দেশে যে এখন হত্যার নানান রূপ মানুষ প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছে তা নিয়ে নিশ্চিতই এখন আর কারো কোন প্রশ্ন নেই। ঢাকার মিডফোর্ড এলাকায় হত্যার যে রূপ দেখা গেছে, এমনটি প্রথম শতকের ইউরোপীয় যুদ্ধগুলো নিয়ে যে ফিল্ম আছে তাতেও নেই। পুলিশ বলেছে এটা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। পুলিশের কথাই সত্য ধরা উচিত। কারণ, বাদবাকীদের নানান উদ্দেশ্য আছে, আর পুলিশ এখনও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিণত উপন্যাসের নায়িকা ললিতার ভাষায় “আমরা কয়টা হতভাগা প্রাণী’র” মতো বাংলাদেশে এ মুহূর্তে যে কয়টা হতভাগা প্রাণী আছে তাদের মধ্যে একটি। কারণ, যাদের মারা যাওয়ার পরেও বিচার পাওয়ার কোন অধিকার নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মতো তারাও হতভাগা, তাই এই অসহায় অবস্থায় তারা সত্য বলবে এটাই ধরে নিতে হবে।
তারপরে শুধু ওই একটা হত্যা নয়, বাংলাদেশে নানান ধরনের হত্যা এখন স্বাভাবিক। কারণ, কেউ যদি সত্য প্রকাশ করে চাকরি হারায় তাও এক ধরনের হত্যা।
কবি নির্মলেন্দু গুণ, এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যাকে ষাটের দশকেও ফেরারি জীবনযাপন করতে হয়েছে, তিনি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হিন্দুদের একটি দেবী মূর্তিকে দুজন তরুণ বারবার পা দিয়ে লাথি মারছে। তিনি লিখেছেন, আমরা কি এই স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম? এদেশের প্রতিটি প্রগতিশীল সংগ্রামের সঙ্গে এই মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি নির্মলেন্দু গুণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর হৃদয়ে এভাবে আঘাত করার অর্থ তাকে হত্যা করা। আর যে ধর্মের দেবতাকে নিয়ে এমনটি করা হচ্ছে,সেই ধর্মে বিশ্বাসীদেরও কি নীরবে হত্যা করা হচ্ছে না?
ঠিক তেমনি যে নারী তার ইচ্ছে মতো চলাফেরা করতে পারছে না, তাকেও কিন্তু প্রকৃত অর্থে হত্যা করা হচ্ছে। এমনিভাবে যিনি সমাজে নিজ প্রতিভাবলে প্রতিষ্ঠিত তাঁকে যখন অপমান করা হয়, তখনই মূলত তাকে হত্যা করার কাজটি শেষ হয়ে যায়।
অনেক সময় হত্যা, মৃত্যু, রক্ত পেরিয়ে একটি নতুন সূর্য দেখা যায়। তখন সে রক্তসাগর ইতিহাস হয়ে যায়। কিন্তু যখন পশ্চাৎপদতা, অন্ধত্ব ও মূঢ়তা আর প্রতিহিংসা সমাজে ও রাষ্ট্রে হত্যার মূল কারণ হয়, তখন কোন নতুন সূর্যও ওঠে না। অন্ধকারের দিকে তার গতি।