যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান দলীয় কাঠামোকে “একদলীয় ব্যবস্থা” আখ্যা দিয়ে টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম—‘আমেরিকা পার্টি’—ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্প সরকারের সদ্য পাস হওয়া কর ও ব্যয় বিলের বিরোধিতা থেকেই জন্ম নিল এই দল।
দলের পটভূমি ও লক্ষ্য
মাস্ক জানিয়েছেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—দু’দলই অপচয় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। নতুন দল হবে ‘ব্যয়সচেতন ও উদ্ভাবনমুখী’। ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ওই বিল সমর্থনকারী কংগ্রেস সদস্যদের পরাজিত করাই তাদের প্রথম টার্গেট।
প্রাক্তন মিত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী
একসময় ট্রাম্পের ‘গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বিভাগ’ পরিচালনা করতেন মাস্ক। ইভি ট্যাক্স-ক্রেডিট বাতিলের প্রস্তাব এলে তিনি পদত্যাগ করেন ও বিলটিকে “অর্থনৈতিক নাশকতা” আখ্যা দেন। সেই দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রাজনৈতিক লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।
রাজনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছেন মাস্ক
বিলটি পাস হলে “পরের দিনই দল গঠন”—সপ্তাহজুড়ে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মাস্ক। বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর তিনি বিপুল অর্থ খরচ করে সমর্থক আইনপ্রণেতাদের হটানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্বের ব্যক্তিগত রূপ
হোয়াইট হাউস থেকে সরকারী চুক্তি কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। জবাবে মাস্ক প্রাচীন গ্রিক সেনাপতি এপামিনাণ্ডাসকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, “একদলীয় ব্যূহ ভেঙে দেব।”
রিপাবলিকানদের দুশ্চিন্তা
দলের ভাঙনের আশঙ্কায় রিপাবলিকান নেতারা শঙ্কিত—কনজারভেটিভ ভোট ভাগ হলে ২০২৬-এর ফলাফল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মার্কেট প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক নাটকীয়তার প্রভাব পড়েছে বাজারেও। ডিসেম্বরে টেসলা শেয়ার ছিল ৪৮৮ ডলার; গত সপ্তাহে নেমে এসেছে ৩১৫.৩৫-এ।
তৃতীয় দলে সাফল্যের সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় দল গড়ে ওঠা কঠিন—আইনি বাধা ও সংগঠন গড়ার চাপ বিশাল। তবে মাস্কের বিপুল সম্পদ ও অনলাইন প্রভাব তাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখে। এখনও ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে দলটি নিবন্ধিত হয়নি—আইনি বৈধতা মিলতেই প্রথম পরীক্ষা।
জনসমর্থন ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা
মাস্কের নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ চালানো জরিপে দুই-তৃতীয়াংশ ব্যবহারকারী নতুন দলের পক্ষে মত দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি নির্দিষ্ট আসনে কেন্দ্রীভূত প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই-দলীয় রাজনীতির জগতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দলটি আদৌ নিবন্ধন হতে পারে কি না, আর পরবর্তী নির্বাচনেই বা কী প্রভাব ফেলে—দৃষ্টি সেদিকেই। তবে এতেই স্পষ্ট, ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্ব শুধু সামাজিক মাধ্যমে নয়, এবার সরাসরি ব্যালটেও প্রভাব ফেলতে চলেছে।