সারাংশ
- • যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি ও ইউরোপীয় পরিবেশ আইনও রফতানির খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে দাম বাড়ছে,
- • বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দামের ঊর্ধ্বগতি দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কঠিন চাপে ফেলছে,
- • স্থানীয়ভাবে তেলজাতীয় ফসল চাষে ভর্তুকি, বিকল্প উৎস খোঁজা এবং দেশীয় উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানো জরুরি,
বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের মূল্য গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। বিশেষ করে পাম অয়েলের ওপর ব্যাপক নির্ভরশীলতা দেশের দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে চোখে পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে চলমান অস্থিরতা এবং আসন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের ফলে এই সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত পাম অয়েলের ৮৫ শতাংশই আসে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। সম্প্রতি এই দুই দেশেই বায়োফুয়েল উৎপাদনে পাম অয়েলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম দ্রুত বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্র পাম অয়েলের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে, এবং আগামী ডিসেম্বর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যান্টি-ডিফরেস্টেশন আইন চালু হচ্ছে। এই আইনের আওতায় পাম অয়েলের উৎপাদন ও রফতানিতে কঠোর পরিবেশগত নিয়মাবলী প্রয়োগ করা হবে, যার ফলে রফতানি খরচ বৃদ্ধি পাবে এবং ভোক্তা পর্যায়ে দাম আরো বাড়বে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ভোজ্যতেল চাহিদার একটি বড় অংশই আমদানিভিত্তিক। তুলনামূলকভাবে সস্তা পাম অয়েল নিম্নআয়ের মানুষের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্ক–বিধিনিষেধ এবং পরিবেশগত নিয়মাবলীর কারণে পাম অয়েলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব বিকল্প তেল—যেমন সয়াবিন ও সরিষার তেল—উপরেও পড়বে। এর ফলে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ভোজ্যতেলের ব্যয়গত চাপ আরও বেড়ে যাবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ভোজ্যতেল বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের উচিত বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিকল্প উৎসের সন্ধান এবং দেশীয় তেল উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের সরিষা, সয়াবিন ও অন্যান্য তেলজাতীয় ফসল চাষে উৎসাহিত করতে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে ভবিষ্যতের সংকট এড়াতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ, বিকল্প ভোজ্যতেলের উৎস নিশ্চিতকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ আবশ্যক।