়ে প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, এটি যুদ্ধের এলাকা। হামাস বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ আছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট এই বিষয়ে আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি
যুক্তরাজ্যের গ্লাস্টনবারি উৎসবে সহিংসতাকে উসকানি দেওয়ায় এক ব্যান্ডের ভিসা বাতিলের প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কাকে ঢুকতে দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের অধিকার রাষ্ট্রের রয়েছে। যারা সহিংসতা ও বিদ্বেষ ছড়ায়, তারা এখানে স্বাগত নয়। ভিসা প্রক্রিয়া জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে অবস্থান
হাঙ্গেরিতে সমকামী অধিকার র্যালি নিষিদ্ধের বিষয়ে মার্কিন অবস্থান জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, প্রতিটি দেশ নিজের নীতি ঠিক করে। যুক্তরাষ্ট্র সব বিষয়ে মন্তব্য করে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
নাইজেরিয়ায় সহিংসতা
নাইজেরিয়ায় ইসলামি জঙ্গিদের হাতে খ্রিস্টান গ্রামে হামলায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু নিয়ে জিজ্ঞাসায় মুখপাত্র জানান, বিষয়টি নিয়ে বুধবারের ব্রিফিংয়ে আপডেট দেবেন।

ইউক্রেন প্রসঙ্গ
রাশিয়ার ইউক্রেনে বিমান হামলা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট বারবার বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও সরাসরি আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য ইউক্রেনের রক্তপাত থামানো।
ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যয়
ন্যাটো মিত্রদের জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, ন্যাটোকে মূল ভূমিকায় ফিরিয়ে আনা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে।
সিরিয়ায় মার্কিন কূটনৈতিক তৎপরতা
সিরিয়ার কুর্দি নেতা মাজলুম কোবানি ও ইরবিলের প্রধানমন্ত্রী মাসরুর বারজানির সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করা উপযুক্ত নয়।
ইরান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা
ইরানের জাতিসংঘ প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পরিবেশ নেই বলার প্রেক্ষিতে মুখপাত্র বলেন, প্রতিটি দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতে। প্রেসিডেন্ট চান ইরান আন্তর্জাতিক শিষ্টাচারে ফিরে আসুক এবং শান্তি রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে তিনি প্রস্তুত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















