সৌদি তরুণ রাজপুত্র আল ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল আল সৌদ, যিনি ‘ঘুমন্ত প্রিন্স’ নামে পরিচিত ছিলেন, প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ কোমা জীবনের পর মৃত্যুবরণ করেছেন। কিশোর বয়সে এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি অবচেতন অবস্থায় ছিলেন। এই দীর্ঘ অধ্যায় সৌদি সমাজে ধৈর্য, পারিবারিক আনুগত্য ও আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
রাজবংশ ও পারিবারিক পরিচিতি
১৯৯০ সালের এপ্রিল মাসে জন্ম নেওয়া আল ওয়ালিদ ছিলেন প্রিন্স খালেদ বিন তালাল আল সৌদের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজপুত্র আল ওয়ালিদ বিন তালালের ভাগ্নে, ফলে রাজপরিবারের সুপরিচিত এক শাখার সদস্য ছিলেন।
দুর্ঘটনা ও শারীরিক অবস্থা
মাত্র পনেরো বছর বয়সে লন্ডনে সামরিক ক্যাডেট হিসেবে পড়াশোনা করার সময় ২০০৫ সালের এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর মস্তিষ্ক আঘাত ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন। দ্রুত চিকিৎসা ও যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেনের বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততা সত্ত্বেও পূর্ণ চেতনা আর ফেরেনি। পরবর্তী সময়ে তিনি দীর্ঘস্থায়ী গভীর কোমায় অত্যন্ত সীমিত প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থায় জীবনধারণ করেন।
পিতার অটল অবস্থান
প্রিন্স খালেদ জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা প্রত্যাহারের বিভিন্ন পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল—আল্লাহ ইচ্ছা করলে সুস্থতা আসবে। মাঝে মাঝে অনিচ্ছাকৃত ক্ষুদ্র নড়াচড়া পরিবারকে ক্ষীণ আশার স্ফুলিঙ্গ দিত। পরিবারের শেয়ার করা কিছু ভিডিওতে কুরআন তিলাওয়াতের সময় সামান্য সাড়া জনমনে আবেগ ও সহমর্মিতা সৃষ্টি করত।
জনমত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
নির্দিষ্ট বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্রে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক শোকবার্তা প্রকাশ পায়। সামাজিক মাধ্যমে ‘ঘুমন্ত প্রিন্স’ বিষয়ক হ্যাশট্যাগ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বহু মানুষ ধৈর্য ও পিতৃস্নেহের এই প্রতীকী গল্প স্মরণ করেন। বছরের পর বছর পিতার সন্তানের শয্যার পাশে অবিচল উপস্থিত থাকার চিত্র সাধারণ মানুষের হৃদয় গভীরভাবে স্পর্শ করে।
আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার
দীর্ঘ সময়ে তাঁর হাসপাতালের কক্ষ এক ধরনের আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে পরিণত হয় যেখানে আগতরা প্রার্থনা ও দোয়া করতেন। তাঁর জীবন ও সংগ্রাম চিকিৎসাবিজ্ঞানের সীমা, পারিবারিক নিবেদন ও মানবিক দৃঢ়তার এক দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই কাহিনি সমাজকে ধৈর্য, বিশ্বাস ও পারিবারিক বন্ধনের অর্থ নতুনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
পিতার ভালোবাসার প্রতীক
আল ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালালের মৃত্যুর মাধ্যমে সৌদি আরবে দুই দশক ধরে চলমান এক আবেগময় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। তাঁর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি জনপরিসরে রূপ নিয়েছিল আশা, প্রার্থনা ও পিতার ভালোবাসার প্রতীকে—যা স্মরণ করিয়ে দেয় আধুনিক চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মানবিক অনুরাগ ও বিশ্বাস দীর্ঘ প্রতীক্ষার পথকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারে।