ধর্মগুরু এসেছেন শুনে কাশ্মীররাজ তক্ষশিলায় লোক পাঠিয়ে তাঁকে কাশ্মীরে নিমন্ত্রণ করলেন, কিন্তু সঙ্গে ভারবাহী হাতীগুলি থাকায় সে নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে হল।
উত্তরের (কাপিশী অঞ্চলের) আন্দাজ একশত জন ভিক্ষু জলন্ধর থেকে দেশে ফিরছিলেন। হিউ এনচাঙের সঙ্গে রক্ষী সৈন্য থাকায় তাঁরাও তাঁর সঙ্গী হলেন আর হিউএনচাঙের সঙ্গের শাস্ত্রগ্রন্থ বুদ্ধমূতি ইত্যাদি তদারক করবার ভার নিলেন।
জলন্ধরে এক মাস থেকে আবার যাত্রা করে হিউএনচাঙ সিংহপুরায় এলেন। সিংহপুরা ছিল সম্ভবতঃ বর্তমান ‘থিউরা’র লবণের খনির অঞ্চলের ‘লবণ পর্বতশ্রেণী’ (Salt Range)। এ পাহাড়গুলি ছোট কিন্তু সরু সরু গিরিসংকটের ভিতর দিয়ে এর পথ, আর সে পথে যথেষ্ট দস্যুভয় ছিল।
হিউএনচাঙ নিয়ম করলেন যে, তাঁর দলের একজন ভিক্ষু আগে আগে চলবেন আর কোনো দস্যুকে দেখলে তাকে বলবেন, ‘আমরা বহুদূর থেকে ধর্মানুসন্ধানে এসেছি। আমাদের সঙ্গে শুধু শাস্ত্রগ্রন্থ, প্রতিমা আর ধর্মস্থানের স্মৃতিচিহ্ন ছাড়া আর কিছুই নেই। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা আমাদের দানপতি (পৃষ্ঠপোষক) হোন আর মন থেকে বিরুদ্ধভাব দূর করে আমাদের রক্ষক হোন।’ এইভাবে তাঁরা দস্যুদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেলেন।
কুড়ি দিন পরে তাঁরা তক্ষশিলায় পৌঁছলেন। সিংহপুরা, উরশা ও তক্ষশিলা এ সময়ে কাশ্মীর রাজের অধীন ছিল। ধর্মগুরু এসেছেন শুনে কাশ্মীররাজ তক্ষশিলায় লোক পাঠিয়ে তাঁকে কাশ্মীরে নিমন্ত্রণ করলেন, কিন্তু সঙ্গে ভারবাহী হাতীগুলি থাকায় সে নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে হল। এর সাত দিন পরে হিউএনচাঙ সিন্ধুতীরে পৌছলেন।
সিন্ধুনদী পার হওয়ার সময়ে এক দুর্ঘটনা ঘটল। নদী এখানে এক মাইলেরও বেশি চওড়া ছিল। হিউএনচাঙ নিজে হাতীতে চড়ে নদী পার হলেন। কিন্তু তাঁর সমস্ত মালপত্র ও সঙ্গীরা একটি লোকের জিম্মায় একটা বড় নৌকায় পার হচ্ছিল, এমন সময় ভীষণ ঝড় উঠল আর ঢেউ বড় হয়ে নৌকা প্রায় ডুবুডুবু হল। যে লোকের হাতে গ্রন্থগুলি ছিল ভয়েতে সে জলের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল। অন্যলোক তাকে ধরে তুলল কিন্তু গ্রন্থগুলির মধ্যে পঞ্চাশখানা সূত্রের অনুলিপি আর নানারকম ফুলের বীচি আর পাওয়া গেল না। এ ছাড়। আর-সব জিনিসই উদ্ধার করা গেল।
(চলবে)