গত জুলাই থেকে রক্ত যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। প্রতিদিন কোনো না কোনো মৃত্যু আর রক্ত দেখতে দেখতে দেশের অধিকাংশ মানুষ মানসিকভাবে অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমনকি যারা সরকারে আছেন, তারাও মাঝে‑মাঝে এমন কথা বলেন, যা তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। তবে এতে তাঁদের দোষ নেই, কেননা অনভিজ্ঞ, বয়োজ্যেষ্ঠ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের পক্ষে এ চাপ নেওয়া সম্ভব নয়।
গত চার‑পাঁচ দিন ধরে গোপালগঞ্জ এলাকার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু দেখতে হয়েছে সবার। আজ সকালে গোপালগঞ্জ থেকে ১৪৪ ধারা উঠে গেলে মানুষ যখন কেবল একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে গিয়েছিল, বিধি যেন সেই স্বস্তিটুকু দেশের মানুষকে দিল না। হঠাৎই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বেলা ১ টা ৬ মিনিটে বিমান বাহিনীর এফটি‑৭ যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণকালে কুর্মিটোলা থেকে উড্ডয়নের পরপরই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এতে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১৯ জন নিহত ও ১৬৪ জন আহত হয়েছেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদকের ধারণা, নিহতদের অধিকাংশই শিশু।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পাইলট নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। ফলে আবারও দেশবাসীর সামনে এসেছে শিশুদের মরদেহ।
দুর্ঘটনাকে কেউ কখনও এড়াতে পারে না; এতে কারও দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু গত এক বছরে ঘটনা ও দুর্ঘটনা মিলিয়ে এত মৃত্যু, এত রক্ত—এ আর সত্যিই ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এখন তাই শুধু পরম করুণাময়ের কাছে একটাই কামনা:
নিহত পাইলট এবং এদিনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো শিশুদের পরিবারকে তিনি যেন শোক সহ্য করার শক্তি দেন। আর যাঁরা হাসপাতালে বেডে আছেন, তাঁদের যেন আর কেউ না হারান; তাঁরা যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।
পাইলট ও সব নিহত শিশুর পরিবারের প্রতি, এবং গত কয়েক দিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় গোপালগঞ্জে যেসব পরিবার তাঁদের সন্তান হারিয়েছেন, তাঁরাও যেন শোক কাটিয়ে ওঠতে পারেন—এই প্রার্থনা রইল।
সব নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি ‘সারাক্ষণ’-এর পক্ষ থেকে রইল নত‑মস্তকের সমবেদনা।