ঘনবসতিপূর্ণ পাড়ায় রাতের আতঙ্ক
দক্ষিণ–পশ্চিম জাপানের উপকূলীয় শহর ওওইতায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন, আর নষ্ট হয়েছে ১৭০টিরও বেশি ঘরবাড়ি। মঙ্গলবার রাতের দিকে ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। স্থানীয় মিডিয়ার প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কাঠের তৈরি একের পর এক বাড়ি আগুনে জ্বলছে, আর বাসিন্দারা ছোট গলি দিয়ে দ্রুত এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে শিশু ও বয়স্ক স্বজনদের কাঁধে নিয়ে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে যান।
অগ্নিকাণ্ডের পরপরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল ১৭০ জনের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়। ভোরের দিকে জ্বলন্ত এলাকার ছবি প্রকাশ হলে দেখা যায়, সারি সারি পুড়ে যাওয়া ঘর, কালো হয়ে যাওয়া দেয়াল আর ধোঁয়ার স্তম্ভ। আকাশপথে সামরিক হেলিকপ্টার পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে, আর নিচে শতাধিক দমকলকর্মী একের পর এক গলি ঘুরে আগুনের গতিপথ আটকানোর চেষ্টা চালান। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে, তা এখনো তদন্তাধীন; প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, একটি আবাসিক ঘর থেকে আগুন শুরু হয়েছিল, যা দ্রুত আশপাশের কাঠের বাড়িতে চলে যায়।
পুরোনো নগর গঠনে নতুন প্রশ্ন
জাপানের মতো ভূমিকম্প ও টাইফুনপ্রবণ দেশে ঘনবসতিপূর্ণ পুরোনো এলাকাগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ রয়েছে। কাঠের বাড়ি, সরু গলি আর উপরে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার—সব মিলিয়ে একটি ছোট দুর্ঘটনাও বড় অগ্নিকাণ্ডে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপপ্রবাহ ও শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘতর হচ্ছে; ফলে বহু শহরেই এখন নতুন করে অগ্নি-ঝুঁকির হিসাব করতে হচ্ছে। ওওইতার ঘটনা তাই শুধু জাপানের জন্য নয়, সারা এশিয়ার উপকূলীয় ও নদীঘেঁষা শহরগুলোর জন্য সতর্কবার্তা।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক শহরে পুরোনো পাড়া, অনিয়মিত বসতি আর শিল্প এলাকা প্রায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। সেখানেও সরু গলি আর দাহ্য নির্মাণসামগ্রী অগ্নিকাণ্ডকে দ্রুত ভয়াবহ করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ আবাসন, উন্নত বিল্ডিং কোড আর বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি নিয়মিত মহড়া, সচেতনতা ও দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা। জাপানের অভিজ্ঞতা—কোবের ভূমিকম্প থেকে ফুকুশিমা দুর্ঘটনা এবং এখন ওওইতা—দেখিয়ে দিয়েছে, প্রযুক্তি ও অর্থের পাশাপাশি সমন্বিত প্রস্তুতিই দুর্যোগ–সহনশীলতা গড়ে তোলে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















