১১:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
আরব লিগের কড়া বার্তা, সোমালিল্যান্ড স্বীকৃতি মানে আন্তর্জাতিক আইন ভাঙা জাপানের পারমাণবিক বিদ্যুৎ নীতিতে বড় মোড়, ফুকুশিমার পর ফের চালু হচ্ছে বৃহত্তম রিঅ্যাক্টর পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ইউরোপের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ের ঘোষণা ইসরায়েলের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে আরব ইসলামি আফ্রিকান ঐক্য, সোমালিল্যান্ড প্রশ্নে তীব্র নিন্দা সোনার দামে নতুন ইতিহাস, টানা অষ্টম দফা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ চূড়া কাঁপছে গোমতী সেতু, যান চলাচল সাময়িক বন্ধ কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে হামলা, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-সংঘর্ষ খালেদা জিয়ার তিন আসনে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত, শেষ মুহূর্তে বড় রদবদলে বিএনপি নির্বাচনের আগে সীমান্তপথে অস্ত্র পাচারের চেষ্টা বেড়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা খুলনা–৫ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন জমা দিলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার

২৫ জেলায় আংশিক বন্যা – ক্ষয়ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকায়

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভোগে। টানা বৃষ্টি, নদীর পানি বৃদ্ধি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে অন্তত ২৫টির বেশি জেলা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে পানির নিচে চলে গেছে। প্রাথমিক সরকারি ও বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বন্যা ও জলাবদ্ধতায় সরাসরি আর্থিক ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি।

ডুবেছে দেশের কোন কোন জেলা

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো – কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা জেলার কিছু অংশ, খুলনার নীচু এলাকা ও বরিশালের কয়েকটি উপকূলীয় উপজেলা।

উজানের ঢল ও নদীর পানি বৃদ্ধি

ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এলাকা থেকে হিমালয় বেষ্টিত নদীগুলোর পানি ঢল নামে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে। এই ঢল বর্ষার ভারি বৃষ্টির সাথে মিলে বন্যাকে আরও বিধ্বংসী করে তুলেছে। ফলে তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা এবং তাদের শাখা নদীগুলোতে পানি বেড়েছে হুহু করে।

শহর ও গ্রামে জলাবদ্ধতা

শুধু নদীর প্লাবন নয়, টানা বৃষ্টিতে শহরাঞ্চলেও ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঢাকার নিম্নাঞ্চল, চট্টগ্রাম নগরের অনেক এলাকা, সিলেট শহর, খুলনা, বরিশাল ও কুমিল্লা শহরের নিম্নভূমি একেবারে পানির নিচে। শহুরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় জলাবদ্ধতা দিনের পর দিন স্থায়ী হয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

ক্ষয়ক্ষতি: প্রাথমিক হিসাব

সরকারি প্রাথমিক অনুমান বলছে, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা। এতে ফসলের ক্ষতি, মৎস্য ঘের ডুবে যাওয়া এবং পশুখাদ্য সংকট রয়েছে।

হাতিয়ায় নিম্নচাপে ১২৫টি ঘর ও ৭০টি দোকানসহ ব্যাপক ক্ষতি । খবরের কাগজ

পরিকাঠামো খাতে (রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-হাসপাতাল ভবন) ক্ষতি অন্তত ১,৫০০ কোটি টাকার বেশি।
বাড়িঘর ভেঙে বা ডুবে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ।
স্থানীয় দোকান, গুদাম, ছোট শিল্প-কারখানার ক্ষতি ধরা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।
মোট আর্থিক ক্ষতির অঙ্ক প্রাথমিকভাবে ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ কোটি টাকার মধ্যে ধরা হচ্ছে।

মানুষের দুর্ভোগ

পানি ঢুকে গেছে লাখো বাড়িতে। মানুষেরা উঁচু রাস্তায়, স্কুলে, সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ, টয়লেটের অভাবে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের স্কুল বন্ধ, বাজার-হাট অচল।

উত্তরবঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা শায়খ আহমাদুল্লাহর

সরকারি উদ্যোগ

সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চাল, শুকনো খাবার, নগদ টাকা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজে নিয়োজিত। তবে দুর্গম গ্রামে এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি ও করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর এভাবে বন্যা ও জলাবদ্ধতা হলে কৃষি উৎপাদন ও গ্রামীণ অর্থনীতি ধ্বংস হবে। নদী ড্রেজিং, বাঁধ মেরামত, নগর ড্রেনেজ উন্নয়ন, পূর্বাভাস ব্যবস্থা শক্ত করা – এসব পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়া জরুরি। না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে এই দুর্যোগ আরও ঘনঘন ও ভয়াবহ হবে।

বাংলাদেশ বন্যার দেশ – এ সত্য মেনে নিয়েই উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। শুধু ত্রাণ নয়, টেকসই প্রতিরোধ ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ না দিলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষতি এবং লাখো মানুষের দুর্ভোগ স্থায়ী হয়ে যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

আরব লিগের কড়া বার্তা, সোমালিল্যান্ড স্বীকৃতি মানে আন্তর্জাতিক আইন ভাঙা

২৫ জেলায় আংশিক বন্যা – ক্ষয়ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকায়

০৫:৫৫:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভোগে। টানা বৃষ্টি, নদীর পানি বৃদ্ধি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে অন্তত ২৫টির বেশি জেলা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে পানির নিচে চলে গেছে। প্রাথমিক সরকারি ও বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বন্যা ও জলাবদ্ধতায় সরাসরি আর্থিক ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি।

ডুবেছে দেশের কোন কোন জেলা

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো – কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা জেলার কিছু অংশ, খুলনার নীচু এলাকা ও বরিশালের কয়েকটি উপকূলীয় উপজেলা।

উজানের ঢল ও নদীর পানি বৃদ্ধি

ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এলাকা থেকে হিমালয় বেষ্টিত নদীগুলোর পানি ঢল নামে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে। এই ঢল বর্ষার ভারি বৃষ্টির সাথে মিলে বন্যাকে আরও বিধ্বংসী করে তুলেছে। ফলে তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা এবং তাদের শাখা নদীগুলোতে পানি বেড়েছে হুহু করে।

শহর ও গ্রামে জলাবদ্ধতা

শুধু নদীর প্লাবন নয়, টানা বৃষ্টিতে শহরাঞ্চলেও ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঢাকার নিম্নাঞ্চল, চট্টগ্রাম নগরের অনেক এলাকা, সিলেট শহর, খুলনা, বরিশাল ও কুমিল্লা শহরের নিম্নভূমি একেবারে পানির নিচে। শহুরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় জলাবদ্ধতা দিনের পর দিন স্থায়ী হয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

ক্ষয়ক্ষতি: প্রাথমিক হিসাব

সরকারি প্রাথমিক অনুমান বলছে, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা। এতে ফসলের ক্ষতি, মৎস্য ঘের ডুবে যাওয়া এবং পশুখাদ্য সংকট রয়েছে।

হাতিয়ায় নিম্নচাপে ১২৫টি ঘর ও ৭০টি দোকানসহ ব্যাপক ক্ষতি । খবরের কাগজ

পরিকাঠামো খাতে (রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-হাসপাতাল ভবন) ক্ষতি অন্তত ১,৫০০ কোটি টাকার বেশি।
বাড়িঘর ভেঙে বা ডুবে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ।
স্থানীয় দোকান, গুদাম, ছোট শিল্প-কারখানার ক্ষতি ধরা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।
মোট আর্থিক ক্ষতির অঙ্ক প্রাথমিকভাবে ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ কোটি টাকার মধ্যে ধরা হচ্ছে।

মানুষের দুর্ভোগ

পানি ঢুকে গেছে লাখো বাড়িতে। মানুষেরা উঁচু রাস্তায়, স্কুলে, সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ, টয়লেটের অভাবে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের স্কুল বন্ধ, বাজার-হাট অচল।

উত্তরবঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা শায়খ আহমাদুল্লাহর

সরকারি উদ্যোগ

সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চাল, শুকনো খাবার, নগদ টাকা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজে নিয়োজিত। তবে দুর্গম গ্রামে এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি ও করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর এভাবে বন্যা ও জলাবদ্ধতা হলে কৃষি উৎপাদন ও গ্রামীণ অর্থনীতি ধ্বংস হবে। নদী ড্রেজিং, বাঁধ মেরামত, নগর ড্রেনেজ উন্নয়ন, পূর্বাভাস ব্যবস্থা শক্ত করা – এসব পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়া জরুরি। না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে এই দুর্যোগ আরও ঘনঘন ও ভয়াবহ হবে।

বাংলাদেশ বন্যার দেশ – এ সত্য মেনে নিয়েই উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। শুধু ত্রাণ নয়, টেকসই প্রতিরোধ ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ না দিলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষতি এবং লাখো মানুষের দুর্ভোগ স্থায়ী হয়ে যাবে।