বাংলাদেশে মিঠা ও লবণাক্ত পানির মিশ্রণে প্রায় ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়; তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় মূলত শিলা কাঁকড়া বা ‘মাড ক্র্যাব’। সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় জেলা—বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও কক্সবাজার—কাঁকড়া চাষে দ্রুত এগোচ্ছে।
চাষের দুই প্রধান পদ্ধতি
- মোটাতাজাকরণ (Fattening): নদী থেকে সংগ্রহ করা কিশোর কাঁকড়াকে ঘেরে বড় করে বাজারজাত করা।
- সফট-শেল ক্র্যাব চাষ: খোলস ফাটার সময়সীমা ধরে চাষ করে সরাসরি রপ্তানি করা।
২. দেশীয় উৎপাদন: কত কাঁকড়া উৎপাদিত হচ্ছে?
সাতক্ষীরায় ২০১৯ সালে ৩১০.৯ হেক্টর ঘেরে প্রায় ২,১৯০ মেট্রিক টন চাষকৃত ও ১,১০৯ মেট্রিক টন প্রাকৃতিক কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়; কুচিয়া উৎপাদন হয় ৩৫০ টন। সারা দেশ মিলিয়ে প্রতিবছর আনুমানিক ৪–৫ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি হয়। অন্য জেলার উৎপাদন ধরা হলে সম্ভাব্য মোট উৎপাদন ৭–৮ হাজার টনের কাছাকাছি।
বিদেশি মুদ্রা: রপ্তানির রাজস্ব
২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানির সর্বোচ্চ আয় ছিল প্রায় ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাম্প্রতিক হিসাব (২০২১-২২) অনুযায়ী আয় দাঁড়ায় ৩২.৪১ মিলিয়ন ডলার। শীতল ও লাইভ সফট-শেল কাঁকড়াই আয়ের প্রধান উৎস। গত কয়েক বছরে রপ্তানি আয় ৩০–৪০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
বাজার ও বিপণন: গন্তব্য দেশ
চীন বাংলাদেশের কাঁকড়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা; মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই চীনে যায়। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হং কং, মালয়েশিয়া এবং ইউরোপ-যুক্ত দেশগুলোতেও কাঁকড়া রপ্তানি হয়। ২০২৩ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১,৯৬৯টি চালানে রপ্তানি খাতের অগ্রগতি নির্দেশ করে।
সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
সুযোগ
- সফট-শেল কাঁকড়ার বৈশ্বিক চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
- হ্যাচারি, গবেষণা ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাণিজ্যিক পদ্ধতি আরও উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ
- পোনা সংকট, রোগ-ব্যাধি এবং কম বাঁচার হার শিলা কাঁকড়া চাষকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
- অবকাঠামো-ঘাটতি, মূল্য-অস্থিরতা ও বিশেষ করে কোভিড-১৯-পরবর্তী বাজার-স্থবিরতা রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আরো বাড়ানো দরকার
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৫,০০০ টনের কাছাকাছি কাঁকড়া উৎপাদিত ও নিয়মিতভাবে রপ্তানি হয়, যা ৩২–৪২ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আনছে। পোনা উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, শীতল শৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ মূল্য-স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা গেলে কাঁকড়া চাষ আরও বিস্তৃত হয়ে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। যথাযথ প্রণোদনা, হ্যাচারি স্থাপন ও নীতিগত সমন্বয় করলে কৃষক-উদ্যোক্তা-রপ্তানিকারক—সবাই লাভবান হবে, আর কাঁকড়া চাষ বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হয়ে উঠবে।