০৮:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম শুল্ক হ্রাসে ঐতিহাসিক সমঝোতা

২ জুলাই ২০২৫-এ ওয়াশিংটন ও হ্যানয় একযোগে জানায়, উভয় দেশের পণ্যের ওপর ধার্য শুল্ক ব্যাপকভাবে কমাতে তারা একমত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব তো লাম ফোনালাপে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। এতে দুপক্ষই আশা করছে, দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক টানাপোড়েন অনেকটাই নিরসন হবে।

ট্রাম্পের ঘোষণা ও শুল্ক হার

ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল বার্তায় বলেন, এখন থেকে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব পণ্যে ২০% আর ট্রানশিপমেন্ট পণ্যে ৪০% শুল্ক দেবে। এর বদলে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ভিয়েতনামি বাজারে শূন্য শুল্ক সুবিধা পাবে। যদিও রপ্তানিকারক নয়, গন্তব্য দেশের আমদানিকারকই বাস্তবে শুল্ক পরিশোধ করে, তবুও ঘোষণাটি হ্রাসকৃত শুল্কের দিকেই ইঙ্গিত করে।

কে আসলে শুল্ক দেয়?

নীতিগতভাবে শুল্ক পরিশোধের দায় আমদানিকারকের, রপ্তানিকারকের নয়। ফলে বাড়তি খরচ এড়াতে রপ্তানিকারকরা কখনো কখনো পণ্যের মূল্য কমায়, আবার কখনো ভোক্তার কাঁধে ব্যয় বাড়ে। তাই চুক্তিটি কার্যকর হলে উভয় দেশের ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরাই স্বস্তি পেতে পারেন।

টেলিফোন আলোচনার বিবরণ

ভিয়েতনাম সরকারের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে প্রাধান্যমূলক বাজার সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিকে “উচ্চভাবে মূল্যায়ন” করেছেন, বিশেষ করে বড় ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে। তবে ভিয়েতনাম আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট শুল্কহার উল্লেখ করেনি।

ভিয়েতনামের উদ্বেগ ও কৌশল

যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল বাণিজ্য উদ্বৃত্তের কারণে ২০২৪-এ ট্রাম্প প্রশাসন ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬% “পারস্পরিক” শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ছিল। সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় ভিয়েতনাম বিমান, জ্বালানি ও কৃষিপণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘাটতি কমানোর ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ১.৫ বিলিয়ন ডলারের গলফ রিসোর্ট ও আবাসন প্রকল্প দ্রুত অনুমোদন পায়, আর এরিক ট্রাম্প হো চি মিন সিটিতে সম্ভাব্য ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর স্থান খুঁজে দেখেন।

বাণিজ্য ঘাটতি ও সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ১২৩ বিলিয়ন ডলার—চীন ও মেক্সিকোর পরই সর্বোচ্চ। ৪৬% শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানিনির্ভর ভিয়েতনামি অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগত। নতুন সমঝোতা সে আশঙ্কা অনেকটাই দূর করেছে এবং আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য নিয়ে পারস্পরিক আলোচনার পথ খুলে দিয়েছে।

কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের ৩০তম বার্ষিকী। ২০২৩-এ এ দুই দেশ সম্পর্কে ‘সমগ্র কৌশলগত অংশীদারত্ব’-এর মর্যাদা পায়, যা ভিয়েতনামের কূটনৈতিক শ্রেণিবিন্যাসে সর্বোচ্চ। কখনো যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিপক্ষ থাকলেও (১৯৫৫-১৯৭৫) এখন তারা পরস্পরের বড় বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদার। সাম্প্রতিক চুক্তি সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম শুল্ক হ্রাসে ঐতিহাসিক সমঝোতা

০২:৩০:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

২ জুলাই ২০২৫-এ ওয়াশিংটন ও হ্যানয় একযোগে জানায়, উভয় দেশের পণ্যের ওপর ধার্য শুল্ক ব্যাপকভাবে কমাতে তারা একমত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব তো লাম ফোনালাপে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। এতে দুপক্ষই আশা করছে, দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক টানাপোড়েন অনেকটাই নিরসন হবে।

ট্রাম্পের ঘোষণা ও শুল্ক হার

ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল বার্তায় বলেন, এখন থেকে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব পণ্যে ২০% আর ট্রানশিপমেন্ট পণ্যে ৪০% শুল্ক দেবে। এর বদলে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ভিয়েতনামি বাজারে শূন্য শুল্ক সুবিধা পাবে। যদিও রপ্তানিকারক নয়, গন্তব্য দেশের আমদানিকারকই বাস্তবে শুল্ক পরিশোধ করে, তবুও ঘোষণাটি হ্রাসকৃত শুল্কের দিকেই ইঙ্গিত করে।

কে আসলে শুল্ক দেয়?

নীতিগতভাবে শুল্ক পরিশোধের দায় আমদানিকারকের, রপ্তানিকারকের নয়। ফলে বাড়তি খরচ এড়াতে রপ্তানিকারকরা কখনো কখনো পণ্যের মূল্য কমায়, আবার কখনো ভোক্তার কাঁধে ব্যয় বাড়ে। তাই চুক্তিটি কার্যকর হলে উভয় দেশের ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরাই স্বস্তি পেতে পারেন।

টেলিফোন আলোচনার বিবরণ

ভিয়েতনাম সরকারের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে প্রাধান্যমূলক বাজার সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিকে “উচ্চভাবে মূল্যায়ন” করেছেন, বিশেষ করে বড় ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে। তবে ভিয়েতনাম আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট শুল্কহার উল্লেখ করেনি।

ভিয়েতনামের উদ্বেগ ও কৌশল

যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল বাণিজ্য উদ্বৃত্তের কারণে ২০২৪-এ ট্রাম্প প্রশাসন ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬% “পারস্পরিক” শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ছিল। সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় ভিয়েতনাম বিমান, জ্বালানি ও কৃষিপণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘাটতি কমানোর ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ১.৫ বিলিয়ন ডলারের গলফ রিসোর্ট ও আবাসন প্রকল্প দ্রুত অনুমোদন পায়, আর এরিক ট্রাম্প হো চি মিন সিটিতে সম্ভাব্য ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর স্থান খুঁজে দেখেন।

বাণিজ্য ঘাটতি ও সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ১২৩ বিলিয়ন ডলার—চীন ও মেক্সিকোর পরই সর্বোচ্চ। ৪৬% শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানিনির্ভর ভিয়েতনামি অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগত। নতুন সমঝোতা সে আশঙ্কা অনেকটাই দূর করেছে এবং আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য নিয়ে পারস্পরিক আলোচনার পথ খুলে দিয়েছে।

কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের ৩০তম বার্ষিকী। ২০২৩-এ এ দুই দেশ সম্পর্কে ‘সমগ্র কৌশলগত অংশীদারত্ব’-এর মর্যাদা পায়, যা ভিয়েতনামের কূটনৈতিক শ্রেণিবিন্যাসে সর্বোচ্চ। কখনো যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিপক্ষ থাকলেও (১৯৫৫-১৯৭৫) এখন তারা পরস্পরের বড় বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদার। সাম্প্রতিক চুক্তি সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে বলে মনে করা হচ্ছে।