সমকালের একটি শিরোনাম “বিএনপিকে আনুপাতিক উচ্চকক্ষে রাজি করাতে পিআর পদ্ধতির চাপ”
বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে ভোটের অনুপাতে (পিআর) সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল। আনুপাতিক নির্বাচন না চাইলেও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিও এ দাবিতে সমর্থন দিচ্ছে। ভোটের অনুপাতে প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের প্রস্তাবে বিএনপিকে রাজি করাতেই এই চাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে।
সংস্কারের চলমান সংলাপে দরকষাকষির কৌশল হিসেবে সংসদের নিম্নকক্ষে প্রচলিত আসনভিত্তিক নির্বাচনের পরিবর্তে পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছে তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের প্রস্তাব বিএনপি মেনে নিলে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য দলগুলো নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির দাবি থেকে সরে আসবে। আনুপাতিক উচ্চকক্ষ না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি না হওয়া কিংবা নির্বাচন বর্জনের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে দলগুলোর।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল রাজি হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের। ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষে বিদ্যমান ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট (এফপিটিপি) পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে লড়বেন। যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনি জয়ী হবেন। নিম্নকক্ষের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষেও ততগুলো আসন পাবে। অর্থাৎ, কোনো দল নির্বাচনে ১০ শতাংশ ভোট পেলে, উচ্চকক্ষে ১০টি আসন পাবে।
জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল এই প্রস্তাবে রাজি। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি। দলটি চায়, বর্তমানে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন যেভাবে নির্ধারণ হয়, উচ্চকক্ষের আসনও সেভাবে বণ্টন করা হবে।
ঐকমত্য কমিশন এবং অন্যান্য দল মনে করে, বিএনপির প্রস্তাব মানলে সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। সরকারি দল যাতে চাইলেই সংবিধান বদল করতে না পারে, তার জন্য আনুপাতিক উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, উচ্চকক্ষের আসনবিন্যাস নিম্নকক্ষের অনুরূপ হলে দ্বিকক্ষের সংসদ অর্থহীন হয়ে যায়।
কেন আনুপাতিক উচ্চকক্ষ চায় দলগুলো
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আসন পায় ২৩২টি। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় দলটি ২০১১ সালে সংবিধানের বড় রদবদল করে। বাদ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
ভোটের অনুপাতে প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ থাকলে ৪৯ শতাংশ ভোট পাওয়া আওয়ামী লীগ সেখানে বড়জোর ৫০টি আসন পেত। তখন সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের বাধ্যবাধকতার কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষে একা পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা সম্ভব হতো না। বিরোধী দল বিএনপির সমর্থন প্রয়োজন হতো।
ক্ষমতাসীন দল যেন এককভাবে সংবিধান পাল্টে ফেলতে না পারে, সে জন্যই জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দলের মধ্যে ২২টি আনুপাতিক উচ্চকক্ষ চাচ্ছে। বিএনপিসহ পাঁচটি দল এটা চায় না।
বিএনপি মনে করে, নির্বাচনে কোনো দল দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেলে উচ্চকক্ষেও তার আসন হবে দুই-তৃতীয়াংশ। তারা মনে করে, আগের মতো দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সরকারি দলের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকা উচিত। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের পথ এভাবে (ভোটের অনুপাতে আসন) বন্ধ করা উচিত না। এতে রাষ্ট্রের জন্য জরুরি সংশোধনী আনা দুরূহ হবে।
আজকের পত্রিকার একটি শিরোনাম “জোরেশোরে প্রস্তুতি সারছে ইসি”
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরেশোরে প্রস্তুতি সেরে রাখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহেই সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করা হতে পারে। নিজেদের প্রস্তুতি সেরে রাখার পাশাপাশি আইন-বিধিতে কোনো পরিবর্তন করতে হবে কি না, সে জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক স্থায়ী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। একান্ত বৈঠক হওয়ায় এর বিষয়বস্তু নিয়ে সব মহলে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছিল। গত মঙ্গলবার সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে তাঁর আসন্ন সংসদ নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি ফুল গিয়ারে (পুরোদমে) নিচ্ছি।’
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিল এই দুটি মাসকে সামনে নিয়ে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যখনই সরকার নির্বাচন করতে চায় আমরা যাতে করতে পারি।… নির্বাচনের তারিখ ও শিডিউল আপনারা যথাসময়ে পাবেন।’
জাতীয় নির্বাচনেই মনোযোগ
কোন কোন দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তো কিছু বলছেন না। তিনি জাতীয় নির্বাচনের কথাই বলে যাচ্ছেন। আমাদের মূল ফোকাস (মনোযোগ) জাতীয় নির্বাচনে।’
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ‘নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ জোরেশোরে চলছে। আমাদের সব প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করে রাখা হচ্ছে।’
নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটার বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, তাঁরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেনাকাটা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন।
আসন সীমানার খসড়া শিগগিরই জাতীয় সংসদে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই এ খসড়া প্রকাশ হতে পারে। খসড়া প্রকাশ করে কমিশন দাবি-আপত্তির আবেদন চাইবে। আবেদনকারীদের শুনানি সম্পন্ন করে পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে ৭৬টি সংসদীয় আসন থেকে প্রায় সাড়ে ৬ শ আবেদন ইসিতে জমা পড়েছে। জনসংখ্যা, প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে যেটা যৌক্তিক মনে হবে, আমরা সেটিই করব। এগুলো খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। কারণ, যত দেরি হবে তত আমাদেরই কাজ বাড়বে।’
মানবজমিনের একটি শিরোনাম “আগামী ৮ই জুলাই ফের বৈঠক”
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহারের লক্ষ্যে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের প্রথম দফার বৈঠক কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। তবে আলোচনার দ্বিতীয় দফা বসছে আগামী ৮ই জুলাই, যেখানে চূড়ান্ত সময়সীমার মাত্র একদিন আগে আবারো মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।
২০২৫ সালের ২রা এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অজুহাতে বেশ কয়েকটি দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন। এর আওতায় বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়, ফলে মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫৩ শতাংশে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তীব্র কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানানো হলে ৯ই এপ্রিল তিন মাসের জন্য শুল্ক কার্যকারিতা স্থগিত রাখা হয়। সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৯ই জুলাই। এর আগেই একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে উভয়পক্ষ রাজি হয়, যার আলোকে শুরু হয় আলোচনা।
গত ৩রা জুলাই ওয়াশিংটনে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়)-এ অনুষ্ঠিত হয় প্রথম দফার আলোচনার আনুষ্ঠানিক বৈঠক। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি (দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া) ব্রেন্ডান লিঞ্চ।
সূত্রগুলো বলছে, আলোচনায় অগ্রগতি থাকলেও তিনটি মূল বিষয়ে এখনো মতপার্থক্য রয়ে গেছে:
১. রুলস অব অরিজিন:
যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ তার রপ্তানি পণ্যে আঞ্চলিক মূল্য সংযোজন নিশ্চিত করুক, অর্থাৎ কাঁচামালের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মাধ্যমে আসতে হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ বর্তমানে ঘরোয়া মূল্য সংযোজন প্রক্রিয়ায় কাজ করে, যা স্থানীয় উৎপাদকদের ওপর নির্ভরশীল। এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন করা স্থানীয় ছোট-মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছে ঢাকা।
২. ভূ-রাজনৈতিক সঙ্গতি:
যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া অনুযায়ী, কোনো দেশের ওপর যদি তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে বাংলাদেশকেও সেই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে হবে। চীন, রাশিয়া ও ইরানের মতো যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের ওপর এমন শর্ত কার্যকর হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।
ইরানি খাবার
৩. শুল্ক পারস্পরিকতা ও এমএফএন লঙ্ঘনের অভিযোগ:
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা যেসব পণ্যে বাংলাদেশকে শুল্ক ছাড় দেবে, বাংলাদেশ যেন সেই পণ্য অন্য কোনো দেশকে ছাড় না দেয়। বাংলাদেশ বলছে, এই শর্ত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, ব্যাংক সুদের ঊর্ধ্বগতি এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ-এর বারবার মূল্যবৃদ্ধি- এইসব মিলিয়ে গার্মেন্ট খাত একাধিক জটিল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, ইউএসটিআরের সঙ্গে পরবর্তী যে বৈঠক হবে এবং আমরা তাতে আশাবাদী যে চূড়ান্ত চুক্তির দিকে অগ্রগতি হবে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে তিন দফা চুক্তির খসড়া বিনিময় হয়েছে, চারটি বৈঠক হয়েছে এবং ২৯ বার বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো এত ঘন ঘন যোগাযোগ অন্য কোনো দেশ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা চাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় থাকুক এবং কোনোভাবেই অতিরিক্ত শুল্ক যেন আরোপ না হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যেখানে তারা ভিয়েতনামি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, কিন্তু ভিয়েতনাম মার্কিন পণ্যে শূন্য শুল্ক দেবে। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়া কঠিন শর্তের কারণে আলোচনা থেকে সরে গেছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখনো একমাত্র বাংলাদেশই আলোচনা টিকিয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতনির্ভর। ৫৩ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানি কমে যাবে, বাজার হারানোর ঝুঁঁকি তৈরি হবে এবং লাখো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য রপ্তানি বাজার ধরে রাখার কৌশল নির্ভর করবে কূটনৈতিক দক্ষতা, বাস্তবতাভিত্তিক ছাড় ও জাতীয় স্বার্থের ভারসাম্যের ওপর।
আলোচনা চলমান থাকলে ৮ই জুলাইয়ের পরেও শুল্ক কার্যকরের সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে সময় খুব সীমিত। একদিন পরই শেষ হচ্ছে স্থগিতাদেশের মেয়াদ।
এই প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ও সচিব মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে আগামী ৮ই জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি হয়ে উঠছে ‘ফাইনাল রাউন্ড’।
বাংলাদেশ সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশা করছি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বাস্তবতা বুঝবে এবং একটি সম্মানজনক সমাধানে পৌঁছানো যাবে। তবে না হলেও আমরা প্রস্তুত-অর্থনৈতিক কৌশলে বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে।
বণিকবার্তার একটি শিরোনাম “সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে কমে আসছে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব”
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন ও বিরোধী মত নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার অনেকটাই পুলিশনির্ভর হয়ে পড়েছিল। ফলে অতি ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার মানসিকতা তৈরি হয় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে। বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে তখন, যার বড় উদাহরণ তৈরি করেছিল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড। একধরনের শীতল সম্পর্ক তৈরি হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে। সে সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ অনেকটাই ঘি ঢেলেছিলেন দুই বাহিনীর মধ্যে সৃষ্ট মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে। দেখা দেয় আস্থার সংকট।
জুলাই অভুত্থ্যানের পর বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হয় পুলিশ। একপ্রকার নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন বাহিনীটির সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের মনবল চাঙা করতে পাশে দাঁড়ায় সেনাবাহিনী। পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার থেকে শুরু করে, থানা স্থাপনার নিরাপত্তা, টহল ও তল্লাশি কার্যক্রমেও পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন সেনা সদস্যরা। দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে চালানো হচ্ছে যৌথ অভিযানও। আর এর মধ্য দিয়ে সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী দুটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ঘুচে গড়ে উঠছে একটি শক্তিশালী সহযোগিতা ব্যবস্থা, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি অংশ মনে করেন, শেখ হাসিনা সরকার পুলিশ বাহিনীর ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে দিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়েছিলেন। গুম-খুন ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে পুলিশকে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিয়েছিলেন। এসব অপরাধে জড়িয়ে পুলিশ আস্থার সংকটে পড়ে। নৈতিকভাবে দুর্বল হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর আনুগত্য বিবেচনায় কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে বিশেষ ক্ষমতা ও সুবিধা দেয় দলটি। তাদের হাত ধরেই নানা অনিয়ম-কারচুপির মাধ্যমে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। ওই বছরের শেষ দিকে পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পান একেএম শহীদুল হক। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত।
তারা আরো জানান, আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর পুলিশের উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তারা তুলে ধরেন নানা আবদার। পুলিশের জন্য ভারী অস্ত্র কেনার দাবিও জানানো হয়। সেনাবাহিনীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের সে দাবি মেনে নিয়ে পুলিশ সদস্যদের হাতে সরকার তুলে দেয় যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের ভারী অস্ত্র ও বিস্ফোরক।
এ বিষয়ে ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (এফএসডিএস) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা বিগত সময়ে দেখেছি পুলিশের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। সেনাবাহিনী যে ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে তাদেরও সেই অস্ত্র দিতে হবে। সেনাবাহিনী তো এ অস্ত্র বাইরের শত্রুকে ঘায়েলে ব্যবহার করে। আর পুলিশ এ প্রাণঘাতী অস্ত্র দেশের জনগণের ওপর ব্যবহার শুরু করল। এটা ছিল একটা বড় ধরনের ভুল।’