শাংরি-লা গ্রুপ চীনের মূল ভূখণ্ডে চালু করেছে তাদের নতুন সুপার-লাক্সারি হোটেল ব্র্যান্ড Shangri-La Signatures, যেখানে ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও প্রযুক্তিনির্ভর আরাম একত্র হয়েছে। এই ব্র্যান্ডের লক্ষ্য মূলত ধনী চীনা পর্যটক, বিশেষ করে মিলেনিয়াল ও জেনারেশন জেড—যাদের কাছে আজকের বিলাসবহুল অভিজ্ঞতা মানেই আর শুধুই চাকচিক্য নয়, বরং ব্যক্তিগত সংযোগ, সাংস্কৃতিক গভীরতা এবং মানসিক প্রশান্তি।
ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় উদ্বোধন হলো ফ্ল্যাগশিপ হোটেল
এই নতুন ব্র্যান্ডের প্রথম হোটেল The Silk Lakehouse চালু হয়েছে মে মাসে হাংঝৌ শহরের ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ওয়েস্ট লেকের তীরে। বেলজিয়ামের গার্ট ভোরজানস এবং স্পেনের লাজারো রোসা-ভিওলান এই হোটেলের নকশা করেছেন। হোটেলটি দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক শিলিং হোটেলের জায়গায়—যেখানে ১৯৭০-এর দশকে চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝোউ এনলাই এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সাক্ষাৎ হয়েছিল।
হোটেলের অন্যতম আকর্ষণ চীনা শিল্পী ঝোউ জিনইউনের মাটির ভাস্কর্য ‘Autumn in Yandang Mountain’, যেটি ১৯৭১ সালে নিক্সনের সফরের জন্য নির্মিত হয়েছিল এবং এখন তা সংরক্ষিত অবস্থায় অতিথিদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
আজকের বিলাসিতা মানে অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি
শুধু দামি আসবাব বা ভোগবিলাস নয়, আজকের ধনী পর্যটকরা খুঁজছেন গল্প, সংবেদনশীলতা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত কোনো অভিজ্ঞতা। Silk Lakehouse-এ অতিথিরা উপভোগ করতে পারেন রেশমি পাখার কারুকাজ, ঐতিহ্যবাহী গন্ধ-মাটি তৈরি কিংবা শিলিং স্ট্যাম্প খোদাইয়ের মতো কর্মকাণ্ড। প্রতিটি রুমে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ম্যাট্রেস, যা অতিথির ঘুমের ধরণ বুঝে বিছানার দৃঢ়তা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
হোটেলের রুম ভাড়া ৪,০০০ থেকে ৮,০০০ ইউয়ান (প্রায় ৫৫৭ থেকে ১,১১৫ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত, যা তাদের জন্য নির্ধারিত যারা শুধু বিলাসিতা নয়, চায় স্মরণীয় কিছু।
সংস্কৃতির গুরুত্ব কেন বাড়ছে
Silk Lakehouse-এর জেনারেল ম্যানেজার উলরিখ জাবলংকা বলেন, “আজকের বিলাসিতা মানে হলো গল্প, আবেগ ও আত্মিক সমৃদ্ধি।” কনসালটেন্সি সংস্থা ম্যাককিন্সির এক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশের বেশি ধনী চীনা পর্যটক বিলাসিতার চেয়ে সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত বিকাশকেই বেশি গুরুত্ব দেন।
রেনুব রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের হোটেল বাজার ২০২৮ সালের মধ্যে বার্ষিক প্রায় ৯ শতাংশ হারে বেড়ে ১৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। পর্যটন বৃদ্ধি, মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রসার এবং সরকারের নানা উদ্যোগ এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখবে।
এই প্রেক্ষাপটে শাংরি-লার নতুন উদ্যোগ কেবল সময়োপযোগী নয়—এটি ভবিষ্যতের আতিথেয়তার দিকদর্শনও।