০৯:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশ: মৃত ৩৭, ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকারও বেশি ডা. বিধানচন্দ্র রায়: এক স্বপ্নদ্রষ্টা চিকিৎসক, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাষ্ট্রনায়ক হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত জাপানি নাগরিকদের—পরিচয় ও পরিবারের কথা প্রথম বারের মতো বিজেপি নারী সভাপতি পেতে যাচ্ছে? সাম্প্রতিক এশিয়ান কাপের সাফল্য ও বাংলাদেশের নারী ফুটবলের নতুন দিগন্ত নতুন সিনেমায় আশাবাদী মন্দিরা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা — বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিচয়চিহ্ন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো ও মতিয়া চৌধুরী প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ঘাঁটির উদ্দেশ্য অস্বীকার করল চীন এনসিপি কি ‘মব’ দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চায়?

ওপেকের তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব

বিশ্ব তেলের বাজারে অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে ওপেকের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের পর। ওপেক সদস্যরা সম্প্রতি বৈঠকে সম্মত হয়েছে যে তারা উৎপাদন সীমিত রাখবে এবং কাঁচা তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য যৌথভাবে কাজ করবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে আভাস স্পষ্ট হয়েছে।

তেলের চাহিদার বড় ক্রেতা এশিয়া ও আফ্রিকা

বিশ্বজুড়ে তেলের প্রধান ক্রেতা হিসেবে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো এখনো এগিয়ে আছে। জনসংখ্যা, শিল্পায়ন, পরিবহন খাতের চাহিদা—সব মিলিয়ে এই দুই অঞ্চলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন: ওপেকের সীমিত উৎপাদন নীতির কারণে এই বাজারগুলোতে তেলের দাম আরও চড়া হবে, অথচ বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার পরিপক্কতা এখনো কম।

ঢাকার বাজার বিশ্লেষক নুরুল হক ভূঁইয়া বলেন: “বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া—সব দেশেই তেলের ব্যবহার বাড়ছে। ওপেকের সিদ্ধান্তের কারণে এখানে সরবরাহের চাপ তৈরি হবে। ফলে সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে হবে অথবা সরাসরি জনগণকে বেশি দামে কিনতে হবে।”

রাশিয়ার বাজারেও সহজে সস্তা তেল পাওয়া যাবে না

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রাশিয়া নিজস্ব তেল বাজার গড়ে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা অনেকাংশে রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভর করে সস্তা জ্বালানি কিনেছিল। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে। রফতানির দাম নিয়ে তাদের কৌশল আরও রক্ষণাত্মক হয়েছে। ক্রেমলিন চাইছে, ডিসকাউন্টে বিক্রি সীমিত করা হোক এবং রাজস্ব প্রবাহ ধরে রাখা হোক।

ঢাকার জ্বালানি খাতের পরামর্শক মোহাম্মদ রাশেদ খান বলেন: “রাশিয়ান তেল সহজে সস্তায় আসবে—এই ধারণা এখন বাতিল করা ভালো।” রাশিয়া নিজস্ব শর্তে বিক্রি করবে এবং ওপেকের সাথেই এক প্রকার সমন্বয় করছে। ফলে বাংলাদেশের মতো ক্রেতা দেশকে এখন বিশ্বমূল্যের কাছাকাছি দামেই কিনতে হবে।

বাজার পরিস্থিতি: সবকিছুই নির্দেশ করছে দাম বাড়বে

ওপেকের উৎপাদন কাটা, এশিয়া–আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান চাহিদা, রাশিয়ার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ—সবই এক সুরে বলছে যে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে শিগগির বড় রকমের দাম বৃদ্ধি আসছে। বার্ক এবং আইএইএর (International Energy Agency) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ দিকে তেলের দাম ১০–১৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংকও এ নিয়ে সতর্ক করে বলেছে, ওপেকের নীতি ও বৈশ্বিক চাহিদার কারণে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি আবার তীব্র হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি: ৩.৩% জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অস্থিতিশীল রাজনীতি, দুর্বল বৈদেশিক নীতি

বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালে ৩.৩% হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে অনেক কম। এমনিতেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির, বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ অনিশ্চিত, রপ্তানি আয় স্থবির হয়ে আছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও চাপের মুখে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নাজমুল হক বলেন: “তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বাড়বে। টাকা–ডলার রেট আরও চাপে পড়বে। তেল আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রা বেরিয়ে যাবে, ফলে রিজার্ভ কমবে। সরকারকে আবার দাম সমন্বয় করতে হবে। এতে জনগণের জীবনযাত্রার খরচও বাড়বে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন: “যদি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে যায়, বৈদেশিক নীতি স্পষ্ট না হয়, তবে আন্তর্জাতিক সহায়তাও আসবে কম। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি খাতে বড় আকারের ভর্তুকি টেকসই হবে না। সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

বাজার বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা

ঢাকার পেট্রোলিয়াম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শওকত মাহমুদ বলেন: “সরকার কিছু ভর্তুকি দিয়ে দাম বাঁচিয়ে রাখলেও, আন্তর্জাতিক বাজারের ধাক্কা সামলানো খুব কঠিন হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতও এই তেলের ওপর নির্ভর করে। দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়বে। শিল্প খাত প্রতিযোগিতায় দুর্বল হবে।”

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (ADB) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে এখনই বিকল্প জ্বালানি নীতি, বৈদ্যুতিক যানবাহন অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, না হলে আগামী পাঁচ বছরে বারবার এমন শক আসবে।

উপসংহার

ওপেকের উৎপাদন সীমিতকরণ, রাশিয়ার কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ এবং এশিয়া–আফ্রিকার উচ্চ চাহিদা—সব মিলিয়ে বৈশ্বিক তেলের বাজার আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ যেহেতু জ্বালানি আমদানি–নির্ভর অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নীতিগত দুর্বলতা—সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কষ্ট হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারকে এখন থেকেই স্বচ্ছ জ্বালানি নীতি, দক্ষ অর্থনৈতিক কূটনীতি ও জনমুখী সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্পনা নিতে হবে—না হলে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন আরও তীব্র হতে পারে।

টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশ: মৃত ৩৭, ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকারও বেশি

ওপেকের তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব

০৪:২৫:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

বিশ্ব তেলের বাজারে অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে ওপেকের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের পর। ওপেক সদস্যরা সম্প্রতি বৈঠকে সম্মত হয়েছে যে তারা উৎপাদন সীমিত রাখবে এবং কাঁচা তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য যৌথভাবে কাজ করবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে আভাস স্পষ্ট হয়েছে।

তেলের চাহিদার বড় ক্রেতা এশিয়া ও আফ্রিকা

বিশ্বজুড়ে তেলের প্রধান ক্রেতা হিসেবে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো এখনো এগিয়ে আছে। জনসংখ্যা, শিল্পায়ন, পরিবহন খাতের চাহিদা—সব মিলিয়ে এই দুই অঞ্চলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন: ওপেকের সীমিত উৎপাদন নীতির কারণে এই বাজারগুলোতে তেলের দাম আরও চড়া হবে, অথচ বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার পরিপক্কতা এখনো কম।

ঢাকার বাজার বিশ্লেষক নুরুল হক ভূঁইয়া বলেন: “বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া—সব দেশেই তেলের ব্যবহার বাড়ছে। ওপেকের সিদ্ধান্তের কারণে এখানে সরবরাহের চাপ তৈরি হবে। ফলে সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে হবে অথবা সরাসরি জনগণকে বেশি দামে কিনতে হবে।”

রাশিয়ার বাজারেও সহজে সস্তা তেল পাওয়া যাবে না

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রাশিয়া নিজস্ব তেল বাজার গড়ে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা অনেকাংশে রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভর করে সস্তা জ্বালানি কিনেছিল। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে। রফতানির দাম নিয়ে তাদের কৌশল আরও রক্ষণাত্মক হয়েছে। ক্রেমলিন চাইছে, ডিসকাউন্টে বিক্রি সীমিত করা হোক এবং রাজস্ব প্রবাহ ধরে রাখা হোক।

ঢাকার জ্বালানি খাতের পরামর্শক মোহাম্মদ রাশেদ খান বলেন: “রাশিয়ান তেল সহজে সস্তায় আসবে—এই ধারণা এখন বাতিল করা ভালো।” রাশিয়া নিজস্ব শর্তে বিক্রি করবে এবং ওপেকের সাথেই এক প্রকার সমন্বয় করছে। ফলে বাংলাদেশের মতো ক্রেতা দেশকে এখন বিশ্বমূল্যের কাছাকাছি দামেই কিনতে হবে।

বাজার পরিস্থিতি: সবকিছুই নির্দেশ করছে দাম বাড়বে

ওপেকের উৎপাদন কাটা, এশিয়া–আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান চাহিদা, রাশিয়ার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ—সবই এক সুরে বলছে যে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে শিগগির বড় রকমের দাম বৃদ্ধি আসছে। বার্ক এবং আইএইএর (International Energy Agency) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ দিকে তেলের দাম ১০–১৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংকও এ নিয়ে সতর্ক করে বলেছে, ওপেকের নীতি ও বৈশ্বিক চাহিদার কারণে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি আবার তীব্র হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি: ৩.৩% জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অস্থিতিশীল রাজনীতি, দুর্বল বৈদেশিক নীতি

বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালে ৩.৩% হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে অনেক কম। এমনিতেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির, বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ অনিশ্চিত, রপ্তানি আয় স্থবির হয়ে আছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও চাপের মুখে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নাজমুল হক বলেন: “তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বাড়বে। টাকা–ডলার রেট আরও চাপে পড়বে। তেল আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রা বেরিয়ে যাবে, ফলে রিজার্ভ কমবে। সরকারকে আবার দাম সমন্বয় করতে হবে। এতে জনগণের জীবনযাত্রার খরচও বাড়বে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন: “যদি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে যায়, বৈদেশিক নীতি স্পষ্ট না হয়, তবে আন্তর্জাতিক সহায়তাও আসবে কম। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি খাতে বড় আকারের ভর্তুকি টেকসই হবে না। সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

বাজার বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা

ঢাকার পেট্রোলিয়াম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শওকত মাহমুদ বলেন: “সরকার কিছু ভর্তুকি দিয়ে দাম বাঁচিয়ে রাখলেও, আন্তর্জাতিক বাজারের ধাক্কা সামলানো খুব কঠিন হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতও এই তেলের ওপর নির্ভর করে। দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়বে। শিল্প খাত প্রতিযোগিতায় দুর্বল হবে।”

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (ADB) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে এখনই বিকল্প জ্বালানি নীতি, বৈদ্যুতিক যানবাহন অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, না হলে আগামী পাঁচ বছরে বারবার এমন শক আসবে।

উপসংহার

ওপেকের উৎপাদন সীমিতকরণ, রাশিয়ার কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ এবং এশিয়া–আফ্রিকার উচ্চ চাহিদা—সব মিলিয়ে বৈশ্বিক তেলের বাজার আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ যেহেতু জ্বালানি আমদানি–নির্ভর অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নীতিগত দুর্বলতা—সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কষ্ট হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারকে এখন থেকেই স্বচ্ছ জ্বালানি নীতি, দক্ষ অর্থনৈতিক কূটনীতি ও জনমুখী সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্পনা নিতে হবে—না হলে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন আরও তীব্র হতে পারে।